গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইনে বিভিন্ন কেন্দ্রে সামাজিক সুরক্ষার কোনো বালাই নেই। কেউ কোনো নিয়ম মানছেন না। যে যার মতো আসছেন আর জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে টিকা নিয়ে যাচ্ছন। শুধু সাধারণ মানুষই নয়, স্বয়ং সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরিফুজ্জান নিজেও মাস্ক ছাড়া টিকাদান কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন।
সরেজমিনে দেয়া যায়, উপজেলার উপজেলার ১০ নম্বর বোনারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইন দুর্গপুর শাহজাহান আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সকাল ৯টায় অনুষ্টিত হয়। তবে টিকাদান কেন্দ্রে অধিকাংশকেই সামাজিক দূরত্ব মানতে দেখা যায়নি। অনেকের মুখে মাস্কও ছিল না। বিষয়টি সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরদার মোস্তফা শাহিনকে মোবাইল ফোনে জানানো হয়।
এর কিছুক্ষণ পর এই কেন্দ্রে আসেন সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পা কর্মকর্তা ডা. আরিফুজ্জামান। তিনি এসে কেন্দ্রে নারী ও পুরুষদের বুথগুলো পরিদর্শন করেন। কিন্তু এসময় তার মুখে মাস্ক ছিল না। এতে উপস্থিত অনেকেই এর সমালোচনা করেন।
দুর্গাপুর গ্রামের আব্দুল মজিদ বলেন, ‘হামরা গরিব মানুষ, হামরা মাস্ক কিনবার পারি না বলে মাস্ক পরি না। তবে যার ওপর আমাদের দেখভালের দায়িত্ব তার মুখেও তো মাস্ক নেই। এটা কেমন কথা?’
বোনারপাড়া ইউনিয়নের জিহাদ সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাস্ক ছাড়া কেন্দ্র পরিদর্শন করলেন, তাহলে সাধারণ জনগণ সচেতন হবে কিভাবে?’
কোভিড-১৯ টিকা নিতে আসা যুবক শওকত আলী বললেন, ‘মাস্ক ছাড়াই করোনার টিকা নিলাম। কেউ বাধা দেয়নি। টিকা নেয়ার পর কী করণীয় এ বিষয়েও কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি।’
নিয়ম অনুযায়ী, টিকা নেয়ার পর কেন্দ্রে আধাঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। এসময় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট টিকাদানকর্মীকে জানাতে হবে। তবে দেখা গেছে, অনেকেই কেন্দ্রে অবস্থান না করেই চলে যাচ্ছেন।
এমন দৃশ্য দেখার পর পুরুষদের টিকাদান বুথে দায়িত্বরত সরোয়ার হোসেন নামের একজন স্বাস্থ্যকর্মীকে বিষয়টি জানালে তিনি সাংবাদিকের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ছবি তুলতে বাধা দেন।
মাস্ক ছাড়া কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইন পরিদর্শনের বিষয়ে জানতে চাইলে সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান বলেন, ‘আসলে সবাই মাস্ক পরুক এটা আমি আশা করি। আমারও মাস্ক পরা দরকার ছিল।’
সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, ‘ওনারাই করোনাকালীন প্রথমসারির যোদ্ধা। হয়তো অনিচ্ছাকৃতভাবে এটা হয়েছে। তবে এমন ঘটনা আসলেই দুঃখজনক।’
এ বিষয়ে মন্তব্য নিতে গাইবান্ধার সিভিল সার্জন আ খ ম আকতারুজ্জামানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি ।
উলেখ্য, শনিবার সকাল ৯টায় করোনা প্রতিরোধে দেশব্যাপী গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গাইবান্ধায় টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক আব্দুল মতিন। এসময় পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম, সিভিল সার্জন আ খ ম আখতারুজ্জামান, পৌরমেয়র মতলুবর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গাইবান্ধা জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধার সাত উপজেলার ৮২টি ইউনিয়ন ও তিনটি পৌরসভায় প্রতিটি কেন্দ্র ৬০০ জন করে একযোগে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। বিকেল ৩টা পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলে।