বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্র থেকে জানা গেছে, আগামী ১৮ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া পর্যন্ত হরতাল-অবরোধের বাইরে থাকার চেষ্টা ছিল, কিন্তু নেতাকর্মীরা মাঠে নামলে গ্রেপ্তার হচ্ছেন।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্র থেকে জানা গেছে, আগামী ১৮ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া পর্যন্ত হরতাল-অবরোধের বাইরে থাকার চেষ্টা ছিল, কিন্তু নেতাকর্মীরা মাঠে নামলে গ্রেপ্তার হচ্ছেন।
গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে আগামী ১০ ডিসেম্বর রবিবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা-মহানগরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এই কর্মসূচি ঘিরে সরকার ও প্রশাসন কী ধরনের আচরণ করে, তা দেখবেন দলের নীতিনির্ধারকরা। কর্মসূচিতে তেমন বাধা না এলে হরতাল-অবরোধের ফাঁকে আরো কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্র জানায়, আগামী সপ্তাহে ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ এবং সারা দেশে গণমিছিলের কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়ে দলে আলোচনা হচ্ছে। এ ছাড়া ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালন করবে দলটি। এই দুই দিন হরতাল বা অবরোধ থাকবে না। জাতীয় দিবস পালনের কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের কিভাবে সম্পৃক্ত করা যায়, সে বিষয়েও নীতিনির্ধারকদের পরামর্শ নিচ্ছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, হরতাল-অবরোধ ছাড়াও কর্মসূচি হচ্ছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী আন্দোলনের কৌশলে পরিবর্তন আনা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের সব ধরনের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনে বাধা দিচ্ছে। সমাবেশ-মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি থেকে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
প্রতীক বরাদ্দ-পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা
প্রতীক বরাদ্দের পর ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময় বলে মনে করছে বিএনপি। এই সময়ে কিভাবে শক্তভাবে মাঠে থেকে হরতাল-অবরোধ কঠোরভাবে পালন করা হবে সে বিষয়ে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে বিএনপি। ওই সময় হরতাল-অবরোধের মধ্যে নির্বাচন কমিশনসহ ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ ভবন ঘেরাও এবং জেলায় জেলায় বিক্ষোভসহ অন্য কর্মসূচির কথাও ভাবা হচ্ছে। যুগপৎ আন্দোলনে সরাসরি যুক্ত না থাকলেও এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের পরামর্শ নিচ্ছে দলটি।
তবে নির্বাচন বর্জনকারী সব দলকে যুগপৎ আন্দোলনে সম্পৃক্ত এবং তাদের নিয়ে সর্বদলীয় আন্দোলন কমিটি করার বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের কিছুটা দ্বিমত রয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় জামায়াতে ইসলামীর অংশগ্রহণ চায় না দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। গণতন্ত্র মঞ্চের আপত্তির কারণে এই প্রক্রিয়া এগোয় কি না তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়কারী শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘যুগপৎ আন্দোলন যেভাবে চলছে, তা আমরা অব্যাহত রাখতে চাই।’
ঢাকার নেতারা হরতাল-অবরোধের পক্ষে
ঢাকা মহানগর বিএনপি ও দলের অঙ্গসহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এখনো হরতাল-অবরোধের পক্ষে মত দিচ্ছেন। সম্প্রতি তাঁদের সঙ্গে শীর্ষ নেতৃত্বের যে কয়টি বৈঠক হয়েছে, সবটিতে বেশির ভাগ নেতা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার বিষয়ে জোরালো বক্তব্য দেন। তাঁরা মনে করেন, অন্য কোনো কর্মসূচি পালনের মতো পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পর্যায়ের একাধিক নেতা আপাতত হরতাল-অবরোধে বিরতি দেওয়ার পক্ষে। ৭ জানুয়ারি ভোট ঠেকানোর কর্মসূচি শক্তভাবে পালন করতে এখন নতুন করে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি প্রয়োজন বলে মত দেন তাঁরা।
আবার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ
আজ মঙ্গলবার এক দিন বিরতি দিয়ে বুধবার থেকে আবারও ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। গতকাল সোমবার বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপি হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দেয়। সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং তফসিল বাতিলের দাবিতে এর আগে ৯ দফায় ১৮ দিন অবরোধ এবং তিন দফায় চার দিন হরতাল করেছে বিএনপি।
বাংলা৭১নিউজ/এসএকে