বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: #মিটু নিয়ে সবাই যখন সরব, তখন এই ইস্যু নিয়ে মুখ খুললেন আরেক নারী সাংবাদিক আলফা আরজু। তিনি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) কার্যনির্বাহী কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেছেন। আজ বুধবার তিনি তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে এ প্রসঙ্গে লিখেছেন।
তার এই লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হল:
এক বুক আশা নিয়ে -বছর চারেক ঢাকা বিশবিদ্যালয় সাংবাদিকতা বিভাগে অনার্স-মাস্টার্স পড়ে- আরও পাঁচ বছর একটি নতুন ইংরেজী পত্রিকায় কাজ করে – ভালো বেতন নিয়ে একটা স্বপ্নের পত্রিকায় গিয়ে জয়েন করেছি….
এই পত্রিকা নিয়ে আমার ব্যাপক আদিখ্যেতা ছিলো। রাস্তাঘাটে কোথাও – এই পত্রিকার নাম দেখলেই – কেমন জানি – বুকের মধ্যে – হুঁহুঁ কইরা ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা আসতো।
সেই পত্রিকার লোগো দেখলে – কেমন প্রেম প্রেম ভাব আসতো। যাই হউক, দীর্ঘ পাঁচ বছর হাতে কলমে – রিপোর্টিং শিখে – সেই স্বপ্নের পত্রিকার দ্বারস্থ হলাম – আমার ঢাবি’র সাংবাদিকতা বিভাগের এক “সিনিয়র ভাই”য়ের মাধ্যমে।
সেই স্বপ্নের পত্রিকার – নিয়োগের দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যে – লিখিত পরীক্ষাও ছিলো। সেইসব কাহিনী শেষ করে – একদিন পেলাম – আমার স্বপ্নের পত্রিকায় কাজ করার নিয়োগ পত্র’টি।
তারপর….সেই দিন থেকেই রচিত হলো – আমার স্বপ্নের পেশায় যাত্রার ইতিও……
[বলে রাখা ভালো – আমি ওই সময় আমার দ্বিতীয় সন্তানের মা হয়েছি। আমার বাবাকে (দীর্ঘদিন অসুস্থ) বেশীর ভাগ সময় হাসপাতালে ভর্তি রাখতে হয়। আমার পারিবারিক গোলযোগের শুরু …। আমার “আর্থিক ও পারিবারিক দায়িত্ত্ব” এতো বেশী – আমি তখন হিমশিম খাচ্ছি। বড়লোকি ভাব আছে – কিন্তু….উপার্জনের জন্য – আমার জান যাচ্ছে-যাই করছে]
সেই স্বপ্নের পত্রিকায় – যাত্রার শুরুর দিন থেকেই দেখছি – সেখানে “নারী সাংবাদিক”দের মোটামুটি নাজুক অবস্থা (আমার সাবেক নারী সহকর্মীরা কেও কেও প্রতিবাদ করতে পারেন – এটা আমার observation – ভুল হতেও পারে!)। ভালো কোনো বিটে কাজ দেয়া হয় না, সারাক্ষন কিছুই পারে না ধরণের কথাবার্তা ইত্যাদি ইত্যাদি…। ওই পত্রিকার একজন বিখ্যাত বার্তা সম্পাদক (এনাম আহমেদ, বর্তমানে ওই পত্রিকার Executive Editor- Online) – যিনি মোটামুটি প্রকাশ্যে নারীদের নিয়ে আজেবাজে মন্তব্য করতেন। কেও কিচ্ছু বলার নাই।
কারণ, চাকরী’টা আমাদের সবার বড্ড প্রয়োজন।
ওই বস – জুনিয়র পুরুষ সহকর্মীদেরকে বলতেন। “কি রে তোরা কি সব (কুৎসিত) নারী সাংবাদিক অফিসে কাজ দিতে নিয়ে আসিস (চেহারা সুরুৎ একটু সুন্দর দেইখা আন্তে পারোস না !)” কারণ বর্ননা করলাম না – একজন নিপীড়কের কাজ ও কথার বর্ননা – দিতে আমি অক্ষম।
আমার সেই স্বপ্নের পত্রিকার চীফ রিপোর্টারের (রেজাউল করিম লোটাস, বর্তমানে ওই পত্রিকার Diplomatic Correspondent) সাথে – আপাতদৃষ্টিতে আমাদের সকল (নারী-পুরুষ নির্বিশেষে) রিপোর্টারদের ভালো সম্পর্ক। তাই, কোনোদিন – কোনো খারাপ কিছু মাথায় আসেনি। অথবা উনার খারাপ কোনো ইনটেনশন থাকতে পারে- ভাবিনি। যাই হউক, একদিন রাতে কাজ শেষে – সেই চিফ রিপোর্টারের গাড়িতে – বাড়ি পৌঁছে – দিবেন বললেন। আমি সহজ ভাবেই – বললাম – চলেন।
গাড়িটা উনার ড্রাইভার চালাচ্ছিলেন। পিছনের আসনে – চীফ রিপোর্টার ও আমি। আমার বাসার কাছাকাছি আসার পর – সেই লোক – হটাৎ করে – আমার শরীরের….নাহ বলতে পারছি না। সেই বিভিষীকাময় ছোঁয়া – আমার স্বপ্নের পত্রিকায় কাজের স্বপ্ন ভেঙে দিলো।
পর দিন সকালে উঠেই – অন্য আরেক ইংরেজী পত্রিকার সম্পাদকের কাছে গেলাম ও job ঠিক করে বাড়ী ফিরেছিলাম।
বাকীটা হলো ইতিহাস:- আমি এখন রিকশা চালাই – ঢাহা শহরে (পড়ুন -বৈদেশে)।
পাদটীকাঃ লন, clue দিলাম – আরও একজন নারী – চরিত্রের “চুল-চেরা” বিশ্লেষণ করেন।
#MeToo একজন মানুষের তিক্ত যৌন নিপীড়ণের অভিজ্ঞতাগুলোর একেকটা বর্ননা মাত্র। নিপীড়িতের মুখ বন্ধ করার ষড়যন্ত্রে এক হওয়া-না হওয়া আপনার ব্যাক্তিগত ব্যাপার।
বাংলা৭১নিউজ/সূত্র:ফেসবুক/এসএস