মাকড়সার জাল এক আশ্চর্য নির্মাণ। বছরের পর বছর ধরে সেই জালের নকশা, গঠনের বৈচিত্র্য বিজ্ঞানীদের মুগ্ধ করেছে। যোগাযোগ থেকে নির্মাণ, মাকড়সার জালে যেন তথ্যের গভীর সুর মিশে আছে। এমনটাই মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’র অধ্যাপক মার্কাস বুয়েলার। তিনি ও তাঁর গবেষকদল মিলে মাকড়সার জালের থ্রিডি মডেল তৈরি করেছেন। আর সেই জালে সৃষ্টি হওয়া শব্দতরঙ্গকে কাজে লাগিয়ে কম্পিউটারের অ্যালগরিদম দিয়ে তৈরি করেছেন শব্দমালা, যা সত্যি চমকে দেয়!
জালই যেন মাকড়সার পৃথিবী। ওখানে বসেই সে জাল বোনে, ছিঁড়ে গেলে মেরামত করে, শিকার ধরে এবং তারপর ওখানে বসেই তাকে গলাধঃকরণ করে। অধ্যাপক বুয়েলারের কথায়, ‘মাকড়সা এক অদ্ভুত জীব। তারা যা দেখে কিংবা অনুভব করতে পারে, তা মানুষের দৃষ্টিগোচর কিংবা শ্রুতিগোচর হয় না।’ তবে মাকড়সার দৃষ্টিশক্তি যে সার্বিকভাবে খুব উন্নত নয়, সে কথা জানিয়েছেন বুয়েলার।
তাঁর মতে, ‘মাকড়সা খুব ভালো দেখে না চোখে। তারা কম্পনের সাহায্যে অনুভব করে। ওভাবেই তারা প্রকৃতির সঙ্গে, অন্য মাকড়সাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। আমরা মাকড়সাদের কাছ থেকে পাওয়া ওই সব কম্পনকে রেকর্ড করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সাহায্যে সেই কম্পনের চরিত্র বোঝার চেষ্টা করছি। এভাবে মাকড়সাদের ভাষা বোঝাই আমাদের লক্ষ্য।’
মাকড়সার জাল থেকে পাওয়া শব্দ থেকে তৈরি করা হয়েছে ‘নোটস’। একটি বিশেষ যন্ত্র তৈরি করে তার সাহায্যে ওই নোটসের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে ‘সংগীত’! এর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে ভার্চুয়াল রিয়ালিটি। ফলে দর্শকরা অনায়াসে একই সঙ্গে ওই শব্দকে শুনতেও পাবে, সেই সঙ্গে মাকড়সার জালে কেমন কম্পন খেলছে, তা দেখতেও পাবে। বুয়েলারের কথায়, ‘এর ফলে বোঝা সম্ভব হবে প্রকৃতির সঙ্গে মাকড়সার সম্পর্ক কেমন।’
বলা হয়, প্রকৃতির যা কিছু উপাদান, সব কিছুর মধ্যেই রয়েছে নিজস্ব ছন্দ। সে কথাই মনে পড়ে যায় বুয়েলার ও তাঁর সঙ্গীদের এই অভূতপূর্ব উৎপাদন দেখলে। মাকড়সার জালের সরু তন্তুতেও জেগে উঠতে দেখা যায় সংগীতের মায়াজাল!
বাংলা৭১নিউজ/এমকে