মাও সেতুংয়ের জন্মদিনে চীনের আকাশে দেখা গেল গোপন বৈশিষ্ট্যের উন্নত নকশার যুদ্ধবিমান। প্রথমবারের মতো বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) এই বিমান উড্ডয়নের ফুটেজ ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় আগ্রহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চীন বিষয়টি এখনো নিশ্চিত না করলেও কর্মকর্তাদের মৌন সম্মতির বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সিচুয়ান প্রদেশের চেংডুর ওপর দিয়ে ‘পঞ্চম প্রজন্মের’ একটি যুদ্ধবিমান উড়ছে। তবে অনেকেই এটিকে আরেকটু উন্নত মডেল ‘ষষ্ঠ প্রজন্মের’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট বলছে, যুদ্ধবিমানটিতে অত্যাধুনিক স্টিলথ এবং সহনশীলতার সক্ষমতা রয়েছে বলে পর্যবেক্ষকরা অনুমান করছেন। তবে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এর নামকরণ করা হয়নি।
প্রতিবেদন বলছে, যুদ্ধবিমানটির পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠাতা মাও সেতুংয়ের জন্মদিনের সাথে মিলে যায়। অনেক চীনা নাগরিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাও-কে স্মরণ করেছে, কেউ কেউ এই বিমান উড়ানকে সাবেক নেতার প্রতীকী শ্রদ্ধা হিসেবে দেখছে।
পৃথক আরেক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে, দুটি বিমান উড়তে দেখা গেছে, তবে এগুলোর একটি ছিল আকারে ছোট। উভয় বিমানের ডিজাইনই অনেকটা একরকম, লেজবিহীন। যার অর্থ এগুলো নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সক্ষম। দুটি বিমানই রাডার সনাক্তকরণ কমানোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক ইউয়ান গ্রাহাম বলেন, চীন সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়ন করছে। নকশাগুলো চীনের এভিয়েশন শিল্পের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও উদ্ভাবনের ইচ্ছার প্রতিফলন।
তিনি বলেন, ভালো-মন্দ যাই হোক না কেন, এটি অত্যন্ত মৌলিক নকশা বলে মনে হচ্ছে। এর জন্য তাদের প্রশংসা প্রাপ্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের দীর্ঘস্থায়ী আত্মতুষ্টি ঝেড়ে ফেলা উচিত।
চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ বলেছে, তারা এগুলো সম্পর্কে অবগত, আর অতিরিক্ত কোনো মন্তব্য নেই।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নেক্সট জেনারেশন এয়ার ডমিনেন্সের (এনজিএডি) প্রোগ্রাম চলছে কয়েক বছর ধরে, যা ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান নিয়ে কাজ করছে। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আসন্ন প্রশাসনের অধীনে এই প্রচেষ্টা কী রূপ নেবে, তা পরিষ্কার নয়। ইউরোপ এবং এশিয়া গ্লোবাল কমব্যাট এয়ার প্রোগ্রামের অধীনে একটি পৃথক পরবর্তী প্রজন্মের বিমান নিয়ে আলোচনা করছে।
রয়টার্সকে পাঁচজন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ বলেছেন, নতুন নকশাগুলো চীনের বাকি বহরের তুলনায় অভিনব। এগুলো কতটা গোপনীয়, কতটা কৌশলী বা দ্রুত, কী ধরণের অস্ত্র বহন করে কিংবা সত্যই এগুলো ষষ্ঠ প্রজন্মের নকশা কি না – তা নির্ধারণ করার জন্য কী ধরণের তথ্য প্রয়োজন, তা বলা সম্ভব নয়।
অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের প্রতিরক্ষা ও বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ পিটার লেটন বলেন, চীনা বিমানে মার্কিন পঞ্চম প্রজন্মের মধ্যে এফ-২২ এবং এফ-৩৫ এর মতো স্টিলথ জেট আগে থেকেই রয়েছে। এগুলোর মধ্যে জে-২০ এবং জে-৩৫ বিমানেরও গোপন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আগুলোর ক্ষমতা সর্বজনীনভাবে জানা যায়নি।
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনকে ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্যান্য ব্যবস্থায় সম্পদ ঢালছে। সম্প্রতি তারা একটি উন্নত রাডার ব্যবহার করে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ গুয়াম দ্বীপে একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইন্টারসেপশন সিস্টেম পরীক্ষা করেছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএকে