হবিগঞ্জে ভুয়া জামিননামা দিয়ে কারাগার থেকে বের হয়ে গেছেন মাদক মামলার চার আসামি। বুধবার (২৯ জানুয়ারি) তারা কারাগার থেকে বের হয়ে পালিয়ে যান।
তারা হচ্ছেন, সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার সিমছাপৈর আব্দুল কদ্দুছের ছেলে রুয়েল আহমেদ (২৬), একই উপজেলার কিরদা কাপন গ্রামের কিরণ মিয়ার ছেলে আলী হোসেন ওরফে আফজাল হোসেন (২২), শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাগলা গ্রামের শাজলু মিয়ার ছেলে আজাদ মিয়া (২৩) ও বীরগাঁও গ্রামের লেবু মিয়ার ছেলে সোয়েব মিয়া (২৭)।
কারাগারের জেলার মো. মনির হোসেন চৌধুরী জানান, কোর্ট থেকে ছাড়পত্র এসেছে। পিয়নের মাধ্যমে এ ছাড়পত্র এসেছে। তাই আসামি আটকে রাখার আমার কোনো সুযোগ নেই। বুধবার বিকেলে এ অর্ডার আসে। বিকেলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর ভুয়া জামিননামার বিষয়টি আজ (বৃহস্পতিবার) বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ফয়সল আহমেদ জানান, বুধবার নিম্ন আদালতে উক্ত মামলার ধার্য তারিখ ছিল। এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে তাদের জামিন শুনানি করলে বিচারক তাদের জামিন নামঞ্জুর করেন।
মামলাটি হাইকোর্টে পাঠানোর জন্য আমি প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আসামির স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানায় বুধবার তারা জামিন নিয়ে বাড়ি চলে গেছেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি নিম্ন আদালতে মামলার মূল নথিই ছিল না।
ডেসপাস শাখায় গিয়ে জানতে পারি ২৯ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) তাদের জামিননামা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সেটি কিভাবে সম্ভব হলো তা আমি বলতে পারছি না। যেখানে আদালতে মামলার নথিই নাই সেখানে জামিন হয় কিভাবে?
এ বিষয়ে কোর্ট ইন্সপেক্টর শেখ নাজমুল হোসেনের সঙ্গে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির শাকিল আহমেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহার সূত্র জানায়, ৬ জানুয়ারি সকাল পৌনে ৭টার দিকে মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া রেলক্রসিং মসজিদের সামনে একটি প্রাইভেট কার জব্দ করে র্যাব। এ সময় গাড়ি তল্লাশি করে দুটি পাটের বস্তায় ৮ পুটলায় ৩৫ কেজি গাঁজা পাওয়া যায়।
যার বাজারমূল্য প্রায় ৭ লাখ টাকা। র্যাব গাঁজাসহ উল্লেখিত চারজনকে আটক করে মাধবপুর থানায় সোপর্দ করে। পরে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়।
গত ৮ জানুয়ারি আইনজীবী ফয়সল আহমেদ আসামিদের জামিনের জন্য আবেদন করলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফখরুল ইসলাম জামিন নামঞ্জুর করেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে ১৬ জানুয়ারি দায়রা জজ আদালতে মিস মামলা করেন ওই আইনজীবী।
২৬ জানুয়ারি মামলাটি শুনানি শেষে দায়রা জজ জেসমিন আরা বেগম আসামিদের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন। মামলার সার্টিফাইট কপি সংগ্রহ করে হাইকোর্টে জামিন আবেদনের প্রস্তুতি নেন তিনি।
আসামিদের ওকালতনামায় স্বাক্ষর নেয়ার জন্য আইনজীবীর সহকারী আসামিদের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান আসামিরা জামিন পেয়ে বাড়ি চলে গেছেন।
বিষয়টি সন্দেহ হলে আইনজীবী ফয়সল আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় মূলনথি পর্যালোচনা করে দেখেন সেখানে কোনো জামিন নামার কপি সংরক্ষিত নেই। পরে তিনি কোর্ট পুলিশ অফিসে ডেসপাস রেজিস্ট্রার পরীক্ষা করে দেখতে পান উল্লেখিত আসামিদের জামিননামা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ