বাংলা৭১নিউজ, এ কে এম আব্দুল্লাহ, নেত্রকোনা প্রতিনিধি: সঠিক পরিকল্পনার অভাব ও ভারী যান চলাচলের কারণে মোহনগঞ্জ-গাগলাজুর জিসি সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হতে না হতেই বিভিন্ন স্থান ধেবে যাওয়ায় সড়ক নির্মাণের সুফল পাচ্ছে না এ অঞ্চলের কৃষকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শুষ্ক মওসুমে হাওরাঞ্চলে সহজে যাতায়াত ও কৃষকদের উৎপাদিত প্রধান ফসল ধান সহজে ঘরে তোলা এবং বাজারজাত করণের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর জাইকা’র সহযোগিতায় প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যায়ে মোহনগঞ্জের তেতুলিয়া থেকে গাগলাজুর পর্যন্ত সাড়ে ৫ কিলোমিটার ডুবন্ত সড়ক নির্মাণ ও মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘মের্সাস সমিরন চৌধুরী কনষ্ট্রাকশান ফার্ম’
গত বছর নির্মাণ কাজ শুরু করার পর হঠাৎ প্রবল বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ী ঢলের কারণে হাওরে পানি প্রবেশ করায় নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেনি। এ বছর শুষ্ক মওসুমে পূনরায় সড়ক নির্মানের কাজ শুরু করা হয়। আগাম বন্যায় হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে গত বছর হাওরের ফসল সম্পূর্ণ তলিয়ে যায়। হাওরের ফসল রক্ষায় বর্তমান সরকার এ বছর অধিক বরাদ্দ দিয়ে বাঁধ নির্মাণের উপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করে। এপ্রিলের প্রথম দিকে হাওরে বিআর-২৮ ধান কাটা শুরু হয়।
সড়ক নির্মাণ কাজের শেষ হতে না হতেই সড়কের বিভিন্ন স্থানে স্লাব ধেবে যাওয়ায় কৃষকরা হাওরের ফসল যেমন সহজে ঘরে তুলতে পারছে না, তেমনি সহজে বাজারজাত করতে না পারায় তারা তাদের উৎপাদিত ধানের দাম কম পাওয়ায় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষকরা।
গাগলাজুর গ্রামের কৃষক সবুজ মিয়া বলেন, রাস্তায় গর্ত হওয়ায় আমরা হাওর থেকে সহজে ধান বাড়িত আনতে পারতাছি না। ক্ষেতের কানিত ধান বেচতাছি ৫ শ থাইক্যা সাড়ে ৫ শত টেহা মন। অথত ২/৩ মাইল রাস্তা পারঅইলেই মনেতে ২ শ টেহা বেশী দরে ধান বেচন যায়। রাস্তা খারাপের কথা কইয়া বেপারীরা আমরারে টগাইতেছে।
ভাড়ায় মোটর সাইকেল চালক বরান্তর গ্রামের কাশেম জানান, হাওরাঞ্চলের প্রসিদ্ধ ব্যবসা কেন্দ্র গাগলাজুর বাজার। এ বাজারে পাথর ও বালুর ঘাট রয়েছে। রাস্তা নির্মাণের সময় প্রতিদিন বড় বড় ট্রাক ও লড়ি এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। নির্মাণাধীন রাস্তায় মালবাহী ট্রাক ও লড়ি চলাচল করার কারণে রাস্তার বিভিন্ন অংশে ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়।
পথচারী শংকর তালুকদার জানান, রাস্তা নির্মাণের সময় দেখেছি, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের চেয়ে জাইকা’র লোকজনসহ ইঞ্জিনিয়াররা সার্বক্ষনিক দাড়িয়ে থেকে তদারকি করছে। তারপরও রাস্তার বিভিন্ন অংশ কেন ধেবে গেছে, তারাই ভাল বলতে পারবে।
ঠিকাদার গাজী মোসাদ্দেক হোসেন রতন বলেন, সিডিউল অনুযায়ী আমরা গত বছর সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করি। চার ভাগের তিন ভাগ কাজ শেষ করার পর হঠাৎ ঢলের পানি চলে আসায় নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ ভাবে শেষ করা সম্ভব হয়নি। এ বছরের শুরুতে পূনরায় নির্মাণ কাজ শুরু করা হলে বাঁধ নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত ২০/২৫ টন ওজনের ভারী ভ্যাকু মেশিন এ সড়কে চলাচল করায় সড়কের কয়েক স্থান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ স্থান মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ধান বোঝাই ট্রাক চলাচল করায় এসব স্থান মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে মোহনগঞ্জ উপজেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকৌশলী মোঃ মাহবুব আলম জানান, সড়ক নির্মাণ পরিকল্পনায় সড়কের নিচের অংশে ইটের সলিং ধরা নাই। সিডিউল অনুযায়ী শুধুমাত্র রডের উপর ৬ ইঞ্চি ঢালাই করা হয়েছে। নির্মাণ কাজ চলার সময় চর হাইজদা বাঁধ নির্মাণের জন্য ভারী ভারী ভ্যাকু মেশিন ও মাত্রাতিরিক্ত ধান বোঝাই ট্রাক চলাচল করায় সড়কের কয়েকটি স্থান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক পূনঃনিমৃানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস