বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: বন্যার কারণে আটকে গেছে মানিকগজ্ঞ সরকারি মেডিকেল কলেজ ও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণের কাজ। ৩৯১ কোটি টাকা ব্যয় সম্বলিত এই প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার ব্যপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ রয়েছে। সে মোতাবেক চলতি বছরের মে মাস থেকে ২০ একর জমির উপর এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। আগামী ২০২০ সালের মধ্যে এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্পের কাজের উদ্ধোধন করেন।
সরজমিনে দেখা যায়, বন্যার কারণে পুরো প্রকল্পটিই পানির নিচে। চারিদিকে বাউন্ডারি দেয়াল এবং মহিলা ও পুরুষ হোস্টেল নির্মাণের যে কাজ ধরা হয়েছে তার রডগুলো পানির উপর দিয়ে দেখা যাচ্ছে। আর একাডেমিক ও ভবণ ও হাসপাতালের দরপত্র অনুমোদনাধীন রয়েছে।
বন্যার পানি নামতে আরও অন্তত ১৫ দিন লাগবে। আর পানি নামার পরও এই প্রকল্পের কাজ অন্তত ৩ মাসের আগে শুরু করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন গনপূর্ত অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট জেলা প্রকৌশলী। আর আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস মোতাবেক যদি চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে দিকে পানি আরও এক দফা বৃদ্ধি পায় তাহলে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ আরও পিছিয়ে যাওয়ার শঙাকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মানিকগজ্ঞ শহরে গণপূর্ত অধিদপ্তর বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করছে। এই প্রতিষ্ঠানটির মূল লক্ষ্যই হচ্ছে-সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠাণের ইমারত নির্মাণ করা। সুনামের সাথেই প্রতিষ্ঠানটি তার জন্মলগ্ন থেকে বিভিন্ন মন্ত্রনালয় ও অধিদপ্তরের নির্মাণ কাজ করে আসলেও ২০০০ সালের পর থেকেই তাতে ছন্দ পতন ঘটে। এলজিআরডি এবং শিক্ষা মন্ত্রনালয় তাদের ভবণ নির্মাণের কাজগুলো নিজেরাই করা শুরু করে।
এছাড়াও বেশ কযেকটি প্রতিষ্ঠাণ ভবণ নির্মাণ কাজ নিজেরা শুরু করেছিল। পরবর্তিতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের বিচক্ষনতায় অনেক প্রতিষ্ঠানটি ফিরে এসেছে এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরকে তাদেও ভবণ নির্মাণের কাজ দিয়েছে।
এটি হবে দশ তলা ভীত বিশিষ্ট ৫ তলা হাসপাতাল ভবন। আর একাডেমিক ভবনটি হবে ৮ তলা ভীত বিশিস্ট ৬ তলা ভবন। ছাত্র এবং ছাত্রীদের চার তলার পৃথক দু’টি ভবন হবে। এই মেডিকেল কলেজটি চালু হলে মানিকগজ্ঞ ছাড়াও মুন্সিগজ্ঞ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও ঢাকার ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার সুযোগ করে দেবে। এই হাপাতালের সাথে নির্মানাধীন ২৫০ শয্যার মেডিক্যাল ছাড়াও মানিকগজ্ঞে আরও একটি সরকারি হাসপাতাল চালু রয়েছে।
এটিও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট। এই সদর হাসপাতাল ভবণটিও নির্মাণ করেছে গণপূর্ত বিভাগ। প্রায় ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হাসপাতালটি চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে হস্তান্ত করা হয়। বর্তমানে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মানিগজ্ঞে বর্তমানে ৪৬৯ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও প্রায় ১শ’ কোটি টাকার কাজ সম্পন্ন করে চলতি বছর বিভিন্ন সংস্থাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
অন্য যেসব কাজ চলমান রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ১৮ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে শিল্পকলা একাডেমি ভবণ নির্মাণ; যা চলতি বছর ডিসেম্বরে সম্পন্ন হবে। চার তলা বিশিস্ট চীফ জুডিশিয়াল মেজিস্ট্যাট কোর্ট ভবণটি নির্মাণ করা হচ্ছে ৫৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে। এটিও চলতি বছর ডিসেম্বরে হস্তান্তর করা হবে। মোট ৮ তলা বিশিস্ট এই ভবণের আরও ৪ তলা নির্মাণের জন্য সহসাই দরপত্র আহ্বান করা হবে। আর জজ কোর্টের ভািির্টক্যাল এক্সটেনশন করা ভবণটির কাজও শেষ হবে ডিসেম্বরে। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
চলমান কাজের বাইরে চলতি বছর যেসব কাজ সম্পন্ নকরে হস্তহান্তর করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে-টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার, মানিকগজ্ঞ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, মহিলা পুলিশ ব্যারাকরিজিওনাল সার্ভার স্টেশন।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে গতকাল গণপূর্ত বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান মুন্সি বাংলা৭১নিউজকে জানান, গুণগত মানের কারণে গণপূর্ত অধিদপ্তর এখন সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের শীর্ষস্থানে রয়েছে। আমরা এই সংস্থাটি এখন আরও আধুনিক ও উন্নতমানের কাজের নিশ্চয়তা দিচ্ছে। যার কারণে, যারা এখান থেকে চলে গিয়েছিল তারা আবার ফিরে আসছে।
তিনি বলেন, মানিকগজ্ঞ সরকারি মেডিকেল কলেজ ও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণের কাজটি যথাসময়ে সম্পন্ন করার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারমূলক কাজের একটি। এদিকটি আমাদের খেয়াল রয়েছে। প্রয়োজনে আমরা কাজের গতি আরও বাড়িয়ে দেব। যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমরা এই প্রকল্পটি সম্পন্ন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের কাছে হস্তান্তর করতে পারি।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ