সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৩৪ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
প্রধান উপদেষ্টা নিয়ে বিতর্কিত পোস্ট, ওএসডি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুন্নী সাহার ব্যাংক হিসাব তলব ভারতে পালানোর সময় সাবেক ভূমিমন্ত্রী আটক শুরুতেই দুই উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী গ্রেফতার টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছে ভারত সরকারের প্রতি জি এম কাদেরের ত্রাণ সহায়তার আহ্বান ডেঙ্গুতে আরো ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১২২৫ বাজার মনিটরিংয়ে টাস্কফোর্স গঠন হচ্ছে : আসিফ ভারত থেকে এলো ২ লাখ ৩১ হাজার ডিম, পিস ৭.৫ টাকা কোনো নিরাপত্তাঝুঁকি নেই, নির্বিঘ্নে পূজা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সুদ মওকুফ করে ঋণ রিশিডিউল করার দাবি চামড়া ব্যবসায়ীদের ১০০০ আইটি ইঞ্জিনিয়ারকে প্রশিক্ষণ দিতে চায় জাইকা বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তায় সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসটিডি দুই জাহাজে অগ্নিকাণ্ড: নৌ-মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি গঠন অভ্যুত্থানে ১০৫ শিশু নিহত, প্রত্যেক পরিবার পাচ্ছে ৫০ হাজার টাকা ক্রিকেটার ছদ্মবেশে শ্রমিক নেওয়ার অভিযোগে ২১ বাংলাদেশি আটক ইসরায়েলি হামলা হলে জবাব দিতে পরিকল্পনা প্রস্তুত ইরানের সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব আমিনুল গ্রেপ্তার অনুমাননির্ভর কোনো কথা বলতে চাই না: সাখাওয়াত হোসেন

মোড়ে মোড়ে চাঁদা দিয়ে চলছে অবৈধ লেগুনা

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি:
  • আপলোড সময় সোমবার, ১৬ মে, ২০২২
  • ২৫ বার পড়া হয়েছে

অবৈধ লেগুনা ছুটে চলে ঢাকা-চট্টগ্রাম বৈধ মহাসড়কে। প্রতিদিন মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমড়াইল মোড় থেকে সাইনবোর্ড হয়ে যাত্রাবাড়ি পর্যন্তই চলে প্রায় দুই শতাধিক লেগুনা। সরকার নিষিদ্ধ করলেও এই রুটে লেগুনা চালায় সিন্ডিকেট। মোড়ে মোড়ে চালকদের দিতে হয় চাঁদা।

যার নেই কোনো রশিদ বা টোকেন। এভাবে চালক এবং মালিকদের থেকে সিন্ডিকেটের মাসে আয় লাখ লাখ টাকা। পুলিশ প্রশাসন, সরকার দলীয় নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন মহলে এই টাকা ভাগ হয় বলে জানিয়েছে লেগুনা মালিকরা।

চালক এবং লেগুনা মালিকদের অভিযোগ, দিনের আলোতে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয় না পুলিশ। সংসার চালাতেই চাঁদা দিয়ে লেগুনা চালাতে হচ্ছে তাদের।

গতকাল রবিবার শিমড়াইল এলাকায় লেগুনা পরিবহনের লাইনম্যান পরিচয়ে চাঁদা আদায় করছিলেন আব্দুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। তাঁর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে চাঁদাবাজির কথা কাছে শিকারও করেছেন তিনি। লেগুনা প্রতি ৩০ টাকা নিচ্ছেন এই সিন্ডিকেট সদস্য। তবে আব্দুর রহমানের দাবি, ৩০ টাকা নয়, ১০ টাকা করে নিচ্ছেন তিনি।

কেন লেগুনা থেকে চাঁদা নিচ্ছেন? এমন প্রশ্নে আব্দুর রহমান সরল স্বীকারোক্তি দিয়ে বলেন, ‘এই টাকা দিয়ে বউ-বাচ্চা নিয়ে সংসার চালাই। অসুস্থ মানুষ, পেটের দায়ে বাধ্য হয়েই রাস্তায় নেমে চাঁদা তুলছি। ’ কার কথা চাঁদা তুলছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পরশ (হাসানুজ্জামান পরশ) ভাইয়ের হয়েই কাজ করি। ’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমড়াইল মোড় থেকে সাইনবোর্ড হয়ে যাত্রাবাড়ি পর্যন্তই চলে প্রায় দুই শতাধিক লেগুনা। বেশিরভাগ পরিবহনের নেই কোনো রোড পারমিট ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। চাঁদা দিয়েই দীর্ঘদিন যাবৎ এ সড়কে চলাচল করছে এসকল অবৈধ লেগুনা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেশিরভাগ লেগুনা চালক ও হেলপার অপ্রাপ্ত বয়স্ক। তাদের কাছে নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। এ মহাসড়ক দিয়ে চলা অধিকাংশ লেগুনার অবস্থাও বেহাল। লক্কর ঝক্কর গাড়িগুলো বছরের পর বছর চললেও দেখার যেন কেউ নেই। পুলিশ প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রতিনিয়তই এক প্রকার আয়েশেই চলাচল করে মহাসড়কের নিষিদ্ধ ঘোষিত লেগুনা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই সড়কে দুই শতাধিক লেগুনা চালে ‘পরশ ও পলাশ সিন্ডিকেট’কে চাঁদা দিয়ে। সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা হাসানুজ্জামান পরশ পরিচয় দেন লেগুনার ব্যবস্থাপনা পরিচালক। চাঁদাবাজি করেই হীরাঝিল এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় একাধিক জমি, ৫/৭টি লেগুনাসহ মাত্র কয়েক বছরে কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি। বিভিন্ন পরিবহন চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার হলেও হাসানুজ্জামান পরশের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি এখনো। পরশের হয়ে মোড়ে মোড়ে চাঁদা তোলেন তাঁর লোকজন।

শিমড়াইল এলাকায় নিজেই থাকেন হাসানুজ্জামান পরশ। সেখানে ‘চিটাগাং রোড লেগুনা মালিক সমিতির’ নামে আতিকুর রহমান আতিক মিয়াসহ পরশ সিন্ডিকেট প্রতিদিন দুই শতাধিক লেগুনা থেকে ৪৫০ টাকা করে তোলে। এতে দিনে প্রায় লাখ টাকা তুলে নেন এই চক্র। এ ছাড়াও ওই এলাকায় আব্দুর রহমান, মনির হোসেন ও শহিদ মিয়া প্রতি গাড়ি থেকে নেন ৩০ টাকা।

অন্যদিকে যাত্রাবাড়ি এলাকায় চলে পলাশ মিয়ার সিন্ডিকেট। ওই এলাকায় তাঁর হয়ে আরিফ মোল্লা, সাঈদ মিয়া, কাউসার মিয়া, অনিক হোসেন, শাহ-আলম মিয়া ও নয়ন মিয়াসহ কয়েকজন চাঁদাবাজ প্রতি লেগুনা থেকে ৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করেন। মোড়ে মোড়ে এই সকল চাঁদাবাজদের টাকা দিতে হয় লেগুনা চালক এবং মালিকদের। মাসে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা চাঁদা দেওয়া হয় বলে দাবি তাদের।

সিদ্ধিরগঞ্জ আজিবপুর বাগানবাড়ি এলাকায় নূরু মিয়ার ছেলে আতিকুর রহমান আতিক দীর্ঘদিন যাবৎ লেগুনা থেকে চাঁদা আদায় করে হয়েছেন বাড়ি ও গাড়ির মালিক। রয়েছে সাত/আটটি লেগুনা পরিবহন। প্রশাসনের ভয়ে আতিক মাঝে মাঝে এলাকা থেকে গা ঢাকা দেন আতিক। তবে কিছুদিন পরেই ফেরেন সহাসড়কে চাঁদাবাজ রূপে।

শিমড়াইল এলাকায় চলাচলরত লেগুনাচালক বরকত উল্লাহ বলেন, ‘বাধ্য হয়েই চাঁদা দিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। চাঁদা না দিলে বিভিন্নভাবে হয়রানিসহ গাড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়। লাইনে নতুন গাড়ি নামাতে হলে এককালীন হিসেবে চাঁদা দিতে হয় ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। ’

সিন্ডিকেট প্রধান হাসানুজ্জামান পরশ বলেন, ‘আমি কোনো চাঁদাবাজির সঙ্গে জাড়িত না। এই সড়কে আমার কয়েকটি লেগুনা রয়েছে। এ সকল লেগুনা থেকে ভাড়া উত্তোলন করে সংসার চালাই। সমিতির নামে যে টাকা ওঠাই তা থানা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, জনপ্রতিনিধি, দলীয় নেতাকর্মীসহ সবাইকে দিতে হয়। ’ 

শিমড়াইল এলাকায় দায়িত্বরত হাইওয়ে পুলিশের এএসআই আলাউদ্দিন মিয়া বলেন, ‘আমি এক বছর যাবৎ শিমড়াইল মোড়ে দায়িত্ব পালন করছি। পুরো সময় ধরে প্রতিদিনই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত লেগুনা চলাচল করছে। এ বিষয়টি বড় স্যারদের নজরে আছে। তারাই ভালে বলতে পারবেন। ’ 

হাইওয়ের এসপি আলী আহম্মেদ খান বলেন, মহাসড়কে লেগুনা চলাচল নিষিদ্ধ। যেগুলো চলাচল করছে তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত রেকারিং ও জরিমানা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। কোনভাবেই এসকল নিষিদ্ধ পরিবহন মহাসড়কে চলাচল করতে পারবে না।

র‌্যাব-১১ এর কোম্পানী কোমান্ডার মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘ইতোমধ্যেই চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। লেগুনা থেকে যেসকল চাঁদাবাজরা অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলন করছে খুব শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। ’

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com