বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীকে সজ্জন ব্যক্তি বলেছেন তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। বলেছেন, একটি মাত্র অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া উচিত হয়নি।
মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যের রিভিউ আবেদন খারিজের পর এক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া জামায়াত নেতার মামলাটি আপিল বিভাগে পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব। তার দাবি, এই দেশের অর্থনীতিতে কাসেম আলীর বিরাট অবদান আছে। এ কারণে তারে মৃত্যুদণ্ড দেয়া উচিত হয়নি।
জামায়াতের আর্থ গুরু হিসেবে পরিচিত কীম কাসেম আলী মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলেন চট্টগ্রাম অঞ্চলে আলবদর বাহিনীর সংগঠক। ডালিম হোটেলে নির্যাতন কেন্দ্র খুলে বহু মক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামীদের নির্যাতন করে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে সে সময়ই। পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের আগেই তিনি পালিয়ে যান এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর প্রকাশ্যে আসেন।
এক বছরেরও বেশি সময় তদন্ত শেষে এই জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে অপহরণ, গুম ও নির্যাতনের মোট ১৪টি অভিযোগ আনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এর মধ্যে একাত্তরের খুনি বাহিনী আলবদরের সংশ্লিষ্টতা ও ডালিম হোটেলে নির্যাতন করে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমউদ্দিনকে হত্যার দায়ে ২০১৪ সালের ৩ নভেম্বর কাসেম আলীকে ফাঁসি ও আরও আটটি অভিযোগে বিভিন্ন সাজা দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পরে গত ৮ মার্চ জসিমউদ্দিনকে হত্যা ও ছয় অভিযোগে মোট ৬২ বছরের কারাদণ্ড দেয় আপিল বিভাগ। ওই ৬ জুন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর রিভিউ আবেদন করেন জামায়াত নেতা। শুনানি শেষে সেই আবেদনও খারিজ করে আজ রায় দিয়েছে আপিল বিভাগ।
আপিল বিভাগের রায়ের প্রায় দুই ঘণ্টা পর এ নিয়ে কথা বলেন তার আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, ‘সে সাক্ষ্যপ্রমাণ আছে তাতে সরাসরি কাসেম আলী সাহেব জড়িত এটা বলা যায় না।’ তিনি বলেন, ‘যদি সরাসরি হত্যায় জড়িত না থাকেন, তাহলে তাকে মৃ্ত্যুদণ্ড দেয়া হয় না।’
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘কোনো আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার ক্ষেত্রে পৃথিবীর সব দেশে, এমনকি আমাদের দেশেও কতগুলো বিষয় বিবেচনায় আনা হয়। ১. তিনি সরাসরি হত্যায় জড়িত কি না, ২. ছেড়ে দিলে তিনি আবার একই অপরাধ করবেন কি না, ৩. তার চারিত্রিক গুণাবলী কি। আমরা বলেছিলাম কাসেম আলীকে একটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেয়া যায় না।’
খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম তিনি এক জন সজ্জন ব্যক্তি, তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন, সেবার ক্ষেত্রে তার অবদান রয়েছে।, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, ইবনে সিনা হাসপাতাল, এমনকি গণমাধ্যমে অবদান রয়েছে। এই ব্যক্তিকে যদি সাজা দেন আর ভবিষ্যতে যদি দেখা যায় এই সাজা সঠিক না, তাহলে কী হবে?’
খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘আপিল বিভাগ সাজা বহাল রেখেছেন, আমার কিছু বলার নাই। কিন্তু মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করে সাজা দেয়া হয়েছে। এখন ভবিষ্যত বিবেচনা করবে, ভবিষ্যত প্রজন্ম বিবেচনা করবে, সারা বিশ্বের আইনজ্ঞরা বিবেচনা করবেন এটা সঠিক কি না।’
বাংলা৭১নিউজ/সিএইস