বাংলা৭১নিউজ ডেস্ক: বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেল না মৌলভীবাজার শহর। গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে মনু নদীর শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় শহরটি। রাতের বেলা হঠাৎ করে শতাধিক বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ে। এ সময় পানি ঢুকেছে শহরের চারটি খাদ্য গুদামেও। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে চাল ও গম নষ্ট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
রাতে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় দোকানের মালামাল পর্যন্ত সরাতে পারেনি মানুষ। মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমানের বাসা দেড় ফুট পানিতে প্লাবিত হয়।
গতকাল শনিবার দিবাগত রাত প্রায় সাড়ে ১২টার দিকে শহরের বারইকোণাতে ভেঙে যায় শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ।
জেলা শহরের চারটি সরকারি খাদ্য গুদামে বন্যার পানি প্রবেশ করায় প্রায় আড়াই কোটি টাকার চাল ও গম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে জেলা খাদ্য বিভাগ।
জেলা খাদ্য কর্মকর্তা মনোজ কান্তি দাশ চৌধুরী জানান, চারটি গুদামে এক হাজার ৫৬৮ টন চাল ও ৪২৪ টন গম মজুদ আছে। মজুদকৃত এই চাল ও গমের মূল্য প্রায় ৯ কোটি টাকা। গুদামে যে উচ্চতায় পানি ঢুকেছে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রায় ৫৫০ টন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় আড়াই কোটি টাকা।
গত কয়েকদিন ধরেই বাঁধ ভাঙা নিয়ে শঙ্কায় ছিল শহরের মানুষ। ঠিক মধ্যরাতে নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে মৌলভীবাজার পৌর এলাকার ৬, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের বাসাবাড়ি তলিয়ে যায়। পাড়া মহল্লার রাস্তাঘাটের ওপর দিয়ে বইছে বন্যার পানির স্রোত।
শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ উপচে পানি আসতে থাকলে ঝুঁকিপূর্ণ কয়েকটি স্থানে শনিবার থেকে সেনাবাহিনী, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পৌরসভা, জেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় বাসিন্দারা বাঁধ রক্ষায় বালিভর্তি বস্তা ফেলে।
ভাঙা বাঁধ দিয়ে দ্রুত বেগে পানি ঢোকে মৌলভীবাজার পৌরসভার উপজেলা পরিষদ, বারইকোণা, পূর্ব ও পশ্চিম বড়হাট, বড়কাপন, পশ্চিম ও পূর্ব ধরকাপন, শেখেরগাঁও, দ্বারক, খিদুর, গোবিন্দশ্রী এলাকা প্লাবিত করে। চলাচলের সব রাস্তা তিন থেকে চারফুট পানিতে তলিয়ে যায়। বন্যাকবলিত মানুষ নিজেদের দোতলায় বা আশপাশের স্বজন, পার্শ্ববর্তী আত্মীয়স্বজনের বাসাতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
গভীর রাতে বাঁধ ভাঙায় কোনো দোকানিই মালামাল সরাতে পারেননি। বন্যার পানি পৌরসভার তিনটি ওয়ার্ড প্লাবিত করে যার কারণে মোস্তফাপুর ইউনিয়ন ও কনকপুর ইউনিয়ন এলাকায় পানি বাড়ছে।
চার উপজেলায় পরিস্থিতি অপরিবর্তিত
অপরদিকে কুলাউড়া, কমলগঞ্জ, রাজনগর ও সদর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তলিয়ে রয়েছে এসব বাড়িঘরসহ রাস্তাঘাট। পানিবন্দি রয়েছে জেলায় প্রায় ৫০০ গ্রামের তিন লাখ মানুষ। জেলা সদরের সাথে উপজেলা সদরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ আছে।
মেয়রের বাসায় পানি
মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান জানান, বড়হাট বন্যাকবলিত হওয়ায় তাঁর নিজের বসতঘরে দেড় ফুট পানি। তিনি বলেন, ‘শহর রক্ষার জন্য যেখানে বালুভর্তি বস্তা দিতে হয় সবই পৌরসভার লোকজন এবং পৌরসভার টাকা দিয়ে দৈনিক মজুর নিয়োগ করে করা হয়েছে।’
মৌলভীবাজার সদর উপজেলা ছাড়াও, কুলাউড়া, কমলগঞ্জ ও রাজনগর উপজেলার বন্যার্তদের দুর্ভোগ বেড়েছে। পানিবন্দি মানুষ খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে আছে। গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৌলভীবাজার শহরে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ, মৌলভীবাজার সরকারি মহিলা কলেজ, প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও মৌলভীবাজার টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জানান, মনু নদীর পানি মৌলভীবাজার শহরের কাছে চাঁদনীঘাট পয়েন্টে ১৫৪ সেন্টিমিটার ও মনু রেলওয়ে ব্রিজের কাছে বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধলাই নদীর পানি বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কিন্তু কুশিয়ারা নদীতে গত ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ১ সেন্টিমিটার পানি কমে বর্তমানে তা বিপৎসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সূত্র: এনটিভি অনলাইন।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস