মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২০ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
যশোরে মরুর উত্তাপ, দেশের সর্বোচ্চ ৪৩.৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড ‘প্রবাসীদের সমস্যা আমার জানা, সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ দুদকের প্রথম নারী মহাপরিচালক শিরীন পারভীন ইসলামী ব্যাংকের কুমিল্লা জোনের কর্মকর্তা সম্মেলন অনুষ্ঠিত ২০ মে থেকে ৬৫ দিন সমুদ্রে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বইপড়া কর্মসূচিতে ৩৯ হাজার বই দিলো বিকাশ ফিলিস্তিনিদের ধাওয়া খেয়ে পালালেন জার্মান রাষ্ট্রদূত বৃক্ষরোপণে ন্যাশনাল গাইডলাইন্স প্রণয়নের নির্দেশ পরিবেশমন্ত্রীর বৃষ্টিতে সিলেটে বন্ধ বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ গুচ্ছের ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এ’ ইউনিটের ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ৫০৭৬০ সাংবাদিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠাই হোক মে দিবসের অঙ্গীকার দাবদাহে দ্বিগুণ সেচ খরচে দিশেহারা চাষিরা রেলওয়ের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে চায় রাশিয়া ১৫ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতিতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে ৩৬ বছরে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ ৪৩.৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড মুন্সিগঞ্জে হিট স্ট্রোকে দুজনের মৃত্যু বন্যা আতঙ্কে দ্রুত ধান কাটছেন হাওরের কৃষকরা ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক দিয়ে ঢাকায় সড়ক নির্মাণ ভরিতে আরও ৪২০ টাকা কমলো সোনার দাম পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ

ভারতে এসে কি ভুল করলাম? প্রশ্ন সাবেক ছিটমহলে

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় সোমবার, ১ আগস্ট, ২০১৬
  • ১৩৬ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময়ের পরে যে নয়শোর কিছু বেশি মানুষ ভারতীয় ছিটমহলগুলো থেকে মূল ভূখণ্ডে চলে গিয়েছিলেন – তাঁদের একটা বড় অংশ এখন ভাবছেন ভারতে চলে আসার সেই সিদ্ধান্ত হয়তো ভুল ছিল।

তাঁদের অভিযোগ, যেসব প্রতিশ্রুতি ভারত দিয়েছিল তার প্রায় কিছুই পূরণ করা হয়নি।

আবার বাংলাদেশি ছিটমহলগুলোর সব মানুষই ভারতের নাগরিকত্ব নিয়েছিলেন। তাঁরা নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র পেয়েছেন ঠিকই; তবে না পেয়েছেন জমির দলিল, না হয়েছে রাস্তা, আসেনি বিদ্যুৎ! উল্টো স্থানীয় রাজনীতি ঢুকে পড়ে বাড়িয়েছে অশান্তি।

ঠিক এক বছর আগে, ৩১শে জুলাই আর পয়লা অগাস্টের মাঝ রাতে ভারত আর বাংলাদেশের মধ্যে ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় সম্পন্ন হয়েছিল।

৫১টি বাংলাদেশি ছিটমহল মিশে গিয়েছিল ভারতের সঙ্গে আর ১১১টি ভারতীয় গ্রাম হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের অঙ্গ।

ওই পূর্বতন ভারতীয় ছিটমহলগুলো থেকে প্রায় সাড়ে নয়শো মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ভারতের মূল ভূখন্ডে চলে আসার। তাঁদের স্থায়ী বাসস্থান তৈরী না হওয়া অবধি রাখা হয়েছে কয়েকটি অস্থায়ী শিবিরে।

সারি দেওয়া টিনের ঘর – খুব গরম বা বেশী ঠান্ডায় ঘরে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কয়েকজন বৃদ্ধ গত শীতকালে ঠান্ডায় কাবু হয়ে মারাও গেছেন।

ওই অস্থায়ী শিবিরগুলিতে যা রেশন দেওয়া হয়, তাতে পরিবারগুলোর চালানো প্রায় অসম্ভব।

অন্যদিকে নেই রোজগার – তাই বাংলাদেশের ভেতরে ভারতীয় ছিটমহল থেকে চলে আসার আগে জমি জায়গা বা গবাদি পশু বেচে দিয়ে যে টাকা আনতে পেরেছিলেন, ব্যাঙ্ক থেকে সেই টাকা তুলেই সংসার চলছে এঁদের।

পূর্বতন ভারতীয় ছিটমহল দহলা খাগড়াবাড়ীর লক্ষ্মী বর্মন বলছিলেন, “ওখানে সাজানো সংসার নষ্ট করে দিয়ে চলে এলাম। অনেক আশা নিয়ে এসেছিলাম, কিন্তু কিছুইতো পেলাম না এখনও পর্যন্ত। যদি সরকার কিছু না দিতে পারে, তাহলে ফেরত পাঠিয়ে দিক আমাদের”।

লক্ষ্মী বর্মনেরই কথার প্রতিধ্বনি শুনতে পেলাম হলদিবাড়ি শিবির অথবা দিনহাটা শহরের আরেকটি অস্থায়ী শিবিরের আরও অনেকের কাছেই।

হলদিবাড়ির হরি বর্মন, সন্তোষ রায়, মানিক হেমব্রম অথবা দিনহাটার মুহম্মদ উমর ফারুক, কাচুয়া বর্মনরা বলছিলেন যদি প্রতিশ্র“তি পালন না করতে পারে ভারত সরকার, তাহলে যেন ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয় বাংলাদেশে।

সেখানে নাগরিকত্ব যদি না-ও পাওয়া যায়, কোনও মতে জীবিকা নির্বাহ করে নেবেন তাঁরা। ভারতের মূল ভূখন্ডে চলে আসার সিদ্ধান্তটা হয়তো ভুলই ছিল বলে মনে হতে শুরু করেছে তাঁদের।

অস্থায়ী শিবির থেকে কবে স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে, সেটাও বুঝতে পারছেন না এঁরা। আর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাই বা কি হবে, সেটাও অজানা।

পশ্চিমবঙ্গ সরকার সাবেক ছিটমহলগুলোর বাসিন্দাদের ভোটার পরিচয়পত্র দিয়েছে, নাগরিক পরিচয় আধার কার্ড দিয়েছে আর ৩১ অগাস্ট থেকে রেশন কার্ড বিলি করা শুরু করেছে।

পূর্বতন বাংলাদেশী ছিটমহল কিসমাত বাত্রিগাছের বাসিন্দা আঞ্জুয়ারা বিবির কথায়, “সরকার মুরগির বাচ্চা দিয়েছে। ভোটের কার্ড দিয়েছে প্রায় সবাইকে – কিন্তু তাতে আমার বাবার নামের জায়গায় স্বামীর নাম লেখা হয়েছে। এরকম ভুল প্রায় সবার কার্ডেই। আধার কার্ডও দিয়েছে। কিন্তু রাস্তা, বিদ্যুৎ, স্কুল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, সেচের ব্যবস্থা কিছুই করে উঠতে পারেনি এখনও সরকার’’।

ওসধমব পড়ঢ়ুৎরমযঃ ইইঈ ইধহমষধ ওসধমব পধঢ়ঃরড়হ নানা স্বপ্ন পূর্ণ হয়নি, তবে বাড়ির মহিলাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম থেমে নেই

একই কথা বলছিলেন ওই গ্রামেরই বাসিন্দা অনিল বর্মন, অনন্ত বর্মনরা।

অথচ ঠিক এক বছর আগের এই দিনে কতই না আনন্দ – হুল্লোড় হয়েছিল সাবেক বাংলাদেশী ছিটমহল এই গ্রামে। ৩১শে জুলাই আর পয়লা অগাস্টের মাঝরাতে জাতীয় পতাকা উঠেছিল, ঘরে ঘরে মোমবাতি জ্বালানো হয়েছিল মিষ্টি বিতরণ হয়েছিল।

“সেদিন আনন্দ করেছিলাম আর এখন তো নিরানন্দ। আগে পরিচয়পত্র ছিল না, কিন্তু গ্রামে শান্তি ছিল। এখন রাজনীতি ঢুকে পড়ে তো আমাদের হয়েছে জ্বালা,” বলছিলেন পোয়াতুরকুঠি ছিটমহলের কয়েকজন বাসিন্দা নজরুল শেখ, হাশেম আলি মুনাব আলি নিরঞ্জন সরকার আর হেমন্ত বর্মনরা।

এই সাবেক বাংলাদেশি ছিটমহল পোয়াতুরকুটিতেই পয়লা অগাস্ট প্রথমবারের মতো ভারতের জাতীয় পতাকা তুলে বিনিময়ের আনুষ্ঠানিকতা পূর্ণ করেছিলেন কোচবিহারের জেলাশাসক।

একবছরে কী পেলেন, জানতে চাওয়ায় পোয়াতুরকুটির এক বাসিন্দা তো ক্ষুব্ধ হয়ে বলেই দিলেন, “জমির কাগজই পেলাম না একবছরে আর জানতে চাইছেন কী পেয়েছি?”

সাবেক ছিটমহলগুলোতে এখনও শুরু হয়নি জমি জরিপ। আর তার ফলে ছিটমহলগুলোর জমির মালিকানা এখন কারোরই নেই – সব জমিই স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী সরকারের হয়ে গেছে। আগে অর্থের প্রয়োজনে অন্তত জমি বন্ধক রাখা যেত, এখন সেটাও বন্ধ।

তবে সাবেক ছিটমহলের একটা বিষয়ে যে পরিবর্তন যে হয়নি, সেটা জানার জন্য কারও সঙ্গে কথা বলতে হল না গাঁজা গাছ!

অনেক বাড়িতেই যেমন আগেও গাঁজা চাষ হত, এখনও সেই গাছগুলো চোখে পড়ল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে কতটা নজরে আছে সাবেক ছিটমহলগুলো – এটা তার একটা প্রমাণ।

ভারতে যোগ দেওয়া সাবেক বাংলাদেশী ছিটমহলগুলো থেকে কেন এত অভিযোগ উঠছে? জানতে চেয়েছিলাম উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী এবং কোচবিহার জেলায় তৃণমূল কংগ্রেস দলের সর্বোচ্চ নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষের কাছে।

মন্ত্রী বলছেন, “অভিযোগ তোলার জন্যই অভিযোগ করা হচ্ছে। বাইরের কিছু লোক গিয়ে ওদের উস্কাচ্ছে। সবে তো একবছর হয়েছে – তার মধ্যে ওরা ভোটাধিকার তো পেয়েছে, ১০০ দিনের কর্ম সুনিশ্চিতকরণ প্রকল্পের কার্ড পেয়েছে। আর কাজ করা সম্ভব কিভাবে হবে? তিনমাস ভোটের জন্য রাস্তা –বিদ্যুৎ – অঙ্গনওয়াড়ি কিছু করা যায়নি। তারপর চারমাস ধরে বর্ষা চলছে। কেন্দ্র থেকে ১৭০ কোটি টাকা এসেছে। বর্ষার পরেই কাজ শুরু হবে’’।

সাবেক ভারতীয় ছিটমহলগুলো থেকে যাঁরা চলে এসেছেন আর এখন নিজেদের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল কী না, সেটা ভাবছেন।

তাঁদের অভাব অভিযোগের ব্যাপারে মন্ত্রী বলছিলেন, “আর্থিক প্যাকেজ দেওয়া হবে, এরকম ঘোষণা কোথাও করা হয়নি। ওঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা আমরা করব। শিবিরগুলোতেতো অনেক রকম সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে ওঁদের জন্য। অধৈর্য হলেতো হবে না। সময় দিতে হবে’’।

অপেক্ষা হয়তো সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দারা করবেনই। নাগরিকত্বহীন, পরিচয়হীন অবস্থায়ও তো ৬৮ বছর অপেক্ষা করেছেন তাঁরা। স্থলসীমান্ত চুক্তি ভারতের পার্লামেন্টে অনুমোদিত হওয়ার জন্যও তো তাঁদের অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রায় চার দশক।

তাই অপেক্ষা করাটা হয়তো তাঁদের সাবেক ছিটমহলের মানুষের জীবনের অঙ্গই হয়ে গেছে এখন।

সূত্র: বিবিসি

বাংলা৭১নিউজ/সিএইস

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com