বাংলা৭১নিউজ,(মৌলভীবাজার)প্রতিনিধি: বড়লেখায় লন্ডন প্রবাসী ষাটোর্ধ্ব জয়নাল চৌধুরীর বাগান বাড়িতে নবীগঞ্জের তরুণীর মৃত্যু রহস্য উদ্ঘাটনে তদন্তে নেমেছে পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রবাসীর মোবাইল ফোনে মিসডকল দিয়ে তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে সাহিদা আক্তার (৩২)। একপর্যায়ে তার বড়বোন ও তার স্বামীসহ একটি চক্র লন্ডন প্রবাসীকে ব্ল্যাকমেইল করার চাপেই তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন বলে সংশ্লিষ্টরা সন্দেহ করছেন।
পুলিশ বলছে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরই নিশ্চিত হওয়া যাবে ঘটনা আত্মহত্যা নাকি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
এদিকে সাহিদার আত্মহত্যার ঘটনায় তার বাবা রব্বান মিয়া বুধবার লন্ডন প্রবাসী জয়নাল চৌধুরীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে বড়লেখা থানায় হত্যা মামলা করেছেন।
জানা গেছে, কয়েক মাস আগে বাংলাদেশি একটি মোবাইল ফোন থেকে মিসডকল পান বড়লেখার পানিশাইল গ্রামের লন্ডন প্রবাসী জয়নাল চৌধুরী। তাৎক্ষণিক তিনি কলব্যাক করে নারী কণ্ঠ শুনতে পান। এরপর থেকেই ষাটোর্ধ্ব জয়নাল চৌধুরীর সঙ্গে সাহিদার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
জয়নাল চৌধুরীর অভিযোগ সাহিদার সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়টি লুফে নেয় তার সুচতুর বড়বোন ও বোন জামাই ফুল মিয়া। তারা অসহায়ত্বের কথা বলে সাহিদার মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে কয়েক লাখ টাকা আদায় করেছেন। সহায়-সম্পত্তির খোঁজ-খবর নিতে জয়নাল চৌধুরী দেশে এলে সাহিদা আক্তার বাবা-মায়ের কথা বলে তাকে নবীগঞ্জে যাওয়ার চাপ দেন। তিনিও তরুণীর সান্নিধ্য পাওয়ার লোভ সামলাতে পারেননি।
ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে তিনি নবীগঞ্জের মিষ্টির দোকানে সাহিদার সঙ্গে দেখা করেন। সাহিদা ভাত খাওয়ার কথা বলে তাকে রেস্টুরেন্টে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে সাহিদার বড়বোন, বোনের ছেলে নয়ন মিয়া, বোন জামাই ফুল মিয়াসহ ১০-১২ জন আগে থেকে অবস্থান করছিল। তারা তাকে ঘেরাও করে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে বসতবাড়িতে নিয়ে যায়।
সাহিদার পরিবারের লোকজন তাৎক্ষণিক তাকে বিয়ে না করলে অবস্থা খারাপ হবে বলে হুমকি দেয়। এ সময় সাহিদা আক্তারের সঙ্গে দাঁড় করিয়ে অন্তরঙ্গ ভঙ্গিতে ছবিও তুলে নেয় তারা। অবস্থা বেগতিক দেখে হাতে-পায়ে ধরে সাহিদার সহযোগিতায় তিনি ফিরে আসেন। পরে তাদের হুমকিতে ২৫ ফেব্রুয়ারি নবীগঞ্জে গিয়ে বড়বোনের ছেলে নয়নসহ সাহিদাকে বড়লেখায় বাগান বাড়িতে নিয়ে আসেন।
কিন্তু এরইমধ্যে ভাগ্য বিড়ম্বিত সাহিদা আত্মহত্যার পথ বেছে নিলে প্রবাসী জয়নাল চৌধুরীকে ব্ল্যাকমেইল করে সম্পদ ও বড় অঙ্কের টাকা কামানোর সব স্বপ্ন-স্বাদ ভেস্তে যায়। ২৭ ফেব্রুয়ারি জয়নাল চৌধুরীর বাগান বাড়ির একটি কক্ষ থেকে সাহিদা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, সাহিদার আত্মহত্যার ঘটনার পর জয়নাল চৌধুরীর বাড়ি থেকে নয়ন নবীগঞ্জে তার বাবা ফুল মিয়ার সঙ্গে সাহিদার মোবাইল ফোন দিয়ে কথা বলে। কথা শেষ হতেই নয়ন মিয়া মৃত সাহিদার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি তাৎক্ষণিক ভেঙে চুরমার করে দেয়।
এদিকে মোবাইলটি ভেঙে ফেলার রহস্য উদ্ঘাটিত হলে সাহিদার মৃত্যু আত্মহত্যা নাকি হত্যা তা স্পষ্ট হবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন।
বড়লেখা থানার ওসি মো. ইয়াছিনুল হক জানান, নবীগঞ্জের তরুণী সাহিদা আক্তার নিহত হওয়ার ঘটনায় তার বাবা রব্বান মিয়া জয়নাল চৌধুরীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি পুলিশ জয়নাল চৌধুরীর বাগান বাড়িতে এক নারীর লাশ পড়ে রয়েছে খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে পরদিন ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করে।
বাংলা৭১নিউজ/এফআর