সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ১২:৩২ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
ভারতীয় তরুণীর হারানো আইফোন উদ্ধার করল চট্টগ্রাম ডিবি দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতা ভোগের স্বপ্ন জনগণ পূরণ হতে দেবে না: ফখরুল দুবাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ বাংলাদেশি নিহত টাঙ্গাইলে বিপৎসীমার ওপরে তিন নদীর পানি, ৪৪ হাজার মানুষ পানিবন্দি চীনের পথে প্রধানমন্ত্রী উরুগুয়েতে নার্সিং হোমে আগুন, নিহত ১০ মিয়ানমার সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে বাংলাদেশি যুবক নিহত নতুন শর্তে ফের যুদ্ধবিরতি আলোচনার বুকে ছুরিকাঘাত নেতানিয়াহুর! অভিযোগ গঠন বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে ড. ইউনূস ম্যাক্রোঁর কৌশলেই বাজিমাত, ফ্রান্সে ক্ষমতায় যাওয়া হচ্ছে না উগ্র ডানপন্থীদের! দেশে ফিরলেন ৫৬ হাজার ৩৩১ হাজি, মৃত্যু বেড়ে ৬২ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় হাসপাতালে খালেদা জিয়া আজ চীন সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরসিংদীতে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত ৫ কেনাকাটায় লুটপাট : মাতৃসদনের ১৩ চিকিৎসকসহ আসামি ২১ চাঁদপুরে বিদেশি পিস্তলসহ যুবক গ্রেফতার নাটোরে বিএনপির ৫ নেতাকে কুপিয়ে জখম, ৯ জন কারাগারে ইসলামী ব্যাংক চট্টগ্রাম অঞ্চলের ব্যবসায় উন্নয়ন সম্মেলন টিসিবির জুলাই মাসের পণ্য বিক্রি সোমবার শুরু শিক্ষার্থীদের অবরোধ, অচল রাজধানীর ৬ সড়ক

মন্দিরে হামলা ভাঙচুর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণােদিত : হিন্দু মহাজোট

বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা:
  • আপলোড সময় শুক্রবার, ৫ নভেম্বর, ২০২১
  • ২৩ বার পড়া হয়েছে

দুর্গাপূজা হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। হিন্দু সম্প্রদায় ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দুর্গা উৎসবকে বরণ করে নিয়েছিল। কিন্তু দুর্গাপূজা চলাকালে কুমিল্লা, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, নোয়াখালীর চৌমুহনী, রংপুরের পীরগঞ্জসহ দেশের ২২টি জেলায় দুর্গাপূজা মণ্ডপে হামলা, ভাঙচুরসহ বিভিন্ন ঘটনা পরিকল্পিত এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ বিপু হল-এ বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক। সংবাদ সম্মেলন থেকে তিন দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। সরকারকে দাবি মানার সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা দিতে আগামী ১৫ নভেম্বর আল্টিমেটাম দিয়েছে হিন্দু মহাজোট।

সংবাদ সম্মেলনে দাবি জানানো হয়, ক্ষতিগ্রস্ত সব মন্দির, বাড়িঘর পুনর্নির্মাণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদে ৬০টি সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে, একটি সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে একজনকে পূর্ণমন্ত্রী নিয়োগ করতে হবে। অন্যথায় ১৫ নভেম্বর হিন্দু সম্প্রদায় সারা দেশের প্রত্যেক জেলা ও উপজেলা সদরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হিন্দু মহাজোটে সিনিয়র সহ সভাপতি অ্যাড. প্রদীপ চন্দ্র পাল, প্রধান সমন্বয়কারী বিজয় কৃষ্ণ ভট্টাচার্য, প্রেসিডিয়াম মেম্বার অভয় কুমার রায়, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাড. প্রদীপ কুমার সরকার, নকুল চন্দ্র মন্ডল, শ্যামল কান্তি নাগ, আন্তর্জাতিক সম্পাদক নরেশ হালদার, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. প্রতীভা বাগচী, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. অচ্যুতানন্দ ঘরামী, সমাজকল্যাণ সম্পাদক সঞ্জয় চক্রবর্তী, দপ্তর সম্পাদক কল্যাণ মণ্ডল, ঢাকা উত্তরের সভাপতি প্রবীর হালদার, ঢাকা দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল ঘােষ, ঢাকা জেলার সাধারণ সম্পাদক গােপাল পাল, খগেশ রাজবংশী, হিন্দু স্বেচ্ছাসেবক মহাজোটের সভাপতি অ্যাড. গৌরাঙ্গ মণ্ডল, সাধারণ সম্পাদক চুলন চন্দ্র পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক চয়ন বাড়ে, হিন্দু যুব মহাজোটের সভাপতি প্রদীপ শঙ্কর, নির্বাহী সভাপতি গৌতম সরকার অপু, সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মৃণাল মধু, হিন্দু ছাত্র মহাজোটের সভাপতি সাজেন কৃষ্ণ বল, সাধারণ সম্পাদক সজিব কুণ্ডু প্রধান সমন্বয়কারী ধ্রুব বারুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বপন মধু প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দুর্গাপূজা হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। হিন্দু সম্প্রদায় ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দুর্গা উৎসবকে বরণ করে নিয়েছিল। কিন্তু দুর্গাপূজা চলাকালে কুমিল্লা, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, নোয়াখালীর চৌমুহনী, রংপুরের পীরগঞ্জসহ দেশের ২২টি জেলায় দুর্গাপূজা মণ্ডপ ও হিন্দু বাড়ীঘরে ব্যাপক হামলা, ভাংচুর, পূজামণ্ডপ ও প্রতিমা ভাংচুর, লুঠপাঠ, অগ্নিসংযোগ, মঠ মন্দিরে হামলা, নির্যাতন, মহিলাদের শ্লীলতাহানী, ধর্ষণ খুনসহ এক বিভীষিকাময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

হিন্দু মহাজোট কেন্দ্রীয় কমিটি, নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটি, চট্টগ্রাম জেলা কমিটি ও সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটি পৃথক পৃথকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার ভয়াবহতা, পেছনে কারা দায়ী এবং কাদের অবহেলা তা উদঘাটনের চেষ্টা করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়- কুমিল্লায় ১৩ অক্টোবর সকাল ১০ থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দফায় দফায় হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটলেও পুলিশ, র‌্যাব, ফায়ার সার্ভিসকে বার বার ফোন করে পুজামণ্ডপ রক্ষার আকুতি জানালেও কেউ আসে নাই।

সমস্ত পূজামণ্ডপ লণ্ডভণ্ড করে গানপাউডার ছিটিয়ে প্রতিমা মণ্ডপ ধর্মপুস্তকসহ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো প্রতিমা পূজামণ্ডপ থেকে রাস্তায় নিয়ে এসে পদদলিত করে চরম সম্মানহানি করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।

মন্দিরের গেট ও আশপাশের দোকানও রেহাই পায়নি। কোনো রাজনৈতিক নেতা, সামাজিক নেতা, সুশীল সমাজের কেউ এগিয়ে আসেনি। ঘটনার পরদিন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মঠ-মন্দিরে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, মহিলাদের শ্লীলতাহানি, ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। নোয়াখালীর চৌমুহনীতে ব্যাপকভাবে হিন্দু মন্দির ও পূজামণ্ডপে হামলা অগ্নিসংযোগ ভাঙচুর হয়।

রংপুরের পীরগঞ্জে একটি গ্রামের সব বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নি সংযােগ করে পুড়িয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে। পরনের কাপড় ছাড়া তাদের কিছুই ছিল না। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলায় প্রতিনিয়ত মন্দির, প্রতিমা ভাঙচুর চলছেই।

গত ১৩ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে মােট ২৫টি জেলায় আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। গতকালও বরিশালের বামনাকাঠিতে প্রতিমা ভাঙচুর হয়েছে। হিন্দু মহাজোটের পরিদর্শন টিম ঘটনাস্থলগুলো পরিদর্শন করে বুঝতে পেরেছে, সম্পূর্ণ ঘটনা পরিকল্পিত এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণােদিত। তারা ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়- পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে দুষ্কৃতকারীরা এটাকে উপজীব্য করে একর পর এক ঘটনা ঘটিয়েই চলছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনায় হিন্দু মহাজোটের পরিদর্শক দল নিম্নোক্ত ক্ষয়ক্ষতি লক্ষ করেছেন। সারা দেশে আহত হয়েছেন ৬১১ জন। ৩১টি মন্দির আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে। পূজামণ্ডপ ভাঙচুর করা হয়েছে ২২৭টি।

অগ্নিসংযােগ করে ভস্মীভূত করা হয়েছে ২৪১ বাড়ি। হিন্দু বাড়িঘরে হামলা হয়েছে ৭৪৭টি। প্রতিমা ভাঙচুর ও আগুনে ভষ্মিভূত করা হয়েছে ৯৯৪ টি। দোকান ভাঙচুর লুটপাট ৩১টি। এই ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ১৭ জন হিন্দুকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১১ হাজার ৫০৭ টি পরিবার। নিরাপত্তাহীনতায় আছে। মােট ক্ষতি প্রায় ৩৮ কোটি টাকা।
 
বর্তমানে ডিজিটাল যুগ। কোনো ঘটনাই কোনো নির্দিষ্ট সীমানা ও দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। বাংলাদেশে ঘটনার রেশ ধরে দেশের সীমানা পেরিয়ে ভারতসহ সারা পৃথিবীতে এর প্রতিক্রিয়া হয়েছে। বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে সীমান্ত সংলগ্ন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যেও ব্যাপক মিছিল, মিটিং ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমরা শুনেছি সেখানেও প্রতিক্রিয়া দেখাতে গিয়ে বেশ কিছু মসজিদ ভাঙচুর করা হয়েছে, তিনটি মসজিদে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মুসলিমদের ঘরবাড়ি, দোকানপাটে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। আমরা এ ন্যক্কারজনক ঘটনায় ব্যথিত এবং এর নিন্দা জানাই।

আমরা ত্রিপুরাবাসী হিন্দু ভাই-বােনদের বলতে চাই, আপনারা আমাদের ব্যথায় ব্যথিত সে জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই। কিন্তু প্রতিক্রিয়া দেখাতে গিয়ে সেখানে যদি মুসলিমদের ওপর হামলা হয়, সেটার তীব্র প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর পড়তে বাধ্য। আমরা মনে করি, ত্রিপুরার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়া ও রক্ষা করা আপনাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তা না হলে সেখানকার ঘটনার প্রভাব বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপরও পড়বে।

ফলাফল বাংলাদেশের হিন্দুরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে; উভয় দেশের শান্তি বিনষ্ট হবে। আমরা আশা করি, পৃথিবীর সব দেশের সংখ্যালঘু নাগরিকরা সম্মানের সাথে অধিকার নিয়ে বসবাসের সুযোগ পাক, সুরক্ষিত থাক।

১৯৯১ সালে নির্বাচন-পরবর্তী দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপকভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, লুটপাট হয় । তৎকালীন সরকার সে ঘটনার কোনো বিচার করে নাই। এরপর বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রামের রাউজান, ফটিকছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর, যশােরের অভয়নগর, কুমিল্লা, সুনামগঞ্জের শাল্লা, সাতক্ষীরা, কক্সবাজারের রামু, দিনাজপুরসহ সারা দেশে কিছু সময়ের ব্যবধানে পরিকল্পিত হামলা, খুন, হত্যাপ্রচেষ্টা, অগ্নিসংযােগ, ভাঙচুর চালিয়ে হিন্দুদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে।

ফলে স্বাধীনতার প্রাক্কালে ২২% হিন্দু থাকলেও বর্তমানে তা সরকারি হিসাবে ১১.৮%-এ নেমে এসেছে। হিন্দু ধর্ম নিয়ে প্রতিনিয়ত নানা কটূক্তি ও বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে; জবাব দিতে গেলে আইসিটি অ্যাক্টে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হচ্ছে- দাবি করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com