উপমহাদেশের প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক ‘পদ্মশ্রী’ পদক গ্রহণ করেছেন। সোমবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় দিল্লিতে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে দেশটির রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর হাত থেকে পদ্মশ্রী পুরস্কার নেন তিনি। রবীন্দ্র সঙ্গীতের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে এ সম্মাননা দিয়েছে ভারত সরকার।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর পাঁচজন গুণী ব্যক্তিত্বকে পদ্মবিভূষণ, ১৭ জনকে পদ্মভূষণ ও ১১০ জনকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। তাদের মধ্যে ৩০ জন নারী, ৮ জন বিদেশি এবং ৯ জন মরণোত্তর পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিও রয়েছেন।
পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়সহ বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৫ জানুয়ারি ভারত সরকার ২০২৪ সালের পুরস্কারপ্রাপ্তদের নামের তালিকা প্রকাশ করে। সোমবার বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এসব সম্মাননা সমাজের নানা ক্ষেত্রে অবদান রাখা ব্যক্তিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ২০১৬ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পদক পান। এছাড়াও তিনি বহু পুরস্কার পেয়েছেন। ‘পদ্মশ্রী’ ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কারগুলোর মধ্যে একটি। প্রতি বছর ‘পদ্মবিভূষণ’, ‘পদ্মভূষণ’ এবং ‘পদ্মশ্রী’ নামে তিনটি বিভাগে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
১৯৫৭ সালে রংপুর জেলায় বন্যার জন্ম। চাচা আব্দুল আলীর কাছ থেকে তার প্রাথমিক গানের পাঠ নেন। পরবর্তীকালে এই সংগীত চর্চা সনজিদা খাতুন এবং আতিকুল হকের তত্ত্বাবধানে ঢাকার ছায়ানট এবং বুলবুল একাডেমি অফ ফাইন আর্টস (বাফা) এ অব্যাহত থাকে।
পরে তিনি ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস’ (আইসসিআর) থেকে শান্তি নিকেতনের সঙ্গীত ভবনে পড়ার জন্য বৃত্তি পান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
তিনি বিশিষ্ট রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীলিমা সেন, শৈলজারঞ্জন মজুমদার, শান্তিদেব ঘোষ, গোরা সর্বাধিকারি, মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আশেষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে শিক্ষা নেন।
বিশ্বভারতী থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের কয়েক বছর পর তিনি কণিকা ব্যানার্জির অধীনে বর্ধিত সময়ের জন্য ব্যক্তিগত সেশনে প্রশিক্ষণ নেন। ২০২১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্র সঙ্গীতের ওপর তার গবেষণা সম্পন্ন করেন এবং এর জন্য পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
বন্যা বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্য বিভাগের অধ্যাপক ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। এর আগে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন।
রবীন্দ্র সঙ্গীতের প্রচার ও প্রসারে বন্যা একজন প্রবর্তকের ভূমিকা পালন করেন। এ লক্ষ্যে ১৯৯২ সালে ঢাকার একটি মর্যাদাপূর্ণ সঙ্গীত বিদ্যালয় ‘সুরের ধারা’ প্রতিষ্ঠা করেন।
২০২২ সালে বাংলাদেশ সরকার আত্মজীবনী ও ফটোগ্রাফ সম্বলিত বন্যার পাঁচ হাজার গান সংরক্ষণ করে একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে।
বন্যা শিল্প ও সঙ্গীতের ক্ষেত্রে তার অবদানের জন্য মর্যাদাপূর্ণ স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। অন্য পুরস্কারগুলোর মধ্যে রয়েছে- সেরা নারী রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী হওয়ার জন্য আনন্দ সঙ্গীত পুরস্কার (২০০২), গানে গানে গুণীজন সংবর্ধনা (২০১১), ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৩ সালে সঙ্গীত সম্মান পুরস্কার, বঙ্গ ভূষণ (২০১৭), ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক (২০১৭), পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক সঙ্গীত মহা সম্মান (২০১৭), এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (২০১৯) থেকে অনারারি ডক্টরেট অফ আর্টস সম্মাননা উল্লেখযোগ্য।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ