স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আগামী ২৬ মার্চ বাংলাদেশ সফরে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর এই সফর উপলক্ষে বিভিন্ন পর্যায়ে এরই মধ্যে নানা প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে লিখিত কোনো নির্দেশনা না দেওয়া হলেও ভারতীয় ঋণের (এলওসি) প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি তুলে ধরার বিষয়ে প্রস্তুতি শেষ করেছে সরকার। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) বিভিন্ন সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
ইআরডির সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পর্যালোচনসভার সারসংক্ষেপ এরই মধ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে। সেই সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, তিনটি এলওসি মিলে ভারতীয় অর্থায়নে মোট ৪৬টি উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে বাংলাদেশে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে প্রথম এলওসির আওতায় ১৪টি প্রকল্পের। আটটির কাজ চলমান। বাকিগুলোর দরপত্র (প্রকিউরমেন্ট) চলমান এবং ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংশোধন বা প্রক্রিয়াধীন।
ইআরডির বৈদেশিক সাহায্যের বাজেট ও হিসাব শাখা (ফাবা উইং) সূত্র জানায়, প্রথম লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় প্রতিশ্রুতি ছিল ১০০ কোটি ডলারের। এর মধ্যে ঋণ ৮০ কোটি ডলার এবং অনুদান ২০ কোটি ডালার। এ বিপরীতে গত ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছাড় হয়েছে ৬২ কোটি ৮৯ লাখ ৮৭ হাজার ডলার বা পাঁচ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। এ ছাড়া দ্বিতীয় এলওসির আওতায় প্রতিশ্রুতি ছিল ২০০ কোটি ডলার।
এর বিপরীতে গত ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছাড় হয়েছে ৯ কোটি ৪০ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এ ছাড়া তৃতীয় এলওসির আওতায় প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ৪৫০ কোটি ডলার। এর মধ্যে গত ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছাড় হয়েছে ৬৩ লাখ ৯০ হাজার ডলার বা প্রায় ৫৩ কোটি টাকা।
ইআরডি সূত্র জানায়, ২০১০ সালের ৭ আগস্ট ভারতের সঙ্গে ১০০ কোটি ডলারের প্রথম ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। পরবর্তী সময়ে ২০ কোটি ডলার অনুদানে রূপান্তর করে ভারত। এর আওতায় ১৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা। এগুলোর মধ্যে ১২টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ হয়েছে। তিনটির কাজ চলমান।
এ ছাড়া ২০১৫ সালের জুন মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় দ্বিতীয় এলওসির আওতায় ২০০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার দ্বিতীয় সমঝোতা চুক্তি হয়। পরে ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি হয়। এই ঋণের আওতায় ১৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে দুটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন হয়েছে। চারটির কাজ চলছে। চারটি প্রকল্পের দরপত্র কার্যক্রম চলছে এবং পাঁচটি প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি বা সংশোধনের কাজ হচ্ছে।
এ ছাড়া ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে ঢাকায় সে সময়কার ভারতীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এবং বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের উপস্থিতিতে ৪৫০ কোটি ডলারের তৃতীয় এলওসির ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর আওতায় ১৬টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এখন পর্যন্ত মাত্র একটি প্রকল্পের (রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র) কাজ চলমান। সাতটি প্রকল্পের দরপত্রসংক্রান্ত কার্যক্রম চলমান এবং আটটি প্রকল্পের ডিপিপি তৈরির কাজ চলছে।
এ প্রসঙ্গে ইআরডির যুগ্ম সচিব ও এশিয়া উইংয়ের প্রধান শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আসলে নরেন্দ্র মোদির এই সফর মুজিববর্ষকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এখন পর্যন্ত আমরা জানি না ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময় ভারতীয় ঋণের প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করা হবে কি না। সে বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানবে। তবে আমাদের কাছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে তথ্য চাওয়া হলে, সর্বশেষ অগ্রগতির তথ্য আমাদের হাতে রয়েছে।’
বাংলা৭১নিউজ/এমকে