দাদন ব্যবসা থেকে জেলেদের বের করে আনতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন ব্যাংক তৈরি করার কথা জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেছেন, ব্যাংক তৈরি নিয়ে প্রক্রিয়ার কথা আমরা জেলা প্রশাসকদের বলেছি।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে অধিবেশন শেষে এ কথা বলেন তিনি। অধিবেশনে মৎস্য সম্পদ সম্পর্কিত ১৩টি ও প্রাণিসম্পদ সম্পর্কিত ১৫টি নির্দেশনা জেলা প্রশাসকদের দেন তিনি।
ফরিদা আখতার সাংবাদিকদের বলেন, বিদ্যুৎ বিল আমাদের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উভয়কেই একটি নির্দিষ্ট কমার্শিয়াল রেটে দিতে হয়। কিন্তু কৃষিজীবীরা এটি আরও কম রেটে পায়। কথাটি জেলা প্রশাসকরাও তুলেছেন। আমাদের পক্ষ থেকেও সরকারকে ডিও লেটার দেওয়া হয়েছে, সেটিও আমরা জানিয়েছি।
তিনি বলেন, কৃষিতে যে কীটনাশক ব্যবহার করা হয় সেটি মাছের ক্ষতি করে। গরু-ছাগল কীটনাশক মিশ্রিত ঘাস ও সবজি খেয়ে মারা যাচ্ছে। এসব বিষয়ও তাদের বলেছি।
মৎস্যসম্পদ সম্পর্কিত জেলা প্রশাসনের প্রতি নির্দেশনাগুলো হচ্ছে— মা ইলিশ ও জাটকা সংরক্ষণ অভিযান, অবৈধ জাল ও ফিশিং গিয়ারের ব্যবহার বন্ধে অভিযান জোরদার করা; কারেন্ট জালসহ অবৈধ জাল ও ফিশিং গিয়ার তৈরি, বিপণন ও বাজারজাতকরণ বন্ধ করায় অভিযান জোরদার করা; জলাশয় পুনঃখনন, অভয়াশ্রম ও বিল নার্সারি স্থাপনে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সক্রিয় অংশগ্রহণ; জাল যার জলা তার- এ নীতি অনুসরণ করে প্রকৃত মৎস্যজীবীরা যাতে সরকারি জলমহাল ইজারা পান সে ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ; হাওর অঞ্চলে প্রজননকালে ১ মাস মাছ ধরা নিষিদ্ধ করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
বিষয়টি নিবিড় মনিটরিং করা; সমাজভিত্তিক মৎস্য চাষে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা; বিগত জুলাই-আগস্টে তালিকাভুক্ত শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের সহায়তা ও জীবনমান উন্নয়নে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ দপ্তরকে সংযুক্ত করা; মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন ১৯৫০ এর যথাযথ প্রয়োগে সকলের সহযোগিতা করা; বিএফডিসি পরিচালিত কেন্দ্রগুলো মৎস্য অবতরণ নিশ্চিতকরণ; দেশীয় প্রজাতির মাছ, গবাদিপশু পালনে কৃষককে সহায়তা করা; পতিত জলাশয়গুলোকে মাছ চাষের আওতায় আনা; হাওরাঞ্চলের মৎস্যসম্পদ ও জীববৈচিত্র রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং মৎস্যজীবীদের তালিকা হালনাগাদ করণ। বিদ্যমান তালিকা থেকে অ-মৎস্যজীবীদের বাদ দিয়ে প্রকৃত জেলেদের অন্তর্ভুক্তকরণে সহায়তা প্রদান।
প্রাণিসম্পদ সম্পর্কিত জেলা প্রশাসনের প্রতি নির্দেশনাগুলো হচ্ছে— উপজেলা পরিষদের বাজেটে প্রাণিসম্পদ খাতের জন্য নির্দিষ্ট বরাদ্দ নিশ্চিত করা; সীমান্তবর্তী এলাকায় গবাদিপশু চোরাচালান বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ; জেলা ও পৌরসভায় সরকারিভাবে নির্মিত আধুনিক কসাইখানা ব্যবহার নিশ্চিত করা; প্রাণিসম্পদের রোগ প্রতিরোধ ও নিরাপদ প্রাণিজ আমিষ নিশ্চিতকরণে আইনের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন; কোরবানির হাট ব্যবস্থাপনায় ভেটেরিনারি টিমকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান ও হাটে প্রাণিকল্যাণ আইন মেনে চলা নিশ্চিত করা; গবাদিপশু পালনকারীদের কৃষি ঋণ সুবিধার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা; রমজানে সুলভ মূল্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক মাংস/ডিম/দুধ বিক্রয় কার্যক্রমে সহায়তা/সক্রিয় অংশগ্রহণ করা; উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মিত উইট মার্কেট সুষ্ঠুভাবে ব্যবহারের জন্য স্থানীয় সরকারসহ প্রশাসনিক সমন্বয় নিশ্চিত করা; প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রশাসনিক সহায়তা প্রদান করা; গবাদিপশুর হাট ব্যবস্থাপনায় চাঁদাবাজি ও ছিনতাই প্রতিরোধে কঠোর নজরদারি; কোল্ড চেইন ম্যানেজমেন্ট অনুসরণ করে প্রাণিজ পণ্য পরিবহন ও বিপণন নিশ্চিত করা; কৃষি জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মাটি ও জলজ উৎস থেকে খাদ্য গ্রহণকারী গবাদিপশু-পাখি বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বিধায় পরিবেশবান্ধব সমন্বিত ব্যবস্থাপনা গ্রহণে নজরদারি করা; উপকূলীয় অঞ্চলে নতুন জেগে উঠা চরের জমি মহিষের বাথান ও চারণ ভূমি হিসেবে ব্যবহারের জন্য লিজ/বরাদ্দ দেওয়া; রেকর্ডভুক্ত গোচারণভূমিসমূহ সংরক্ষণ করা। এগুলো শ্রেণি পরিবর্তনের মাধ্যমে যাতে কোনোভাবেই বন্দোবস্ত প্রদান করা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা এবং বন্যায়/দুর্যোগে গবাদিপশুর আশ্রয়ের জন্য পর্যাপ্ত গো মাঠ। উঁচু মাটির ঢিবি/টিলা স্থাপন করা।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ