বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের দাবিতে আবার রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা।শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টার পর এই অবস্থান শুরু হয়। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুনির্দিষ্ট ঘোষণা ছাড়া অবস্থান না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে।এ সময় তারা কোটা বহালের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা।
মুক্তিযুদ্ধের পর পর সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা প্রবর্তন করা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে ফেরার আসার পর এই কোটার আওতায় আনা হয় মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদেরও।
ওই বছর থেকে জামায়াতপন্থী ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতা-কর্মীরা মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলে বেশ কয়েকবার আন্দোলন করে। তবে তারা সফল হয়নি।
তবে গত বছর বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। আর এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব ধরনের কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। পরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা তুলে দেওয়া হয়।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের দাবিতে শাহবাগ দখল করে আন্দোলন হয়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া না পাওয়ার পর তারা উঠে যায়।
এর মধ্যে বিকালে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম’ ব্যানারে হাজারখানেক চাকরিপ্রত্যাশী নানববন্ধন করেন। পরে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। ফলে এই মোড় দিয়ে চার দিকের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
রাত সাড়ে ৮টার দিকেও কয়েকশ আন্দোলনকারী শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায় রাজাকারের ঠাঁই নাই’, ‘একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘কোটা কোটা কোটা চাই, ৩০ পার্সেন্ট কোটা চাই’স্লোগান দিতে দেখা যায়।
তাদের এই অবস্থানের কারণে আশপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে এলিফ্যান্ট রোড থেকে শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাহবাগ, মৎস ভবন থেকে শাহবাগ হয়ে বাংলামোটর পর্যন্ত রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় সড়কে সাধারণ মানুষের আনাগোনা কিছুটা কম। তবে বইমেলায় আগতদের পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান সন্ধ্যা সাতটার দিকে জানান, আন্দোলনকারীদের বুঝিয়ে সেখান থেকে উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা।
আশেপাশের এলাকায় পুলিশের অবস্থান থাকলেও তারা আন্দোলনকারীদেরকে কোনো ধরনের বাধা দেননি।
আন্দোলনকারীদের আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বুলবুল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘শেখ হাসিনার কাছ থেকে কোনো বার্তা না আসা পর্যন্ত আমরা এখান থেকে উঠব না। কারণ বাংলাদেশে সবাই বিক্রি হয়, শেখ হাসিনা বিক্রি হয় না।’
ছয় দফা দাবি
১. জাতির পিতা ও তার পরিবারসহ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ‘অবমাননাকারীদের’ বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।
২. সরকারি চাকুরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল, সংরক্ষণ, বিশেষ কমিশন গঠন করে প্রিলিমিনারি থেকেই শতভাগ কোটা বাস্তবায়ন এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সংরক্ষিত পদগুলে বিশেষ নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা।
৩. রাজাকারসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা, তাদের বংশধরদের সরকারি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও নিয়োগের অযোগ্য ঘোষণা করা এবং চাকরিতে যারা আছে, তাদের চাকুরিচ্যুত করা।
৪. মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও পারিবারিক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করে তার প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
৫. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সকল অপপ্রচার বন্ধ করা, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে ‘স্ব-ঘোষিত রাজাকার’ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনে হামলায় জড়িতরাসহ ‘অরাজকতা সৃষ্টিকারী স্বাধীনতাবিরোধীদের’ বিরুদ্ধে দ্রæত আইনুনাগ ব্যবস্থা নেওয়া।
৬. সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজম্মের বয়সসীমা আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি করা।
বাংলা৭১নিউজ/এসআই