ভারতের উত্তরাখণ্ডে ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসের কারণ হিসেবে পরিবেশের ওপর মানুষের আগ্রাসনকেই দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। স্রোতের বিপরীতে নদীর ওপরে বাঁধ নির্মাণ, বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন পরিবেশ ও ভূগোলবিদেরা।
খোদ বিজেপি নেতারাই তাদের সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। স্থানীয় বাসিন্দারাও সমালোচনা করে জানান প্রতিনিয়তই তারা দিন পারছেন আতঙ্কে।
রোববার (০৭ ফেব্রুয়ারি) প্রচণ্ড বৃষ্টির পর হিমবাহ গলে তুষারধস নামে উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায়। এতে সৃষ্টি হয় জলোচ্ছ্বাসের। ভেঙে যায় বাঁধ, মুহূর্তেই লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় পুরো এলাকা, ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিদ্যুৎকেন্দ্রও। প্রচণ্ড শীত ও পাহাড়ি এ এলাকায় বাঁধ আর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সমালোচনা চলছিল বেশ কয়েক বছর ধরেই। বাঁধ দিয়ে ওই অঞ্চলের প্রকৃতির শাসনকে মেনে নিতে পারেননি অনেকেই। এবার বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে এ বিষয়টি নিয়েই তোপ দাগলেন, দলটির নেত্রী ও সাবেক জলসম্পদ, নদী উন্নয়ন মন্ত্রী উমা ভারতী। তিনি জানান, এ থেকে শিক্ষা নিয়ে গঙ্গার ওপর বিদ্যুৎপ্রকল্প স্থগিত করা উচিত।
উত্তরাখণ্ডের রাজধানী দেরাদূন থেকে তপোবন বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ২৮০ কিলোমিটার পূর্বে। তিন হাজার কোটি রুপি ব্যয়ে তৈরি হচ্ছিল ৫২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ওই কেন্দ্রটি। এই দুর্যোগ ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতিও ডেকে এনেছে।
ভারতীয় নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র বলেন, উত্তরাখণ্ডের ওই এলাকা এমনিতেই ভূতাত্ত্বিকভাবে খুব সংবেদনশীল। শীতের শেষে এমন তুষারধস একেবারে অস্বাভাবিকও নয়। কিন্তু কয়েক দশক আগেও এমন ভয়াবহ বিপর্যয় হতো না। যখন থেকে মানুষ নদীর ঢাল নিজের খুশি মতো বদলে দিতে এবং নদীগর্ভ দখল করতে শুরু করলো, তখন থেকেই এই বিপদের শুরু। এই বিশ্লেষক আরো বলেন, শুষ্ক মৌসুমে নদী যতটুকু জায়গা দিয়ে বয়ে যায় সেটুকুই শুধু নদী নয়। নদীর দুপাশে প্লাবনভূমি থাকে। সেটাও তার জল বয়ে যাওয়ার জায়গা। সেখানে দখল করে নির্মাণ করলে এমন বিপর্যয় ঘটবেই।
এই সংকটের পর আশপাশের নদীগুলোর পানি বাড়ছে। এখন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটছে স্থানীদের। ভারতের কেন্দ্রীয় বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সোমনাথ ভট্টাচার্য জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হিমবাহের ওপরে পড়ছে। এখনই কার্যকরী ব্যবস্থা না নিলে আগামীতে আরও ভয়াবহ হতে পারে পরিস্থতি। যার প্রভাব পড়বে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে।
বাংলা৭১নিউজ/এবি