বুধবার, ০১ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
হিন্দুরা নয়, আগস্টের পর ভারতে বেশি গেছেন মুসলিমরা বছরের প্রথম দিনে রাজধানীর বায়ু ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ ইইউতে ফিরতে ফ্রান্সের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে চায় তুরস্ক ২০২৪ সালে গণপিটুনিতে নিহত ১২৮ জন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি বাতেন, সম্পাদক সাইফুল আজ ১১ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না রাজধানীর যেসব এলাকায় ভূমি বিষয়ক সকল হয়রানি দূর করার অঙ্গীকার ভূমি মন্ত্রণালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বহিষ্কৃত সমন্বয়ক গ্রেফতার নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানালেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা উচ্ছ্বাস-উল্লাসে নতুন বছর উদযাপন পুলিশের জ্যাকেট পরে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে সাংবাদিক সজীবকে সিলেটের বিপক্ষে টস জিতে ব্যাটিংয়ে রংপুর রিজার্ভ চুরির অর্থ দেশে ফেরাতে ফিলিপাইনের সহযোগিতা চাইলেন রাষ্ট্রপতি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে কমিশন বদ্ধপরিকর: সিইসি ছাত্রশিবিরের নতুন কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পেলেন ১২ কর্মকর্তা ১৯ জন উদ্ধার না হতেই ফের ৭ অপহরণ! স্লোগানে উত্তাল শহীদ মিনার, শেখ হাসিনার ফাঁসি দাবি নতুন বছরে দেশবাসীর জন্য তারেক রহমানের বার্তা ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে শামীমের লড়াই, তবু খুলনার কাছে হার চট্টগ্রামের

মিলের বর্জ্যে মৎস্য ধ্বংস, কৃষি উৎপাদন ও জীববৈচিত্র হুমকিতে

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় সোমবার, ৫ মার্চ, ২০১৮
  • ৭৫৫ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ, রবিউল কবির মনু, গাইবান্ধা প্রতিনিধি : গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রাজা পেপার এন্ড বোর্ড মিলস্ লিমিটেডের রাসায়নিক বিষাক্ত বর্জ্যসহ কাগজ তৈরীর মন্ড’র দুষিত নির্গমণকৃত তরল পদার্থ ড্রেনেজ লাইনের মাধ্যমে কয়েক শত বছরের পুরানো একটি খালে ফেলায় চরম পরিবেশ বিপর্যয় ঘটেছে। ফলে খালের প্রায় ১০ কিঃমিঃ এলাকায় মৎস্যকুল ধ্বংস ও কৃষি উৎপাদন বন্ধ সহ জীববৈচিত্রে বিরুপ প্রভাব পড়ায় নির্গমণকৃত বর্জ্যরে উৎকট  র্দূগন্ধে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে গ্রামবাসীসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজা পেপার এন্ড বোর্ড মিলস্ লিমিটেড কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছারপত্র দেখাতে পারেনি।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ১৩নং কামারদহ ইউনিয়নের কামারদহ মৌজার দুই শতাধিক মানুষের গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক বরাবরে করা লিখিত অভিযোগের অনুসন্ধানে জানা যায়, বগুড়া জেলা সদরের রাজা সিএনজি ফিলিং ষ্টেশনের মালিক মেজবাউর রহমান রন্টু একদেড় বছর আগে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামারদহ ইউনিয়নের কামারদহ মৌজার চাঁপরীগঞ্জ বাজার এলাকায় রংপুর-ঢাকা মহা সড়কের পশ্চিম পাশে কয়েক একর কৃষি জমি ক্রয় করে একটি পেপার মিল স্থাপনের কাজ শুরু করেন। এ পেপার মিলের দক্ষিণ সীমানা ঘেষে বেশ কয়েক বছর থেকে একটি জুট মিল চালু আছে। এ জুট মিলের কারণে পরিবেশে যেমন বিরুপপ্রভাব পড়েনি তেমনি স্থানীয় লোকজনের কর্মসংস্থান হওয়ায় খুশি এলাকাবাসী। এ পেপার মিলটি স্থাপনের সময়ও এলাকাবাসী খুশি ছিল এলাকার আরো কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হবে এবং হয়েছেও তাই। কিন্তু বিগত ২০১৭ সালের শেষের দিকে হঠাৎ করে পেপার মিলটি উৎপাদনে গেলে কিছু দিনবাদেই এলাকাবাসীর মাঝে খুশি ভাব ফিকে হতে থাকে।

কারণ হিসেবে অভিযোগকারী এলাকাবাসী জানান, পেপার মিলের মন্ড তৈরীর সমস্ত রাসায়নিক বিষাক্ত বর্জ্য সরাসরি ফেলা হচ্ছে পেপার মিলের পিছনে পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কয়েশ বছরের পুরানো গজারিয়া খালে । এলাকাবাসীর পক্ষে কলেজ শিক্ষক মোঃ আব্দুল জলিল জানান, বগুড়া করতোয়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মহাবালা থেকে গজারিয়া নামে একটি খাল গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামারদহ ইউনিয়নের ঘোড়ামারা হয়ে মোগলটুলি, কামারদহ, চাঁপরীগঞ্জ, ব্যাপারীপাড়া, ছাওয়ালদহ, চামুরগাছা পার্বতীপুর হয়ে আবারো বগুড়া জেলায় প্রবেশ করে মুল করতোয়ায় মিলিত হয়েছে।

এ খালের স্বচ্ছ পানি দিয়ে বিভিন্ন ফসল ও সবজি ক্ষেতে সেচ দেয়া সহ খালের কিনারে বোরো ধানের বীজ তলা তৈরী করতো এলাকার কৃষকরা। আর খালের পানিতে পাওয়া যেত বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ। বাস করতো বিভিন্ন জলজ প্রাণি।

পেপার মিলটি চালু হওয়ার পর নির্গমণকৃত তরল পদার্থ  খালের পানির সাথে মিশে একেবারই বিবর্ন হয়ে গেছে। বিষাক্ত  বর্জ্যরে প্রভাবে নিধন হয়েছে মাছসহ সকল জলজ প্রাণি, সেচ কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছেনা খালের পানি, মাটির উপর মোটা রাসায়নিক স্তর পরায় খালের কিনারে বোরো ধানের বীজতলা তৈরী করা সম্ভব হয়নি। এর সাথে যুক্ত হয়েছে উৎকট র্দূগন্ধ। পেপার মিলটির দক্ষিণ পাশে একশ গজ দুরে এ খালের ধারে ষাটের দশকে স্থাপিত চাঁপরীগঞ্জ এস এম ফাজিল মাদ্রাসা, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কেজি স্কুল, একটি জামে মসজিদ ও শতাধিক দোকান পাট নিয়ে একটি বাজার।

যুগযুগ ধরে দুষণ মুক্ত পরিবেশে বসবাসকারী এলাকার বাসিন্দারা হঠাৎ করে রাজা পেপার এন্ড বোর্ড মিলস্ লিমিটেডের সৃষ্ট রাসায়নিক বিষাক্ত বর্জ্য দুষণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে অনুরুপ অভিযোগের প্রেক্ষিতে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার দপ্তরের পক্ষ থেকে তদন্ত করেছেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা ফারুকুল ইসলাম। তিনি বলেন, অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

এক সংবাদকর্মীকে নিয়ে সরেজমিনে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। এর পর প্রতিবেদক নাম পরিচয় হীন এ স্থাপনায় প্রবেশ করতে চাইলে প্রধান ফটকে নিরাপত্তা কর্মীরা অপর প্রান্ত থেকে পরিচয় জানতে চান। পরিচয় দেয়া হলে ভিতর থেকে অনুমতি পাওয়ার পর গেট খুলে দিয়ে নিরাপত্তা কর্মীরা আগমনের উদ্দেশ্য জানতে চান । ইনচার্জ কে আছেন তার সাথে কথা বলতে চাই বলতেই এক ব্যক্তি এসে আমাদের অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে বসতে দিয়ে বলেন, কি জানতে চান? স্যারেরা তো কেউ নেই আমরা কিছু বলতে পারবোনা।

এ স্থাপনায় কি হয় প্রতিবেদক প্রশ্ন করলে তিনি বলেন এটি একটি “পেপার মিল” বলা শেষ না হতেই আরেক ব্যক্তি কক্ষে প্রবেশ করলে তিনি চেয়ার থেকে দাড়িয়ে বলেন স্যার এনারা এসেছেন কথা বলতে। প্রতিবেদক নাম সহ পদবী জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার নাম নুরুল ইসলাম দেখাশোনা করি। মিল-কারখানায় দেখাশোনা করি এমন পদবীতো কখনো শুনি নাই পাল্টা প্রশ্নের উত্তরে একই কথা আপনি না শুনলেও আমি সব দেখাশোনা করি। এরপর তিনি জানান, মিলটির নাম “রাজা পেপার এন্ড বোর্ড মিলস্ লিমিটেড”।

সাইন বোর্ড নেই কেন? লাগানো হয়নি। পরিবেশ দুষণের অভিযোগ জানিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছারপত্র আছে কিনা জানতে ও দেখতে চাইলে তিনি জানান, এখানে নেই আমাদের বগুড়া অফিসে আছে। এ পেপার মিলের মালিক বগুড়া জেলা সদরের রাজা সিএনজি ফিলিং ষ্টেশনের মালিক মেজবাউর রহমান রন্টু। মিলের উৎপাদন কার্যক্রম দেখতে চাইলে তিনি বলেন, না কারখানায় যাওয়া যাবেনা।

কারন জানতে চাইলে তিনি জানান, মালিকের নিষেধ আছে। এটাকি কোন বিধিবদ্ধ সংরক্ষিত এলাকা প্রশ্ন করা হলে কিছুক্ষন নিরব থেকে তিনি বলেন, দেখতে পারেন তবে কোন ছবি তুলতে পারবেন না। প্রতিবেদক তার কথায় রাজি হয়ে কারখানার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে একটু সামনে যেতেই নজরে পড়লো  কারখানার সামনে ফাকা মাঠ ও গোডাউনে স্তুপ করে রাখা হয়েছে সরকারি ভাবে প্রকাশিত শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যের বিভিন্ন শ্রেণির নতুন পুরাতন পাঠ্য পুস্তক।

পাঠ্য পুস্তক এভাবে কেন দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা নুরুল ইসলাম জানান, এগুলো দিয়েই নতুন কাগজ ও বোর্ড তৈরী করা হয়। পাঠ্য পুস্তক আপনারা কি ভাবে পান জবাবে তিনি জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে আমাদের এজেন্ট আছে তাদের মাধ্যমে প্রতি কেজি পাঠ্য পুস্তক ১০/১২ টাকায় ক্রয় করি। এরপর মিলটি আংশিক পরিদর্শন করিয়ে তরিঘরি আমাদের বিদায় দেয় এবং বলেন অনেক বড় বড় সাংবাদিকদের সাথে তাদের খাতির আছে। দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা নুরুল ইসলামের শেষ কথা আবার আসলে গেটে বলবেন মামার সাথে দেখা করতে চাই।  আমি মিল মালিকের মামা হই, আমিই সব দেখাশোনা করি।

 

বাংলা৭১নিউজ/জেএস

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৪ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com