বাংলা৭১নিউজ, মুসাফির নজরুল, মাগুরা প্রতিনিধি : মৌ চাষ করেও ভাগ্য বদল হতে পারে, স্বাচ্ছন্দে চলতে পারে সংসার-এ বিষয়টি এখন প্রমাণ করেছে মাগুরার তরুণেরা। চাকুরির পিছনে হন্নে হয়ে না ঘুরে একেবারেই অল্প পুঁজিতে তারা গড়ে তুলেছেন বড় বড় মৌ খামার। চলতি রবি মৌসুমে মধু সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। এ দিকে কৃষি অফিস বলছে, পরাগায়ণ ভাল হলে মধুর উৎপাদনও ভাল হয়, সেই সাথে সরিষা, লিচুসহ অন্যান্য রবি ফসলের ফলনও ভালো হয়।
মাগুরা সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জসিম উদ্দিন জানান, তার ব্লকে মোট ১২০ হেক্টর এলাকায় মধু চাষের জন্য বাক্স স্থাপন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে মৌ চাষীরা ২ থেকে আড়াই লাখ টাকার মধু আহরণ করতে পারবেন।
সদর উপজেলার বাঁশকোঠা গ্রামে মৌ চাষী রিপন জানান, ৭ বছর ধরে মৌমাছি চাষ ও এর থেকে মধু সংগ্রহ করে আসছেন। বর্তমানে তার ৯০টি বাক্স রয়েছে। আরো তৈরি করা হচ্ছে। সেসহ কয়েকজন মিলে ‘আবদুল্লাহ আল মামুন মৌ খামার’ নামে এ প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করেছেন। প্রথমে মাগুরা বিসিক তাদের এ প্রকল্পে ২৫ হাজার টাকা লোন দিয়েছিলো। তা দিয়েই তারা কাজ শুরু করেন। এখানে প্রতি সপ্তাহে আড়াই থেকে তিন মণ খাঁটি মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রতি মণ মধু ১২ হাজার টাকা দরে বিক্রি করছেন। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারদাররা এসে খামার থেকেই মধু নিয়ে যায়। এভাবে আনুমানিক ৬ মাস চলবে মধু সংগ্রহ। এরপর ৬ মাস বাক্সগুলো গাছের ছায়ায় রেখে মাছিকে চিনি মিশ্রিত পানি খাওয়ানো হবে। তখন কোন মধু উৎপাদন হবে না। তবুও এ মৌ চাষ করে তিনি ও তার পরিবার স্বাবলম্বী হয়েছেন। সেই সাথে তাদের দেখে অন্যরাও এ কাজে উৎসাহিত হচ্ছেন।
জানা গেছে, সদর উপজেলার তেঘরিয়া গ্রামের ‘ভাই ভাই মৌ খামারের মালিক ইসরাইল হোসেনের ছেলে সজিব হোসেন ও তার চাচাতো ভাই মিলন প্রায় ১৫ বছর ধরে সরিষা, লিচু, ধনিয়া, কালোজিরা, বরই, খেসারি ও পেঁয়াজের ফুল থেকে মৌ চাষের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করে আসছেন। বর্তমানে ১৫৫টি বক্সের মাধ্যমে তারা মধু সংগ্রহ করছেন। এ মৌসুমে প্রায় তিন লক্ষ টাকার মধু সংগ্রহ করতে পারবেন। এ ছাড়া জেলার সদর উপজেলার নোয়াপাড়া, মিঠাপুর, নন্দলালপুর, তেঘরিয়া, বাল্য ও বালিয়াডাঙ্গাসহ অন্য ৩টি উপজেলায় একইভাবে বিভিন্ন প্রকার ফুল থেকে চাষীরা একই পদ্ধতিতে মধু সংগ্রহ করছেন। মধু আহরণ ও বিক্রি এখন অনেক পরিবারের আয়ের উৎস। এ উপার্জিত অর্থ দিয়ে তাদের সংসারের যাবতীয় খরচ চলে। এটি লাভজনক চাষ। অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে এ চাষ করা সম্ভব।
মৌ চাষিরা আরো জানান, মৌ মাছিরা নিজ নিজ বাক্স থেকে ২-৩ কিলোমিটার দুরে যায় প্রকৃতি থেকে বিভিন্ন উপাদান সংগ্রহ করতে। ফুলের মৌসুমে তাদের কোন খাবারের যোগান দিতে হয় না। অন্য সময়টাতে তাদের খাবার হিসেবে দিতে হয় চিনি মিশ্রিত পানি।
মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পার্থ প্রতিম সাহা জানান, যে কেউ অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে এ চাষ করতে পারেন। পরাগায়ণ ভাল হলে রবি ফসলের ফলন যেমন ভালো হবে, তেমনি মধু উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে। আমরা এ বিষয়ে কৃষকদের নানাভাবে পরামর্শ দিচ্ছি।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস