বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েও অন্তত ৫৫ হাজার শিক্ষার্থী ‘পছন্দের কলেজে’ ভর্তি হতে পারবে না। মোট জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর তুলনায় ‘ভালো কলেজ’-এ আসন সংকটের কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
ফল হাতে পাওয়ার পর থেকেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিষয়টি নিয়ে উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন।
সরকার ইতিমধ্যে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির সময়সূচি ঘোষণা করেছে। আগামী ৯ মে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে। ওইদিন থেকে ৩১ মে পর্যন্ত অনলাইন ও এসএমএসে আবেদন নেয়া হবে। ১ জুলাই থেকে ক্লাস শুরু হবে। এ কারণে শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন কলেজে ভর্তির খোঁজখবর নেয়া শুরু করেছে।
বিশেষ করে বৃহস্পতিবার ফল প্রকাশের পর অনেককেই ভিকারুননিসা, আইডিয়াল, নটর ডেম, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজসহ নামকরা বিভিন্ন কলেজে খোঁজ নিতে দেখা গেছে। যদিও শিক্ষা বোর্ড শিক্ষার্থীর পছন্দের ১০ কলেজ থেকে ভর্তির জায়গা ঠিক করে দেবে। কিন্তু প্রত্যেক কলেজ ভর্তির শর্ত নিজেরাই নির্ধারণ করবে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ‘ভালো কলেজে’ ভর্তি সংকটের কথা সব সময় বলে থাকেন। তার মতে, ভর্তির জন্য আমাদের প্রচুর আসন আছে। ভর্তি হতে চাইলে একজন শিক্ষার্থীও সুযোগবঞ্চিত থাকবে না। তবে বড় কলেজে ভর্তির সংকট ছিল, থাকবে।
চলতি বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট জিপিএ-৫ধারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৪ হাজার ৭৬১ জন। জিপিএ-৫ এর চেয়ে কম কিন্তু জিপিএ-৪ কিংবা তার চেয়ে বেশি পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৫৪৫ জন। মূলত এই দুটি ক্যাটাগরির শিক্ষার্থীর লক্ষ্য থাকে নামকরা কোনো কলেজে ভর্তি হওয়া।
কিন্তু রাজধানী ও বিভাগীয় শহরগুলোসহ সারা দেশে জেলা পর্যায়ে এমন কলেজের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। বাংলাদেশ শিক্ষা, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) হিসেবে দেখা গেছে, সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তিযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৮ হাজার ৮৬৪টি। যার মধ্যে মানসম্মত কলেজের সংখ্যা মাত্র পৌনে দু’শ।
এসব কলেজে আসন সংখ্যা ৫০ হাজারের মতো। তাই ভালো ফল করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে যদি দেড় লাখও ওইসব কলেজ টার্গেট করে, সে ক্ষেত্রেই জটিলতা দেখা দেবে। তারা চাইলেও পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারবে না।
একাদশ শ্রেণীতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা ঢাকাসহ বিভাগীয় বড় কলেজে ভিড় করেন। কিন্তু শুধু জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদেরই সুযোগ করে দেয়ার মতো প্রতিষ্ঠান ঢাকা ও দেশের বড় শহরগুলোয় নেই। ব্যানবেইসের হিসাবে, ঢাকা বিভাগে ৭০টি, রংপুর বিভাগে রয়েছে ২৯টি, বরিশাল বিভাগে ১২টি, রাজশাহী বিভাগে পাঁচটি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭টি, খুলনা বিভাগে ১১টি এবং সিলেট বিভাগে ২২টি মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কলেজে স্ব স্ব বিভাগের জিপিএ-৫ধারীরাও ভিড় করলে সবার সংস্থান হবে না। সেক্ষেত্রে বাকিদের জন্য তেমন কোনো ভালো খবর প্রত্যাশা করা যায় না।
আবার রাজধানীতে মোট ১৪৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণী রয়েছে। এসব কলেজে মোট আসন আছে ৪৩ হাজার ৫১৯টি। এর মধ্যে ভালো মানের কলেজ আছে মাত্র ২০-২২টি, যেখানে আসন সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। বিপরীত দিকে ঢাকা বোর্ডেই এবার পাস করেছে ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৫৪০ জন। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৯ হাজার ৪৮১ জন। আবার জিপিএ-৪ থেকে ৫-এর মধ্যে পেয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮৪৮ জন।
এ পরিসংখ্যান অনুযায়ী ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ কতটা থাকবে, তা নিয়েও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। ভালো ফলের পর রাজধানীতে ছুটে আসা শিক্ষার্থীদের সুখবর নেই বললেই চলে; বরং জিপিএ-৪ এবং তারও কম নম্বর অর্জনকারীদের জন্য এ সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করবে।
বাংলা৭১নিউজ/এম