নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ আরও কয়েকটি দল নির্বাচনের প্রস্তুতি নিলেও বিএনপির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনও ঘোষণা আসেনি। দলটি সরকার পদত্যাগের ‘এক দফা’ দাবিতে নিয়মিত কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে, নির্বাচনের আগে বিএনপির নেতাকর্মীরা আছেন অনেকটা ‘দৌড়ের’ ওপর। কারণ, সম্প্রতি দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই সঙ্গে পুরনো মামলাগুলোর রায় দিচ্ছেন আদালত।
চলতি বছরের ৯ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ৩০ মামলায় বিএনপির মোট ৫৪৬ নেতাকর্মীকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। দলটির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, মামলা আর সাজার বেড়াজালে আটকে গেছে বিএনপি! বিএনপিকে নির্বাচন বাইরে রাখতেই দ্রুত রায় দেওয়া হচ্ছে।
রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারসহ ১২ জনকে সাত বছরের সাজা দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাদের ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের সাজা দেওয়া হয়েছে।
তবে, অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এর মধ্যে আটজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। দণ্ডিত উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিরা হলেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন আনোয়ার, হায়দার আলী বাবলা, ইমরান, সেন্টু ও নাসুম।
রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানার মামলায় ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম জাহাঙ্গীরসহ ৭৫ জনকে পৃথক তিন ধারায় আড়াই বছরের সাজা দিয়েছেন আদালত। ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুল হক এ রায় ঘোষণা করেন। তবে, অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় দুজনকে খালাস দেন আদালত।
এর আগে, কারাগারে আটক জাহাঙ্গীরসহ তিনজনকে আদালতে হাজির করা হয়। তাদের উপস্থিতিতে আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। অন্য ৭৩ আসামি পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পলাতক আসামিদের মধ্যে কেউ মারা গেলে তাদের বিরুদ্ধে সাজা কার্যকর হবে না বলে উল্লেখ করেন বিচারক।
নাশকতার অভিযোগে ২০১৩ সালের নভেম্বর রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানায় এ মামলা করে পুলিশ। তদন্ত শেষে পুলিশ ৭৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেয়।
রাজধানীর লালবাগ থানার মামলায় পৃথক দুই ধারায় বিএনপির ৫০ জন নেতাকর্মীকে ৩ বছর ৩ মাসের কারাদণ্ড দেন আদালত। পাশাপাশি ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায় তিন মাসের সাজা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ২৪ জনের খালাস দেন আদালত।
দণ্ডপ্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- হাজি আলতাফ হোসেন, মোশারফ হোসেন ওরফে কালা খোকন, জামালুর রহমান চৌধুরী, শফিউদ্দিন আহমেদ সেন্টু, মো. সাইদুল ইসলাম, জিয়ার আলী তাইয়্যন, সাঈদ হোসেন সোহেল ওরফে ক্যাপ সোহেল, হাজি ফয়সাল, আরমান হোসেন বাদল, মো. জুম্মন, ফয়সাল আহম্মেদ, মো. তাজু, মো. রাসেল, রমজান আলী, মো. জিয়া, তাসাদ্দেক হোসেন বাবলু, মো. শামীম ও মুজিবুর রহমান।
নাশকতার অভিযোগে ২০১৩ সালের নভেম্বরে রাজধানীর লালবাগ থানায় এ মামলা করে পুলিশ। তদন্ত শেষে পুলিশ ৭৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেয়।
রাজধানীর বংশাল থানার মামলায় বিএনপির ৬২ নেতাকর্মীকে পৃথক দুই ধারায় সাড়ে তিন বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শেখ সাদী এ রায় ঘোষণা করেন। পাশাপাশি তাদের অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়েছে। নাশকতার অভিযোগে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বংশাল থানায় এ মামলা করা হয়।
অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (অ্যাব) সভাপতি প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম বিজু বলেন, বর্তমান সরকার বাংলাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের মাধ্যমে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। তারা দেশজুড়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা ও দ্রুত সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠাচ্ছে। বিষয়টি নিন্দনীয় ও ন্যক্কারজনক। এভাবে দেশ চলতে পারে না। এরকমভাবে গুম-খুন, মামলা-হামলা, গ্রেপ্তার-নির্যাতনসহ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালালে দেশে কোনও ভাল মানুষ থাকতে পারবে না। দেশ মেধাশূন্য হয়ে যাবে।
তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, শাহজাহান ওমর, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আমান উল্লাহ আমান, মো. হাবিবুর রহমান হাবিব, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, আমিনুল ইসলাম, মো. জাকির হোসেন, প্রকৌশলী আহমেদ হোসাইনসহ সকল রাজবন্দিকে দ্রুত মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানান।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ