ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার রামরাইলের মোহাম্মদপুরে ইউপি সদস্য (মেম্বার) মুজিবুর রহমানের দাপটে বিপাকে পড়েছেন মৎস্যজীবীরা। একটি খাল দখলে নিয়ে মৎস্যজীবী সমিতির ইজারা নেয়া জলমহালের প্রবেশমুখ বন্ধ করে দিয়েছেন ওই মেম্বার।
ফলে মৎস্যজীবীরা জলমহাল থেকে কোনো মাছ ধরতে পারছেন না। এ বিষয়ে অভিযোগ দেয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এখনো খালটি দখল করে জলমহালের প্রবেশমুখ বন্ধ করে রেখেছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ছয় বছর ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার রামরাইলের মোহাম্মদপুর গ্রামের ২০ দশমিক ৭২ একর বড়জোর খাল জলমহালটি ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করছে ‘বড়জোর খাল মৎস্যজীবী সমিতি’।
কিন্তু এ জলমহালের প্রবেশমুখের খালটি অবৈধভাবে দখলে নিয়ে বন্ধ করে দেয় স্থানীয় ইউপি সদস্য মুজিবুর রহমান। শুধু তাই নয়, খালের জায়গা দখল করে একটি পুকুর অবৈধভাবে খনন করেন তিনি। ফলে বৃহৎ এই জলমহালে খাল দিয়ে মাছ প্রবেশ করে না।
এতে লোকসানে পড়েছেন মৎস্যজীবীরা। পরে বাধ্য হয়ে অবৈধ দখলদার থেকে সরকারি গণ্যাজুড়ি খালটি দখলমুক্ত করতে ভূমি মন্ত্রণালয় ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন বড়জোর খাল মৎসজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক নূর মোহাম্মদ।
তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন থেকে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদনের দায়িত্ব সেন্দ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আশুতোষ চন্দ্র ভৌমিককে প্রদান করেন।
ঘটনা সত্যতা পেয়ে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২৮৪নং সেন্দ মৌজায় হালে ৫৫৮ দাগে ০.২২ একর ভূমিশ্রেণি খাল হিসেবে ১নং খাস খতিয়ানে লিপিবদ্ধ। মো. মুজিবুর রহমান, পিতা-আবু জামাল, সাং-মোহাম্মদপুর উক্ত মৌজায় ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত ৫৫৮ দাগের ভূমিতে অবৈধভাবে একটি পুকুর খনন করেন।’
এই প্রতিবেদন দাখিলের পর ইউপি সদস্য মুজিবুর রহমান ১৩ ফুট প্রশস্ত খালটির ৫ ফুট অবৈধ দখল ছেড়ে দেন। কিন্তু খালের অধিকাংশ এখানো তিনি দখল করে রেখেছেন।
বড়জোর খাল মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘সরকার আমাদের এই জলমহাল ইজারার মাধ্যমে দিয়েছেন। কিন্তু মেম্বার মুজিবুর রহমান জোর করে এটি দখলে নিয়েছেন। আমরা নিজের ক্ষমতায় জলমহালটি তার কাছ থেকে উদ্ধার করতে পারছি না। এ কারণে লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছি।’
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে মেম্বার মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমি অবৈধভাবে সরকারি জলমহাল দখল করিনি। আমার বিরুদ্ধে এলাকার একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে। সব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আরেফিন বলেন, ‘আমি জলমহাল এলাকাটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। দুই পক্ষের বক্তব্য শুনেছি। সার্ভেয়ারকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’
বাংলা৭১নিউজ/সিএফ