বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: ১০ নম্বর মহা বিপৎসংকেত ঘোষণার পর কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকার লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে শুরু করেছেন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণকক্ষের সূত্রমতে, রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত কক্সবাজার পৌরসভাসহ আশপাশের বেশ কিছু কেন্দ্রে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এখন বাতাসের গতিবেগ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকজনের আগমনও বাড়ছে।
এদিকে আজ সোমবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যেতে তৎপরতা চালাচ্ছে প্রশাসন।
ঘূর্ণিঝড় মোরা কক্সবাজার উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। এর প্রভাবে সমুদ্র উপকূল প্রচণ্ড উত্তাল রয়েছে। বিকেল থেকে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হলেও কেউ কানে তোলেনি। তবে রাত আটটার পর থেকে লোকজন উপকূলের ঘরবাড়ি ফেলে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটে আসতে শুরু করেছে।
আজ রাত নয়টায় কক্সবাজার শহরের প্রিপারেটরি উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে অন্তত দেড় হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছেন। কিছু লোকজন ঘরের গৃহপালিত ছাগল ও গরু নিয়ে এসেছেন।
বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে অনেকের সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছেন উপকূলের কুতুবদিয়াপাড়ার বাসিন্যাপাড়া এলাকার অমিত জলদাস (৫৫)। তাঁর সঙ্গে আছেন স্ত্রী, ছেলে, ছেলের বউসহ আটজন।
অমিত জলদাস বলেন, ‘রাত সাড়ে আটটার দিকে হঠাৎ ১০ নম্বর মহা বিপৎসংকেতের খবর পেয়ে সবাইকে নিয়ে এই বিদ্যালয়ে ছুটে এসেছি। তাড়াহুড়ো করে ছুটে আসার সময় সঙ্গে করে কিছুই আনতে পারিনি। এখন রাতে খাবারের জন্য কিছুই নেই।’
পাশের আরেকটি কক্ষে পরিবারের চার সদস্যসহ আশ্রয় নিয়েছেন পশ্চিম কুতুবকদিয়াপাড়ার শুঁটকি শ্রমিক গুরা মিয়া। তিনি বলেন, দুপুরে যখন ৭ নম্বর বিপৎসংকেত শোনা হলো, তখন কেউ তা আমলে নেননি। রাতে ১০ নম্বর মহা বিপৎসংকেত শুনে সবাই উপকূল ছেড়ে শহরের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসছে। যদিও উপকূলে ১০ নম্বর মহা বিপৎসংকেতের আলামত দেখা যাচ্ছে না।
রাত সাড়ে নয়টায় দক কক্সবাজার উপকূলে দমকা হাওয়া বাইছে। সঙ্গে হালকা বৃষ্টিপাত। গভীর রাতে জোয়ারের সঙ্গে ভারী বৃষ্টিসহ বাতাসের গতিবেগ বাড়তে থাকলে উপকূলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
রাত সাড়ে নয়টার দিকে শহরের নুনিয়াছটা ও সমিতিপাড়া উপকূল থেকে যুব রেড ক্রিসেন্ট কক্সবাজার ইউনিটের উপ-যুব প্রধান শাহাদাত হোসেন হিমেল বলেন, সেখানে রেড ক্রিসেন্টের একাধিক দল লোকজনকে গাড়িতে তুলে শহরের বিভিন্ন কেন্দ্রে পাঠানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। উপকূলের পরিস্থিতি তখনো স্বাভাবিক থাকায় লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে শহরে আসতে রাজি হচ্ছেন না।
শহরের পাবলিক হল, পৌরসভা ভবন, জেলা প্রশাসক কার্যালয় ভবনসহ বেশ কয়েটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েক হাজার নারী, পুরুষ, শিশু সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। সবার চোখেমুখে যেন অজানা আতঙ্ক।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত পৌরসভার কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৫ হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছেন। শহরের নুনিয়াছটা, খুরুশকুল, চৌফলদণ্ডীসহ উপকূলের বিভিন্ন কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে আরও ১৫ হাজার মানুষ। গভীর রাত পর্যন্ত যানবাহনে করে উপকূলের লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হবে। কেন্দ্রগুলোতে রাতের সাহ্রির জন্য খিচুড়ির আয়োজন করা হয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার উপকূলীয় ছনুয়া, খানখানাবাদ, গণ্ডামারাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে নারী-পুরুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে শুরু করেছেন বলে আজ রাত আটটায় মোবা্মইলে জানান ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম হারুনুর রশীদ। তিনি বলেন, ১০ নম্বর মহা বিপৎসংকেত ঘোষণার পর লোকজন ধীরে ধীরে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে শুরু করেছেন।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সোমবার বিকেল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। রাত নয়টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় বৃষ্টি ছিল না।
আনোয়ারা উপজেলার বিভিন্ন উপকূল থেকেও রাতে স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতায় ও নিজ উদ্যোগে মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে শুরু করেছে বলে জানান রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জানে আলম।
এর আগে আজ বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা এলাকা থেকেও লোকজন সরে যায়। পতেঙ্গা সৈকতের দোকানিরা তাঁদের মালামাল নিরাপদে সরিয়ে নেন।
এদিকে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত ঘোষণার পরই চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালন কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঘূর্ণিঝড়ের সময় জেটিতে জাহাজ রাখা বিপজ্জনক। কারণ, প্রচণ্ড ঢেউয়ের তোড়ে জাহাজের আঘাতে জেটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ আশঙ্কায় জেটিতে অবস্থান করা পণ্যবাহী ২৪টি বড় জাহাজ সাগরের নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে নেওয়া হয়।
আজ বেলা সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা হয়। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী জানান, চট্টগ্রাম নগর ও জেলার ৪৭৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে সাড়ে চার লাখ লোকের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ঘূর্ণিঝড় সামনে রেখে চিকিৎসক ও নার্সদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত ওষুধও মজুত রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিকেলের মধ্যে ৩৪২ টন চাল ও ৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়-সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য ও জরুরি সহায়তার জন্য ৬১১৫৪৫ নম্বরে যে কেউ যোগাযোগ করতে পারবেন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মোকাবিলায় নগরের দামপাড়ায় নিয়ন্ত্রণকক্ষ চালু করেছে।
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, উপজেলায় ৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এতে ১ লাখ ১৬ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে।
বাঁশখালীর নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ চাহেল তস্তরী বলেন, ১১৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজনকে সরে যাওয়ার জন্য রাতেও মাইকিং করা হচ্ছে।
বাংলা৭১নিউজ/পিআরএস