বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক: দলের মধ্যেই নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তা কী কমতির দিকে। অথচ এই মানুষটিই পুরো ভারত কাঁপিয়ে পাহাড় সমান জনপ্রিয়তা নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। আর আজ বিজেপির মহাসন্মেলনেই তাকে হতে হচ্ছে বিপর্যস্ত। জোড় করে নিতে হচ্ছে হাত তালি।
আনন্দবাজার অনলাইনের প্রতিদেবনে বলা হয়: মঞ্চে আসছেন এক-এক জন নেতা। শিবরাজ সিংহ চৌহান এলেন, সামান্য তালি। যোগী আদিত্যনাথ এলেন, তালি আরও বেশি। লালকৃষ্ণ আদভাণী এলেন, তালির গর্জন, সঙ্গে শিস। নরেন্দ্র মোদী এলেন, ঝিমিয়ে গেল তালি। যাঁরা তালি দিচ্ছেন, তাঁরা কিন্তু সকলেই বিজেপির কর্মী। লোকসভা ভোটের আগে দলকে চাঙ্গা করতে যে হাজার দশেক কর্মীকে গোটা দেশ থেকে আনা হয়েছে দিল্লির রামলীলা ময়দানে।
অথচ সকাল থেকে মোদী-মুখোশ পরে ঘুরছিলেন নেতারা। মোদী-জ্যাকেট (যাতে লেখা ‘নমো এগেন’) গায়ে পীযূষ গয়াল, বাবুল সুপ্রিয়েরা। কিন্তু স্বয়ং মোদী এসে যখন হাতে পদ্মফুল নিলেন, কর্মীদের বিশেষ উৎসাহ দেখা গেল না। অমিত শাহকে বলতে হল, ‘‘জানি দিল্লিতে ঠান্ডা পড়েছে, তবু আওয়াজ এত কম কেন?’’ প্রদীপ জ্বালাতে যখন আডবাণীর হাত ধরলেন মোদী, আবার তালি পড়ল। তবে অনেকটা জোর করে আদায় করে নিতে হল।
বিজেপির এই মহাসম্মেলন শুরুর আগেই কর্মীদের মুখে মুখে ঘুরছিল রাহুল গান্ধীর রাফাল-আক্রমণ, চৌকিদার চোর স্লোগান, বিরোধীদের মহাজোট, রাত পোহালে বুয়া-বাবুয়ার জোট ঘোষণা। তাই প্রথম দিনে দেড় ঘণ্টার বক্তৃতায় কী অস্ত্র নিয়ে লড়াইয়ে যাবে বিজেপি, তার থেকে বেশি সময় বিজেপি সভাপতিকে ব্যয় করতে হল রাহুলের আক্রমণ আর কৌশলের জবাব দিতে। গোটা বক্তৃতায় অন্তত ১২ বার নিতে হল কংগ্রেস সভাপতির নাম।
শুধু তাই নয়, মোদীর মুখে ‘ভয়ের’ কথা আগেই এসেছিল, এ বারে লোকসভায় হারের ভয় ঘুরপথে এল অমিতের মুখেও। তাঁর কথায়, লোকসভার লড়াই পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের মতো। ১৩১ বার যুদ্ধ জিতেও যেখানে মরাঠারা হেরে গিয়েছিল। আর সেই হারের ফলে দেশকে ২০০ বছরের গোলামি করতে হয়েছিল। অমিতের আকুল আবেদন, ‘‘২০১৯ সালের ভোটও তেমনই নির্ণায়ক। আর এক বার নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী করুন। বুক চিতিয়ে বলুন, মোদী এমন কোনও কাজ করেননি, যাতে দাগ আছে। রাহুল যাই বলুন, চৌকিদারই সব চোরকে ধরবে।’’
মঞ্চে অমিত বলছেন, বিজেপি কর্মীরা একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছেন। রাহুল সত্যিই ভয় ধরিয়েছেন মোদী-শাহকে? তা না হলে কেন শুধু তাঁরই আক্রমণের পাল্টা জবাব দিতে হচ্ছে নিরন্তর? অনেক বলার পর একবারই স্বতঃস্ফূর্ত ‘মোদী-মোদী’ ধ্বনি উঠল কর্মীদের মধ্যে থেকে। যখন নীরব মোদী, বিজয় মাল্য, মেহুল চোক্সীকে ফেরত আনার কথা বললেন অমিত। কিন্তু তা-ও ঝিমিয়ে গেল, যখন সভাপতি বললেন, ধরে আনতে না পারলেও টাকা ফেরত আনবে সরকার।
অনেকের মতে, ‘ফিকে হওয়া’ ব্র্যান্ড-মোদীকে ঘষেমেজে কর্মীদের হাতে তুলে দেওয়াই এ দিন লক্ষ্য ছিল অমিতের। কিন্তু তা করতে গিয়ে তিনি বললেন, ‘‘১৯৮৭ সাল থেকে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কাজ করেছি। তিনি কখনও হারেননি।’’ দলের মধ্যেই উঠল প্রশ্ন, তা হলে এতগুলি ভোটে একটি হারেরও দায় মোদীর নয়?
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ