বাংলা৭১নিউজ, জাহাঙ্গীর ভুঁইয়া, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জে বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার ১২ টায় যমুনার পানি বিপদসীমার ৭২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। জেলার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ইতোমধ্যে পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে।বন্যা প্লাবিত এলাকায় এখনও কোন ত্রাণ সামগ্রী পৌছায়নি।ফলে বন্যাকবলিত লোকজন চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে।
জানা গেছে, বন্যার কারণে জেলার ৭৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৮ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ও মাদ্যাসা পাঠদান বন্ধ রয়েছে।ধসে যাওয়ার আশংকায় আরিচা-পাটুরিয়া রোডে সরাসরি যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।জাফরগন্ঞ্জ থেকে পাটুরিয়া পর্যন্ত পদ্মা-যমুনার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাধে কয়েকটি স্থানে ফাটলসহ বেশ কয়েকটি স্থানে পানি উপচিয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এলাকার জনপ্রতিনিধিরা বালির বস্তা ফেলে পানি ঠেকানো ও বাধ রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
পদ্মা – যমুনার তীরবর্তী ৪টি উপজেলার অভ্যন্তরে খাল-নদী-নালা বেয়ে দ্রুত বেগে পানি প্রবেশ করছে। শিবালয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন কান্ঞ্চন ও ফারুক খান জানান, বন্যার পানির চাপে আরিচা-পাটুরিয়া বন্যা নিয়ন্ত্রন বাধের এলাচিপুর এলাকায় ফাটল দেখা দিয়েছে, অন্বয়পুর এলাকায় বাধ উপচিয়ে ভিতরে পানি প্রবেশ করছে। এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে বালির বস্তা ফেলে বাধ রক্ষার প্রাণপণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
বন্যাকবলিত পদ্মা-যমুনা তীরবর্তী দৌলতপুর, ঘিওর, শিবালয় ও হরিরামপুর চারটি উপজেলার চরাঞ্চলের প্রায় ৫০ হাজার লোক পানি বন্দী হয়ে পড়েছে।এছাড়া যমুনার শাখা নদী পুরাতন ধলেশ্বরী,ধলেশ্বরী, কালীগঙ্গা,ইছামতি, কান্তাবতীতে সমানতালে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।পাশাপাশি পানির তীব্র স্রোতের কারণে এসব নদীর তীরবর্তী
অনেক বাড়িঘর ভাঙনের কবলে পড়েছে।কালীগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ইতোমধ্যে মানিকগন্ঞ্জ সদর উপজেলার অনেক বাড়িঘর, গ্রাম, জনপদ পানিতে নিম্মজিত হয়েছে। শত শত আবাদি পুকুর পানিতে ভেসে গেছে। মাছ চাষিরা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে দিশেহারা।
আরিচা ঘাটের কাছে পিডিবির আরিচা পিসিপোল কারখানা,গবাদি পশুর হাট, লঞ্চঘাট সড়কসহ পার্শ্ববর্তী গ্রাম এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় পিসিপোল কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে ওপশুর হাটে এবার কোরবানির পশু বিক্রয় শুরু করতে পারেনি হাট কতৃপক্ষ।আরিচা ঘাট সংলগ্ন বাজার টার্মিনালে এবং শিবালয় নতুন পাড়ায় নদীর পানি সরাসরি প্রবেশ করেছে।আরিচার ৪ নং ঘাটে অবস্থিত বিকল্প লন্ঞ্চ ঘাট পন্টুনের সামনে ভেসে যাওয়ায় যাত্রীরা সাকো বেয়ে ঝুকি নিয়ে লন্ঞ্চে উঠানামা করছে। পাটুরিয়ার ৩ নং ফেরিঘাটের একাংশ পানিতে ভেসে যাওয়ায় ফেরিতে যানবাহন উঠানামা বিঘ্নিত হচ্ছে।
এদিকে নদীর স্রোত বৃদ্ধি পাওয়ায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ার মধ্যে ফেরী চলাচলে দ্বিগুনেরও বেশি সময় লাগছে। ফলে উভয় ঘাটে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
যমুনার চরাঞ্চলে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ এখন সম্পূর্ণরুপে পানি বন্ধি অবস্থায় রয়েছে। বানভাসি লোকজন উচু স্থানে আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন। বন্যার বাস্তব পরিস্থিতি দেখার জন্য স্ব-স্ব এলাকার জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তারা বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করলেও বন্যার্ত্য মানুষের কাছে কোন ত্রান সামগ্রী তুলে দিতে পারেননি।
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক নাজমুছ সাদাত সেলিম জানান, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
দৌলতপুর, শিবালয় ও হরিরামপুর উপজেলার চরাঞ্চলের বেশির ভাগ বাড়িতেই পানি উঠে যাওয়ায় লোকজনের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য দৌলতপুরে ১০ টন চাল ও ৭৫ হাজার টাকা,
শিবালয়ে ৫ টন চাল ও ৫০ হাজার টাকা এবং হরিরামপুরে ৫ টন চাল ও ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বন্যাকবলিত মানুষের তালিকা তৈরির কাজ চলছে।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস