বাংলা৭১নিউজ ডেস্ক: বার্সেলোনার ম্যাচ মানে এখন স্কোরলাইনে দুটো নাম দেখার নিশ্চয়তা। কার বিপক্ষে ম্যাচ কিংবা কোন মাঠে ম্যাচ, সেটাও যেন এখন আর কোনো বিষয় নয়! আজও এর কোনো ব্যতিক্রম হয়নি। এ মৌসুমে খুনে ফর্মে থাকা লিওনেল মেসি ও লুইস সুয়ারেজের গোলে আলাভেসকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছে কাতালানরা। তবে ম্যাচের ফল অন্য কিছু হলেও বিস্ময় জাগত না আজ।
এ ম্যাচের প্রথমার্ধের ভিডিও ইউরোপের বড় বড় দলগুলো চাইলে সংগ্রহ করে রাখতে পারে। বার্সেলোনাকে আটকে রাখতে চাইলে কী করা উচিত সেটা দেখিয়েছিল আলাভেস। আলাভেস ম্যানেজার আবেলার্দো ফার্নান্দেজ তাঁর দলকে একটি কৌশলই বলেছেন—ডি-বক্সের আসে পাশে ৮ জন থাক আর বাকি দুজন অপেক্ষায় থাক প্রতিআক্রমণের। এতেই প্রথমার্ধে অন্তত ৩/৪টি গোলের সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল আলাভেস।
১৬ মিনিটেই প্রতি আক্রমণের পুরস্কার প্রায় পেয়েছিল দলটি। ডান প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে উঠে গিয়েছিলেন হার্নান পেরেজ। বাঁ প্রান্তে তাঁর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৌড়াচ্ছিলেন ইবাই গোমেজ। দুজনের মাঝে মাত্র একজন বার্সা ডিফেন্ডার থাকার পরও গোল হলো না। পেরেজ বলটি ছাড়তে একটু বেশি সময় নিয়েছিলেন। ফলে গোমেজের পায়ে বল আসতে আসতেই মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেন এগিয়ে এসে শট আটকে দিলেন।
এমন সুযোগ হাতছাড়া করার দায় মেটাতে বেশি সময় নেননি গোমেজ। ২৩ মিনিটে আক্রমণে ওঠা বার্সা বল হারায় আলাভেস অর্ধে। মেসির পা থেকে পাওয়া বল আসে আলাভেস উইঙ্গারের কাছে। তাঁর লম্বা থ্রু বুঝে নিয়ে দৌড় শুরু করলেন জন গুইদেতি। এবারও পুরোনো সেই দৃশ্য। দুজন আলাভেস খেলোয়াড়ের মাঝে দৌড়াচ্ছেন একজন বার্সা ডিফেন্ডার। গুইদেতি তাই পাস দেওয়ার ঝামেলায় গেলেন না। ডান পায়ের এক শটে পরাস্ত করলেন স্টেগেনকে। তবে ডান পায়ের শট বাঁ পায়ের বুটে লাগায় দিক পরিবর্তন করাটাও পক্ষে গেছে গুইদেতির।
২৬ মিনিটে আবারও আলাভেসের প্রতি আক্রমণ। এবার গুইদেতির পাস ধরে প্রায় অর্ধেক মাঠ দৌড়ালেন রুবেন সবরিনো। কিন্তু বক্সে ঢুকে যে শট নিলেন, সেটা ধরতে স্টেগেনকে কোনো কষ্টই করতে হয়নি। ৩১ মিনিটেও সবরিনোর আরেকটি আক্রমণ এভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
এগুলো সবই প্রতি আক্রমণ, এর মানেই হলো বার্সেলোনা টানা আক্রমণ করে গেছে। কিন্তু বার্সেলোনার দুর্ভাগ্য, তাদের আক্রমণগুলো কোনোভাবেই গোলের দেখা পাচ্ছিল না। মেসির দুটো ফ্রি-কিক থেকে খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিল বার্সা। কিন্তু ২১ মিনিটে মেসির ফ্রি-কিক থেকে সুয়ারেজের নেওয়া হেড অনায়াসে ঠেকিয়ে দিয়েছেন আলাভেস গোলরক্ষক পাচেকো। ৪২ মিনিটে মেসির ফ্রি-কিক ঠেকাতে অবশ্য দুর্দান্ত এক ডাইভ দিতে হয়েছে পাচেকোকে। পাচেকোর হাতে লেগে পোস্টে লেগে বল গোল লাইন অতিক্রম করে।
এ মৌসুমে বার্সেলোনার আসল রূপ দেখা যাচ্ছে দ্বিতীয়ার্ধে। আজও তাই দেখা গেল। প্রতিপক্ষকে ক্লান্ত করে তারপর গোল করার উৎসবে নামে বার্সেলোনা। শুরুতেই দুই অনিয়মিত ফুল ব্যাককে তুলে নামানো হলো জর্ডি আলবা ও সার্জি রবার্তোকে। এ মৌসুমে মেসিকে পাঁচটি গোল বানিয়ে দিয়েছেন আলবা। আর রবার্তোর বানিয়ে দেওয়া পাঁচ গোলের পাশে নাম লিখিয়েছেন সুয়ারেজ!
এ দুজন মাঠে নামতেই বার্সেলোনার আক্রমণের ধার বাড়ল। তবে বার্সা ম্যাচে ফিরল ৭১ মিনিটে। বাঁ প্রান্ত দিয়ে একাই আলাভেস রক্ষণকে ধোঁকায় ফেলে দিলেন আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। তাঁর ক্রস থেকে সুয়ারেজের নেওয়া শটটি পারল পাচেকোকে ফাঁকি দিতে। তবে সুয়ারেজের শট গোলে যাওয়ার আগে পিকের গায়ে না লাগলে হয়তো সেটাও হতো না। পরের ১০ মিনিট বার্সেলোনা শুধু আক্রমণের পর আক্রমণ করে গেছে। কিন্তু কোনো ফল হয়নি।
৮৩ মিনিটে মেসির এক ফ্রি-কিকে এল ফল। দুর্দান্ত এই ফ্রি-কিকে বল হাতে লাগাতে পারলেও জালে যাওয়া আটকাতে পারেননি পাচেকো। যদিও রিপ্লেতে দেখা গেছে, পাকো আলকাসেরকে ফাউলের জন্য ফ্রি-কিক দেওয়া হয়েছিল। অথচ ফাউলের মুহূর্তে আলকাসের অফসাইডে ছিলেন।
গোল নিয়েই যথেষ্ট বিতর্কের জন্ম হতো। সে বিতর্কের আগুন উসকে দেওয়া হলো ৮৭ মিনিটে। বার্সা ডি বক্সে সিজর কিক নিয়েছিলেন বার্সেলোনা থেকেই ধারে আলাভেসে খেলতে যাওয়া মুনির এল হাদ্দাদি। সে শট উমতিতির হাতে লেগে ফিরে এসেছে। কিন্তু আলাভেসের পেনাল্টির আবেদনে রেফারি সায় দেননি কোনো।
বাংলা৭১নিউজ/সিএইস