বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে আজ অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। হাসপাতালের চার ইন্টার্ন চিকিৎসকের শাস্তি বাতিল দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করেন তাদের সহকর্মীরা।
এদিন একই দাবিতে দেশের আরও ১০ মেডিকেলে কর্মবিরতি শুরু হয়েছে।
মেডিকেলগুলো হল- বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিরাজগঞ্জ নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজ, নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল এবং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে সিরাজগঞ্জের এক রোগীর স্বজনদের মারধরের ঘটনায় তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ওই চার ইন্টার্নের ইন্টার্নশিপ ৬ মাসের জন্য স্থগিত করে। পরে তাদের বিভিন্ন মেডিকেলে ইন্টার্নশিপ শেষ করার কথা বলা হয়।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত জানাজানি হলে ইন্টার্নরা ক্যাফেটেরিয়ায় জরুরি সভা করেন। এরপর সন্ধ্যা থেকে তারা অঘোষিত কর্মবিরতি পালন করতে থাকেন।
বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে-
বগুড়া
এক ঘণ্টার মানববন্ধন শেষে আজ দুপুরে শাস্তিপ্রাপ্ত ইন্টার্ন ও ছাত্রলীগ শজিমেক শাখার সাবেক সহ-সভাপতি ডা. কুতুব উদ্দিন অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ঘোষণা দেন।
শাস্তিপ্রাপ্ত অন্য তিন ইন্টার্ন হলেন- ছাত্রলীগ শজিমেক শাখার সভাপতি ডা. এমএ আল-মামুন, সহ-সভাপতি ডা. আশিকুজ্জামান আশিফ এবং ছাত্রলীগ কর্মী ডা. নূরজাহান বিনতে ইসলাম নাজ।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী, ডা. মামুনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, ডা. আশিফকে ফরিদপুর মেডিকেলে, ডা. কুতুব উদ্দিনকে যশোর মেডিকেলে এবং ডা. নাজকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ শেষ করতে হবে।
চলমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় আজ সকাল ৯টায় ইন্টার্ন বাদে সব চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন শজিমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মাসুদ আহসান।
বৈঠক শেষে পরিচালক জানান, ১৩০ ইন্টার্নের অনুপস্থিতির ঘটনায় হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে ৮ সদস্যের দুটি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। এ টিম ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসাসেবা মনিটরিং করছে। বিএমএ ও স্বাচিপ নেতারা সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। ফলে হাসপাতালে আসা রোগীদের চিকিৎসায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
পরিচালক বলেন, চার ইন্টার্নকে শাস্তি দেয়া সংক্রান্ত কোনো চিঠি তিনি আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত হাতে পাননি। পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিন বেলা ১১টায় হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে মানববন্ধন শুরু হয়। এ সময় শাস্তপ্রাপ্ত চার ইন্টার্নের মধ্যে শুধু ডা. কুতুব উদ্দিন দীর্ঘ বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, রংপুর মেডিকেলসহ দেশের বিভিন্ন মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা এ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া শাস্তি বাতিলের দাবি জনিয়ে বলেন, অন্যথায় তাদের কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।
এদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, ইন্টার্নরা না থাকলেও নার্স ও চিকিৎসকরা তৎপর। ফলে চিকিৎসাসেবা প্রায় স্বাভাবিক রয়েছে।
মেডিসিন বিভাগে চিকিত্সা নিতে আসা কাহালুর পাইকর গ্রামের আবদুর রহিমের স্ত্রী আসিয়া খাতুন, শিবগঞ্জের আটমুলের আবদুস সাত্তার, শাজাহানপুরের ডেমাজানি গ্রামের আজমল হোসেনসহ অনেকেই জানান, ডাক্তার ও নার্সরা তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন। চিকিৎসায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
মেডিসিন বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. জাকির হোসেন জানান, প্রচুর রোগী আসছেন, তাদের দ্রুত চিকিত্সা দেয়া হচ্ছে।
বরিশাল
বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেছেন ইন্টার্নরা।
হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. নাসিম জানান, শজিমেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের আহ্বানে দুপুর ১২টা থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন শেবাচিমে কর্মরত প্রায় ২শ’ ইন্টার্ন চিকিৎসক।
তবে শেবাচিম হাসাপাতালের পরিচালক ডা. এসএস সিরাজুল ইসলাম জানান, ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতিতে থাকায় রোগীদের তেমন ক্ষতি হবে না। হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসক রয়েছেন।
সিলেট
এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন করছেন।
আজ সকাল থেকে কর্মবিরতির কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েন চিকিৎসাসেবা নিতে আসা শত শত মানুষ।
কর্মবিরতির অংশ হিসেবে এদিন দুপুরে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে তারা মানববন্ধন করেন।
ওসমানী হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. মুশফিকুজ্জামান আকন্দ বলেন, শজিমেকের চার ইন্টার্নের শাস্তি বাতিল ও চিকিত্সকদের নিরাপত্তার দাবিতে তারা আন্দোলন করছেন।
রংপুর
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সকাল ৯টা থেকে কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। এতে চিকিৎসা ব্যবস্থায় মারাত্মক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় কর্তৃপক্ষ বিশেষ ব্যবস্থায় চিকিৎসা দেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. অজয় কুমার রায় জানান, তিনি বিশেষ ব্যবস্থায় রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা হাতে নিয়েছেন।
রাজশাহী
সকাল ৮টা থেকে ৭২ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন শুরু করেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ইন্টার্নরা। দাবি না মানলে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। রামেক হাসপাতাল ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মুখপাত্র রায়হান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জ নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতি, মানববন্ধন ও সংক্ষপ্তি সমাবেশ করেছেন।
দুপুরে হাসপাতাল চত্বরে ইন্টার্ন চিকিৎসক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. আশরাফুল ইসলাম শুভ্রর সভাপতিত্বে এ কর্মসূচি পালন হয়। তিন দিন তারা কর্মবিরতি পালন করবেন বলে ঘোষণা দেন।
নোয়াখালী
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ৫৭ ইন্টার্ন চিকিৎসক দুপুর ১টা থেকে লাগাতার কর্মবিরতি পালন শুরু করেন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানান ইন্টার্ন চিকিৎসক কায়নাত, শহীদ, মেহেদী, কাজল ও মিল্লাত।
ময়মনসিংহ
আজ কর্মবিরতি পালন করেছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। দাবি পূরণ না হলে সোমবার থেকে ধর্মঘট ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানান ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি তাওহিদ উজ্জামান।
বাংলা৭১নিউজ/এম