বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: দখিনা হাওয়া, ঝরা পাতার শুকনো নুপুরের নিক্কন, প্রকৃতির মিলন এ বসন্তেই। বসন্ত মানেই পূর্ণতা। বসন্ত মানেই নতুন প্রাণের কলরব। বসন্ত মানেই একে অপরের হাত ধরে হাঁটা।
এ ঋতু বাসন্তী রঙে সাজায় মনকে, মানুষকে করে আনমনা। শীতের জীর্ণতা সরিয়ে ফুলে ফুলে সেজে ওঠে প্রকৃতি। গাছে গাছে নতুন পাতা, স্নিগ্ধ সবুজ কচি পাতার ধীর গতিতে বাতাসের সঙ্গে বয়ে চলা জানান দেয় নতুন কিছুর।
শীতে খোলসে ঢুকে থাকা বনবনানী অলৌকিক স্পর্শে জেগে উঠে। পলাশ, শিমুল গাছে লাগে আগুন রঙের খেলা। প্রকৃতিতে চলে মধুর বসন্তে সাজ সাজ রব। আর এ সাজে মন রাঙিয়ে গুন গুন করে অনেকেই গেয়ে উঠবেন- ‘মনেতে ফাগুন এলো..’।
কিংবা ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ বসন্ত…। কিংবা আহা আজি এ বসন্তে কত ফুল ফোঁটে কত বাঁশি বাজে কত পাখি গায়..। কিংবা এতটুকু ছোঁয়া লাগে, এতটুকু কথা শুনি, তাই দিয়ে মনে মনে রচি মম ফাল্গুনী..। কিংবা ফুলের বনে যার পাশে যাই তারেই লাগে ভালো..। কিংবা আমাদের প্রিয় বাউল শাহ আবদুল করিমের ‘বসন্ত বাতাসে..সই গো বসন্ত বাতাসে, বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে…।’ এসব অমর পংক্তিমালা আমাদের দেহে-মনে-বোধে-মননে তরঙ্গায়িত হবে বারবার।
বাস্তবতার পাথর চাপা হৃদয়ে সবুজ বিবর্ণ হওয়া চোখে প্রকৃতি দেখার সুযোগ পান না নগরবাসী। তবে কোকিলের ডাক, রঙিন কৃষ্ণচূড়া, আর আমের মুকুলের কথা বইয়ের পাতায় পড়ে থাকলেও একালের তরুণ-তরুণীরা কিন্তু বসে থাকতে রাজি নন। গায়ে হলুদ জামা আর বাসন্তী রঙের শাড়ি জড়িয়ে বেরিয়ে পড়বে তারা।
বাঙালির জীবনযাপনে, আচার-আচরণে, পালা-পার্বণে এই ঋতুর বড় প্রভাব রয়েছে। শুধু ঋতুরাজ বসন্তই নয়। বারো মাসে এক একটি ঋতু এসে এক এক রকমভাবে পাল্টে দেয় আমাদের জীবনযাপন।
বর্ষায় আমাদের যে দিনকাল যায়, শীতে কখনো সেরকম নয়। আবার গ্রীষ্মে অন্যরকম জীবন আমাদের। কেননা আমরা এখনো বেশিরভাগই প্রকৃতিনির্ভর। তাই যদি বাংলার কোনো প্রান্তে ফুল না ফোটে, কোথাও যদি আমের মুকুল দেখা না দেয়, তবুও বসন্ত আসে আমাদের মনে। তাইতো বলি ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত।
আমাদের প্রকৃতিতে ও মনে বসন্তের আগমন অনিবার্য হয়ে ওঠে। শীতের শুষ্কতায় ম্লান প্রকৃতিকে সজীব করে তুলতে, মানুষের মনে সজীবতা দিতে বসন্তের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, মধুর বসন্ত এসেছে, মধুর মিলন ঘটাতে। প্রকৃতির সৌন্দর্য ও সজীবতার সঙ্গে নতুন দিনের প্রত্যাশায় আসে বসন্ত।
আর তাই সকাল শুরু হওয়া মাত্রই নানা অনুষ্ঠান, বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় সকলে বরণ করবে বসন্তকে। সারা দেশে কী গ্রামে কী শহরে বসন্তকে বরণ করে নেবে। মানুষের ইচ্ছা এবারের বসন্ত আমাদের জীবনে সত্যিকার হয়ে আসুক। অর্থবহ হয়ে উঠুক পলাশ-শিমুলের রঙ, কোকিলের কুহুতান।
নবযৌবনের ঋতুকে বরণ করে নিতে ফাগুনের প্রথম প্রভাতেই শুরু হয়ে গেছে সে উৎসবের। রাজধানীর শাহবাগ, চারুকলা, টিএসসি, পাবলিক লাইব্রেরি আর উদ্যানে উদ্যানে নর-নারীর বাসন্তী সাজ মনে করিয়ে দিচ্ছে- ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক, আজ বসন্ত।
বসন্তের প্রথম সকালে বাসন্তী রং শাড়ি, কপালে টিপ, হাতে চুড়ি, পায়ে নুপুর, খোঁপায় ফুল জড়িয়ে বেরিয়ে পড়বে তরুণীর দল। পাঞ্জাবি, ফতুয়া পরা ছেলেরাও সঙ্গী হবে বসন্তবরণের বিভিন্ন আয়োজনে।
২২ বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও রাজধানীতে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করেছে জাতীয় বসন্ত উদযাপন পরিষদ। ‘এসো মিলি প্রাণের উৎসবে’প্রতিপাদ্যে সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় যন্ত্রসঙ্গীতের সুর-মূর্ছনায় শুরু হয় এ কর্মসূচি। সকাল ১০টা পর্যন্ত চলবে অনুষ্ঠান। বর্ণিলসাজে নানা বয়সী মানুষের অংশগ্রহণে নাচে-গানে বরণ করে নেয়া হয় ফাগুনকে।
এছাড়া বিকাল চারটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত একযোগে অনুষ্ঠান চলবে চারুকলার বকুলতলা, পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর এবং উত্তরার ৩নং সেক্টরের রবীন্দ্র সরণির উন্মুক্ত মঞ্চে। সে মঞ্চে হাজারো কণ্ঠে একসঙ্গে ধ্বণিত হবে, বসন্ত এসে গেছে!
ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে ফুলে ফুলে ভরে গেছে বাংলার সবুজ প্রান্তর। কোকিলের ডাক যেনো মানুষের জীর্ণতা প্রস্তুত শ্যামল বাংলার গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে।
ফাগুনের প্রথম দিনে বসন্তের রঙ থাকবে বইমেলাতেও। ১৯৫২ সালে এমনই এক বসন্তের দিনে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরো অনেক ভাষা শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাঙালির রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা আদায় হয়েছিল। ঋতুরাজ বসন্ত ঘিরে বাংলাদেশের মানুষের যে আবেগ, তা পরশ বইমেলায়ও পড়ার অপেক্ষায় রয়েছেন প্রকাশকরা।
ফাগুনের প্রথম দিন আজ বিক্রি অন্যান্য দিনের চেয়ে ভালো হবে বলে তারা আশা প্রকাশ করছেন। সেই সঙ্গে আগামীকাল বুধবার বিশ্ব ভালবাসা দিবসেও তার ধারাবাহিকতা থাকবে বলে মনে করছেন তারা।
বাংলা৭১নিউজ/সিএইস