বাংলা৭১নিউজ,জাবি প্রতিনিধি: যৌন হয়রানির প্রতিবাদে সারাবিশ্বে ঝড় তোলা ‘মি টু’ আন্দোলনে এবার যোগ হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যলয়। বাংলা নাটকের প্রবাদ পুরুষ নাট্যাচার্য প্রয়াত সেলিম আল দীনের পর এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে (#me too) ‘মি টু’ হ্যাশট্যাগে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাসরিন খন্দকার।
বৃহস্পতিবার রাত ১১ টায় নাসরিন খন্দকার (#me too) ‘মি টু’ হ্যাশট্যাগে তার ফেসবুকে আইডিতে এই অভিযোগ তুলেন। তিনি লিখেন, ১৯৯৫-১৯৯৬ সালে তিনি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। তার মা পূর্ব পরিচয়ের সূত্রে তৎকালীন বিভাগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানকে দেখভালের দায়িত্ব দিলে তিনি তার প্রতি অতি আগ্রহ দেখাত। ক্লাসে সবাই বিষয়টা খেয়াল করে। তাছাড়া টিউটেরিয়ালে সর্বোচ্চ নাম্বারসহ তার প্রতি অতি আগ্রহের কারণে বিভাগের সহপাঠীরা হাসাহাসি করত।
একদিন টিউটেরিয়াল পরীক্ষার খাতায় স্বাক্ষর করার সময় অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের অযাচিত নৈকট্যের কারণে তিনি পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য হন বলেও লিখেন।
অন্য আরেকদিন বিভাগে গিয়ে ক্লাস না হওয়ায় তিনি বিভাগের বাইরে বসে থাকলে তাকে সভাপতি পিয়ন দিয়ে তাকে ডেকে নিয়ে যান এবং বলেন তিনি শিক্ষার্র্থী হিসেবে সম্ভাবনাময়ী এবং তার অনুপস্থিতির জন্য সভাপতি খুবই উদ্বিগ্ন। শুধু মেধাই না, নাসরিন খন্দকারের আরও অনেক কিছু আছে যা দিয়ে তিনি অনেকদূর যেতে পারে যদি মোস্তাফিজুর রহমান তাকে সাহায্য করে।
পরে তার প্রস্তাবের উত্তর জানাতে বলেন বলেও লিখেন।
নাসরিন খন্দকার আরো লিখেন, পরের বছর তিনি নৃবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হলে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বিভাগ থেকে ছাড়পত্র দিচ্ছিলেন না। দশ দিন সময়ের মধ্যে ভর্তি হওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তাকে অনকেদিন ঘুরানোর পর সভাপতি কোন ছাড়পত্র দেন নি। পরে ডীন ও প্রক্টর হয়ে তৎকালীন ভিসির বিশেষ স্বাক্ষরে বিভাগ পরিবর্তন করে নৃবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন নাসরিন খন্দকার। তিনি তার জীবনের এই ঘটনাকে পুরুষালী জগতে নারীমাংসের মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার লড়াইয়ের ছোট্ট একটা ‘ওপেন সিক্রেট’ গল্প বলে উল্লেখ করেন।
অভিযোগের ব্যাপারে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,‘নাসরিন খন্দকার নামে আমি কাউকে চিনি না। এতদিন কোথায় ছিল! ২২ বছর পর এসে লিখেছে বেয়াদব মেয়ে। প্রধানমন্ত্রী এসব কেয়ার না করতে বলেছেন। আই ডোন্ট কেয়ার। এসব আমার পদন্নোতিকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য উপনাস লিখছে।’ উল্লেখ্য এর আগে নাট্যাচার্য প্রয়াত সেলিম আল দীনের বিরুদ্ধে (#me too) ‘মি টু’ হ্যাশট্যাগে মুশফিকা লাইজু নামে সাবেক শিক্ষার্থী যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন। তিনি ও তার ফেসবুকে লিখেন ৩১ বছর আগে ১৯৮৭ সালে একাডেমিক কাজে সেলিম আল দীনের বাসায় গেলে তাকে জোর করে চুমা দেয়ার চেষ্টা করেন এবং তার গায়ের কোর্টের বোতাম খোলার চেষ্টা করেন। পরে তিনি পালিয়ে বাচঁলেও পরে বিভাগের ক্লাস থেকে তাকে অকারণে বের করে দিত এবং এসাইমেন্টে ০ দিত। তিনি আরও দাবি করেন তার প্রতি এই যৌন হয়রানীর কথা তৎকালীন তার বিভাগের সবাই জানত। অবশ্যই সেলিম আল দীনের ভক্ত অনুরাগীরা এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ আন্দোলনের অন্যতম নেতা নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা বলেন, নারীর প্রতি যৌন হয়রানির রোধে আইন আছে কিন্তু সেই আইন প্রয়োগের ব্যবস্থা সারা পৃথিবী ব্যাপী অপ্রতুল। তাছাড়া যারা আইন প্রয়োগ করবেন তারা সবসময় নারীর প্রতি সহানুভূতিশীল নন। সেই কারণে আজকের এই ‘মি টু’ আন্দোলন। নারীর জন্য উপযুক্ত পরিবেশের ঘাটতি শুধূ জাহাঙ্গীরনগর নয় সারা দেশে এমনকি সারা বিশ্বেই রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, যখন এই ঘটনাগুলো ঘটতে থাকে তখন নারীর জন্য একটা উপযুক্ত পরিবেশ আমরা তৈরী করতে পারি নি। সেটা আমাদের ব্যর্থতা। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে সে অভিযোগ তদন্ত করে অভিযুক্তকে চিহ্নিত করা এবং নারী শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যা অর্জনের একটা উপযুক্ত পরিবেশ নির্মাণে আমাদের কাজ করে যেতে হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসকে