বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: ভারতশাসিত কাশ্মীরে পুলিশ কর্মীদের উভয় সঙ্কট।
একদিকে তাদের সশস্ত্র আন্দোলনকারী বা বিক্ষোভকারীদের মোকাবিলা করতে হয়, আবার অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দৈনন্দিন কাজের দায়িত্বও সামলাতে হয় তাদের। গত কয়েক মাস ধরে তাই বারে বারেই চরমপন্থিরা নিশানা করছে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের পুলিশকে। গত চারমাসে চরমপন্থি হামলায় ১৬জন পুলিশ-কর্মী মারা গেছেন।
কাশ্মীরের পুলিশ স্বীকার করছে যে তাদের একটা নয়, একই সঙ্গে অনেকগুলো ফ্রন্টে লড়াই করতে হচ্ছে।
তারা যেমন চরমপন্থি-দমন অভিযানে অংশ নেয়, তেমনই আবার পাথর ছুঁড়ে যারা বিক্ষোভ দেখান, তাঁদেরও মোকাবিলা করতে হয় সেই পুলিশকেই।
তবে সেনা বা অন্যান্য নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের থেকে পুলিশের কাজটা কিছুটা ভিন্ন। জম্মু-কাশ্মীরের পুলিশ সদস্যরা ওই রাজ্যেরই বাসিন্দা। সাধারণ মানুষ কিন্তু পুলিশ আর সেনা বা অন্যান্য নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের একই চোখে দেখে।
এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছিলেন, “আমার বাড়ি গ্রামের দিকে, ডিউটি করি শ্রীনগরে। কিন্তু বাড়ি যেতে পারি না, কারণ আমার এলাকায় চরমপন্থিদের খুব দাপট। গ্রামের বাড়িতে যাওয়া মানে আত্মহত্যা করা।”
জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল মুনীর খান বিবিসি-কে বলছিলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব তো ছিলই আমাদের ওপরে, কিন্তু কিছুদিন হল সেই সব লোকেদেরও মোকাবিলা করতে হচ্ছে, যারা চরমপন্থিদের নানাভাবে সাহায্য করছে। চরমপন্থিরা এই ধরণের মানুষদের ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ওপরে নতুন চাপ সৃষ্টি করছে।”
“যেসব পুলিশ-কর্মী চরমপন্থি-দমন অভিযানে কাজ করেন, তাদের জীবনের ঝুঁকিটা খুবই বেশী। এই সব পুলিশ কর্মীরা সফট টার্গেট হয়ে যাচ্ছেন। কিছুদিন আগে চরমপন্থি দমন অভিযানের সময়ে আমাদের এক অফিসার মারা গেছেন, আরেকজনকে গত সপ্তাহে পিটিয়ে মেরে ফেলা হল। কিছু মানুষ চাইছেন না যে পুলিশও চরমপন্থি দমন অভিযানে সামিল হোক। কিন্তু তাই বলে কি আমরা দায়িত্ব থেকে সরে আসব? এটা তো আমাদের চাকরী,” বলছিলেন মি. খান।
আরেক পুলিশ কর্মকর্তা জানাচ্ছিলেন চরমপন্থি দমন অভিযানে অংশ নেওয়ার কারণে পুলিশের একটা সামাজিক সঙ্কটও তৈরি হচ্ছে।
“চরমপন্থি দমন অভিযান থেকে যদি পুলিশকে সরিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে আমাদের ওপরে যে রাগ-ক্ষোভ রয়েছে সাধারণ মানুষের, সেটা আর থাকবে না। পুলিশকেও তারা নিজেদের শত্রু মনে করছে। কিন্তু আমরা তো শুধু কর্তব্য করছি,” বলছিলেন ওই অফিসার। ওই কর্মকর্তাই শোনাচ্ছিলেন তাঁর এক সহকর্মীর জীবনের ঘটনা।
পুলিশের চাকরীতে যোগ দেওয়ার আগেই তাঁর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিল। বিয়ের সব ব্যবস্থা ঠিকঠাকই এগোচ্ছিল। কিন্তু তারমধ্যেই ওই পুলিশ আধিকারিক চাকরীর পরীক্ষায় পাশ করে বাহিনীতে যোগ দেন। পাত্রীর বাবা ওই বিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছিলেন – পুলিশের চাকরীতে যোগ দেওয়ার জন্য।”তাহলেই বুঝুন কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ আমাদের কী চোখে দেখে,” বলছিলেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
আধিকারিকদের সঙ্গে কথায় কথায় আরও একটা সমস্যা উঠে এল – পুলিশের জন্য আলাদা কলোনি নেই।
“সারাদিন যাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে, ডিউটির শেষে রাতে, তাদেরই সঙ্গে থাকতে হচ্ছে – একই এলাকায়। আমাদের নিরাপত্তার গ্যারান্টি কোথায়?” প্রশ্ন এক অফিসারের।
আরেকজন বলছিলেন, “কেউ যদি কাশ্মীরে আমাকে জিজ্ঞাসা করে যে আমি কী কাজ করি, পুলিশের চাকরীর কথা কোনওমতেই আমার মুখ দিয়ে বেরয় না।”
“গতবছর যখন মাসের পর মাস বিক্ষোভ চলছিল গোটা কাশ্মীর জুড়ে, সেই সময়ে এক পুলিশ-কর্মী বাড়ি ফিরছিলেন। রাস্তায় বিক্ষোভকারীরা তাঁকে ঘিরে ধরে পরিচয় পত্র দেখতে চায়। পরিচয় পত্রটা ভাগ্যিস সঙ্গে ছিল না। পুলিশে কাজ করে জানতে পারলে প্রাণ নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারত না ও,” বলছিলেন এক অফিসার।
কয়েক মাস আগে দক্ষিণ কাশ্মীরে কর্মরত বেশ কয়েকজন পুলিশ আধিকারিকের বাড়িতে গিয়ে চরমপন্থিরা তাদের পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিয়ে এসেছিল। ওই ঘটনায় কড়া ব্যবস্থা নিয়েছিল পুলিশ।
বাংলা৭১নিউজ/সূত্র:শ্রীনগর থেকে মাজিদ জাহাঙ্গীর,বিবিসিবাংলা/এসকে