বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:২১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
বিশ্বে ৮ শিশু ও তরুণীর মধ্যে একজন ধর্ষণ-যৌনহয়রানির শিকার এটিএম থেকে বিকাশে রেমিটেন্স ক্যাশ আউট ৭ টাকায় বগুড়ায় বিলের পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৪০০ পরিবারকে অর্থ সহায়তা দিলো জামায়াত মমতাজসহ ৯০ জনের নামে হত্যা মামলা একসঙ্গে ৫ নারী বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে সুপ্রিম কোর্টে নতুন ইতিহাস সাহিত্যে নোবেল পেলেন দক্ষিণ কোরিয়ার হান ক্যাং নির্বাচনমুখী সংস্কারগুলো আগে বাস্তবায়ন করতে হবে: সালাহউদ্দিন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র কারাগারে লিবিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন ১৫০ বাংলাদেশি রাশিয়ায় এবার বিমানঘাঁটিতে হামলা, এখনো জ্বলছে তেল টার্মিনালের আগুন ২৪ ঘণ্টায় সাবের হোসেন কীভাবে মুক্তি পেলেন: প্রশ্ন রিজভীর রাজনগরে ২৩১ বস্তা ভারতীয় চিনি উদ্ধার, আটক ১ হারুনের দেশত্যাগ নিয়ে যা বললেন হাসনাত আব্দুল্লাহ শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের নামে মাহমুদুর রহমানের মামলা ডিম-পেঁয়াজ-আলুর দাম কিছুটা কমেছে: বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাক মাদরাসার ভেতরে, ১৪ শিক্ষার্থী আহত দুই কোটির ব্যবসায় ১৫১ কোটি টাকা ঋণ, এস আলমের মাসুদের ঘাড়ে দায় গোলান মালভূমিতে হিজবুল্লাহ সদস্যকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের ৩৬৫ দিন নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মরে গেছে তিস্তা,জেগে উঠেছে ৫৮ বালুচর

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় বুধবার, ৮ জানুয়ারী, ২০২০
  • ৪৫ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ,(লালমনিরহাট)প্রতিনিধি: তিস্তা এখন মরুভূমি। গত বছর কয়েক দফায় বন্যার পর তিস্তার বুকে জেগে উঠেছে বালুচর। নদী খনন, শাসন, ড্রেজিং ও সংরক্ষণ না করায় উজান থেকে নেমে আসা পলি জমে আবাদি জমিতে রূপ নিয়েছে তিস্তা।

ভারতের একতরফা পানি নিয়ন্ত্রণের কারণে বাংলাদেশ অংশ তিস্তা এখন মৃতপ্রায়। তিস্তার বালুচরে বিভিন্ন ফসল বুনে স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। দীর্ঘদিন তিস্তার ভাঙনে ঘরবাড়ি, জমি হারানো পরিবারগুলো বালুচর পেয়ে কিছুটা যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। তিস্তায় সব হারিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাওয়া পরিবারগুলো আবার চরে ফিরে বাপ-দাদার বসতভিটায় পরিবার নিয়ে বসবাস করে বালুচরে ফসল বুনেছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, তিস্তায় জেগে উঠেছে ৫৮টি চর। বালুচরে সবুজের মাঠে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকরা। আলু, ভুট্টা, কাঁচা মরিচ, মসুর ডাল, মিষ্টি কুমড়া, বাদাম, পেঁয়াজ, রসুন ও তরমুজসহ বিভিন্ন ফসল বুনেছেন তারা।

তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা জানান, তিস্তা এখন নদী নয়, আবাদি জমি। তিস্তার বুকে মাছ ধরতে নৌকা নিয়ে ছুটে চলা মাঝিদের দৌড়ঝাঁপ নেই। পুরো তিস্তা বালুচর। সেখানে ফসল বুনেছেন কৃষকরা।

নদী তিস্তা এখন মরুভূমি। তিস্তার বুকে নানা ধরনের ফসল। বিভিন্ন ফসলের পরিচর্যা করছেন কৃষকরা। সবুজ মাঠে ব্যস্ত সময় কাটছে তাদের।

হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান ইউনিয়নের তিস্তাপাড়ের পাসশেখ সুন্দর গ্রামের আলী বলেন, দুই বিঘা আবাদি জমি তিস্তায় বিলীন হয়ে গেছে আমার। বর্তমানে নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে আবাদ করেছি। জমিতে ভুট্টা, মসুর ডাল, মিষ্টি কুমড়া লাগিয়েছি। ভালো ফসল পাব।

লালমনিরহাটের চর রাজপুর এলাকার হোসেন বলেন, তিস্তায় পানি নেই। নদীর ওপর দিয়ে হাঁটা যায়। প্রতি বছর এই সময়ে তিস্তায় পানি থাকে না। এই সুযোগে জমিতে ফসল ফলাই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে নেমে আসে বালু। ফলে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বছর বছর তলদেশ ভরাট হওয়ায় নদীগুলো হারাতে বসেছে ঐতিহ্য। নদীতে মাছ ধরে যারা জীবিকা নির্বাহ করতেন তারা আজ অসহায়। পানি না থাকায় জেলেরা পেশা বদল করে চলে যাচ্ছেন অন্য পেশায়।

পরিসংখ্যান মতে, তিস্তা, ধরলা, রতনাই, স্বর্ণামতি, সানিয়াজান, সাকোয়া, মালদহ, ত্রিমোহিনী, সতী, গিরিধারী, ছিনাকাটা, ধলাই ও ভেটেশ্বরসহ ১৩টি নদী লালমনিরহাটের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে, যার দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে চার শত কিলোমিটার। কিন্তু কালক্রমে ভরাট হয়ে পানি শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হয় অনেক নদী। বন্ধ হয়ে যায় নদীকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য। পানি না থাকায় দুর্দিন চলছে মৎস্যজীবীদের।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, নদীগুলো পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ১৩টি নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় কোনোটিতেই যথেষ্ট পানি নেই। তবে নদীগুলো খনন করে পানিপ্রবাহ ধরে রাখা সম্ভব। এর মধ্যে ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নীলফামারীর কালীগঞ্জ সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তিস্তা নদী। লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রামের চিলমারী বন্দর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিশেছে তিস্তা। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩১৫ কিলোমিটার হলেও বাংলাদেশ অংশে রয়েছে ১৬৫ কিলোমিটার।

দেশের অন্যতম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার তিস্তা ব্যারাজ অকার্যকর হওয়ার উপক্রম। তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত রেলসেতু, সড়ক সেতু ও নির্মাণাধীন দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু দাঁড়িয়ে আছে বালুচরের ওপর। পায়ে হেঁটেই পার হওয়া যায় তিস্তা নদী।

তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প সূত্র জানায়, বর্তমানে তিস্তায় পানি রয়েছে সাড়ে তিন হাজার কিউসেক। প্রকল্প এলাকায় সেচ দেয়া এবং নদীর প্রবাহ ঠিক রাখতে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে প্রয়োজন ২০ হাজার কিউসেক পানি। শুধু সেচ প্রকল্প চালাতেই প্রবাহমাত্রা পানি থাকা প্রয়োজন ১৪ হাজার কিউসেক। নদীর অস্তিত্ব রক্ষায় চার হাজার কিউসেক পানি প্রয়োজন। কিন্তু তিস্তায় প্রয়োজনীয় পানি নেই। শুষ্ক মৌসুমে ব্যারাজ পয়েন্টে কয়েক বছর ধরে পাওয়া যায় ৫০০ কিউসেক পানি। ব্যারাজের সবকটি জলকপাট বন্ধ রেখে সেচ প্রকল্পে পানি সরবরাহ করায় নদীর ভাটিতে প্রবাহ থাকছে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া ডিভিশনের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান বলেন, তিস্তার পানি প্রবাহ ধরে রাখার চেষ্টা করছি। উজান থেকে পানি কম আসায় এবার সেচযোগ্য জমি কম।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া ডিভিশনের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাফিউল বারী বলেন, জানুয়ারির শুরুতেই তিস্তার পানি শুকিয়ে যায়। সেখানে চাষাবাদ করেন কৃষকরা।

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার আরাজি শেখ সিন্দুর গ্রামের মোতালেব হোসেন বলেন, তিস্তার চরে ১০ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। পানির অভাবে ভুট্টা গাছ মরতে বসেছে। এখন নিরুপায় হয়ে সেচ দিয়ে পানি দিতে হয়।

প্রায় ২০ বছর ধরে তিস্তা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন লালমনিরহাটের গড্ডিমারী ইউনিয়নের দোয়ানি গ্রামের আকবর (৫০)। তিনি বলেন, এখন নদীতে পানি নেই, মাছও নেই। তিস্তা এখন মরুভূমি।

গড্ডিমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আতিয়ার রহমান বলেন, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে চৌচির হয়ে পড়ে তিস্তা নদী। জেগে উঠেছে অসংখ্য চর। এই চরে কৃষকরা চাষবাদ শুরু করেছেন।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিদু ভূষণ রায় বলেন, তিস্তার চরাঞ্চল এখন আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। চরাঞ্চলের মাটিতে পলি জমে থাকায় অনেক উর্বর। সে কারণে রাসায়নিক সার ছাড়াই বিভিন্ন ফসলের ফলন ভালো হয়। বিশেষ করে ভুট্টা, গম, আলু, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, বাদাম, তরমুজ, সরিষা, তিলসহ শাকসবজি চাষ বেশি হয়। কৃষকরা নানা ধরনের ফসল চাষাবাদ করে লাভবান হন।

বাংলা৭১নিউজ/জেডএ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com