শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২১ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
চাচাকে বাবা বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিসিএস ক্যাডার! হাইকোর্টের নতুন রেজিস্ট্রার হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী লামায় অগ্নিসংযোগ: ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে উপদেষ্টা-প্রশাসন নসরুল হামিদের ৩৬ কোটি টাকার সম্পদ, অস্বাভাবিক লেনদেন ৩১৮১ কোটি তিন উপদেষ্টাকে বিপ্লবী হতে বললেন সারজিস আলম জামিন নামঞ্জুর, কারাগারে আওয়ামী লীগ নেতা বলরাম ফায়ার ফাইটার নিহতের ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা কোরিয়া থেকে ৬৯৩ কোটি টাকার এলএনজি কিনবে সরকার সাভারে বন্ধ টিএমআর কারখানা চালুর নির্দেশনা উপদেষ্টার দুদকের সাবেক কমিশনার জহুরুল হকের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু কনস্টাসকে ধাক্কা দেওয়ায় কোহলিকে আইসিসির শাস্তি শেখ হাসিনা-শেখ রেহানার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করার দাবি ফখরুলের ১১ বছর পর দেশে ফিরছেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক যারা নির্বাচনকে বিতর্কিত করেছেন, তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত প্রাণ এএমসিএলের ৩২ শতাংশ লভ্যাংশ অনুমোদন সেতু মন্ত্রণালয় থেকে বাদ যাচ্ছে ১১১৮৬ কোটি টাকার অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বিমানের সিটের নিচে মিলল ২০ সোনার বার, যাত্রী আটক ‘পিলখানা হত্যায় নিরপেক্ষ থেকে ষড়যন্ত্র চিহ্নিত করা হবে’ চোখের জলে এক বীরকে বিদায় দিল ফায়ার সার্ভিস

মৃত্যু ছাপিয়ে বাড়ছে নিখোঁজ, দিল্লিতে নিহত বেড়ে ৪২ : দেখা নেই নেতাদের

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় শনিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
  • ৬৫ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক: সাজিদ রহমানের শরীর কাঁপছে। একটু পরেই ডেডবডি চিহ্নিত করার জন্য তাঁকে ডাকা হবে। জিটিবি হাসপাতালের মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে সাজিদ। তিনদিন ধরে এভাবেই প্রত্যেকবার তাঁর শরীর কেঁপে ওঠে। দিল্লির একের পর এক হাসপাতালে যাচ্ছেন। মর্গে নিয়ে গিয়ে তাঁকে দেখানো হচ্ছে অজ্ঞাতপরিচয় মৃতদেহ। বলা হচ্ছে, এই কি তোমার ভাইপো? দেখে বলো! কান্না চেপে সাজিদ নতুন নতুন মৃতদেহ দেখছেন, জামা কাপড় চেনার চেষ্টা করছেন, ভা‌ইপো মহসিনের হাতের বালা আছে কিনা দেখছেন। কিন্তু খোঁজ পাচ্ছেন না কিছুতেই।

মহসিন নেই কোনও হাসপাতালের জেনারেল ওয়ার্ডে। কোনও মর্গে। গত চারদিন ধরেই গভীর রাতে বাড়ি ফিরছেন সাজিদ রহমান। যাতে তবাসুমের মুখোমুখি হতে না হয়। কিছু প্রশ্ন করতে না পারে। ১৯ বছরের তবাসুম সাজিদের ভাইপো মহসিনের দু’মাসের বিয়ে হওয়া স্ত্রী। এবং এক মাসের গর্ভবতী। সোমবার কারওয়াল নগরের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যমুনা বিহারে গিয়েছিল মহসিন। মহসিনের জেনারেটরের দোকান। ফেরার পথে দুপুর তিনটে নাগাদ শেষবার স্ত্রীকে ফোনে বলেছিল আসছি, এসে খাব। আসেনি আর।

তবাসুমকে সাজিদ হাসপাতাল থেকে ফোন করে বলছেন, এখানেও ডেডবডি নেই, তার মানে মারা যায়নি। কাঁদিস না। বেঁচে আছে মহসিন। জিটিবি হাসপাতালের মর্গের সামনে চোখে জল নিয়ে সাজিদ বললেন, তবাসুমকে বলছি, কিন্তু জানি আর পাওয়া যাবে না। যে নারকীয় হত্যালীলা হয়েছে, পাওয়া যেতে পারে না। তাই বলে লাশটাও পাব না? তারপরই সাজিদ ঢুকলেন নতুন মৃতদেহ দেখতে। পাঁচ মিনিট পর বেরিয়ে শুধু মাথা নাড়লেন। গোটা শরীর ছাই। চেনা যায় না। মাটিতে বসে পড়ে ডুকরে কেঁদে উঠলেন। সব হাসপাতাল তো শেষ! কোথায় সে? কাহা গয়ে রে মহসিন…!

দিল্লিতে মৃত্যু বেড়ে ৪২ হয়েছে। তারই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নিখোঁজের সংখ্যা। থানায় থানায় হেল্পলাইন খোলা হয়েছে নিখোঁজের তালিকা তৈরির জন্য। অসহায় মানুষ হাসপাতাল থেকে থানায় ছুটে বেড়াচ্ছেন হারানো স্বজনের খোঁজে। পাঁচদিন কেটে গিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের এখনও দেখা গেল না উপদ্রুত এলাকায়। রাহুল গান্ধী বিদেশে। কংগ্রেসের শান্তিমিছিল আর আম আদমি পার্টির অবস্থান বিক্ষোভ সবই নিরাপদ রাজঘাটেই শেষ। অসহায় মানুষের ভরসা একে অন্যের প্রতিবেশিরাই। আছে শুধু শ্মশানে যাওয়া, আর কবরস্তানে হাঁটা।

ছবি আছে আপনার কাছে? শাবানার কাছে জানতে চা‌ই঩লেন সাব ইন্সপেক্টর সুধীর রঞ্জন। জিটিবি হাসপাতালের মর্গের উল্টোদিকে নিখোঁজ তালিকা তৈরির তাঁবু তৈরি হয়েছে। দীর্ঘ লাইন। শাবানা চিন্তা করছেন স্বামী ফিরোজ আহমেদের কোনও ছবি আছে কি না। পাশে থাকা দেওর বললেন, ঈদের ছবি ছিল না? কালো বাক্সে আছে মনে হয়! হাঁটছেন শাবানা। সফদরজঙ্গ হাসপাতাল, ট্রমা সেন্টার, এলএনজিপি সর্বত্র। ফিরোজকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

তাদের বিল্ডিংয়ে ঢুকে প্রতিটি ঘরের দরজা বাইরে থেকে আটকে দিয়ে ভিতরে আগুনের বোতল ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছিল। তিনতলা থেকে দোপাট্টা দিয়ে নামিয়ে দিয়েছিলেন ছেলেমেয়ে আর স্ত্রীকে। তারপরই তিনি জানালা দিয়ে ঝাঁপ দেন। সেই শেষ দেখা। ফেরেনি ফিরোজ। শাবানা নাম লেখাচ্ছেন স্বামীর, গলি নম্বর সাত, কালিঘাটা…। স্যার, খুঁজে দিন। নয়তো আমাদের কী হবে বলুন! শাবানার হাহাকার মিশে গেল নিখোঁজ তালিকার রেজিস্টারে।

জামিমা বেগম বললেন, সবজি বিক্রি করে ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছি জানেন। ছেলেটা কাছে থাকে না রোজ। চাচার বাড়িতে থাকে। দিনমজুরের কাজ করে। যেদিন কাজ পায় না সেদিন আমার কাছে আসে। ২২ বছরের মনিসের মা জামিমা বেগম। মনিস নিখোঁজ। জামিমা খুঁজছেন ছেলেকে। আমরা কোথায় যাব বলুন তো! লোনিতে গেলে বলছে কারওয়াল নগর যান। এলএনজিপি বলছে জিটিবিতে যাও।

সন্ধ্যা হচ্ছে, জামিমা আর থাকতে পারবেন না। ফিরতে হবে। কেন? এত তাড়া কিসের? আবার কাল অন্য হাসপাতালে, অন্য কোনও মর্গে। দুই বাচ্চাকে বাড়িতে রেখে এসেছি। যদি অসুস্থ হয়ে যায়? অসুস্থ হবে কেন? আলমারির মধ্যে বাচ্চাদের ঢুকিয়ে জামাকাপড়ের আড়ালে রেখে আসছি রোজ। ওখানেই খাবারও দিয়ে আসছি। যদি আবার হামলা করে। অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে বুঝলাম, কতটা আতঙ্ক দিল্লিতে! হ্যাঁ, এতটাই!

বাংলা৭১নিউজ/সূত্র: দৈনিক বর্তমান অনলাইন

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৪ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com