ব্রেক্সিট পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তিতে একমত হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাজ্য। কয়েক বছর ধরে চলা অচলাবস্থা এবং বিরোধপূর্ণ আলোচনার পর দু’পক্ষ এ চুক্তিতে সম্মত হলো। যার মাধ্যমে বিশৃঙ্খলাপূর্ণ বিচ্ছেদ থেকে রক্ষা পেয়েছে উভয়পক্ষ।
এক বিবৃতিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দফতর জানায়, ২০১৬ সালের গণভোট এবং গেল বছরের নির্বাচনে সাধারণ মানুষকে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে চুক্তির মাধ্যমে তা রক্ষা করা হয়েছে।
‘অর্থ, সীমানা, আইন, বাণিজ্য এবং মাছ ধরার অধিকার ফিরে পেয়েছি। এ চুক্তি প্রত্যেক ব্রিটিশ পরিবার এবং ব্যবসায়ীর জন্য চমৎকার সুখবর। আমরা শুল্কমুক্ত এবং শূন্য কোটার ভিত্তিতে প্রথম ইইউ’র সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সই করেছি।’ বলা হয় বিবৃতিতে।
ব্রেক্সিটের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের একক বাজার ছেড়ে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য। তখন অর্থনৈতিক ধাক্কা দু’পক্ষ কীভাবে সামলাবে তা নিয়ে দীর্ঘ ১০ মাস রুদ্ধদ্বার আলোচনা চলে। অবশেষে বৃহস্পতিবার ব্রেক্সিট পরবর্তী বাণিজ্য বিষয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছাল ব্রিটেন ও ইইউ।
টুইট বার্তায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভনদার লিয়েন বলেন, অবশেষে আমরা একটি চুক্তিতে পৌঁছেছি।
চুক্তিতে পৌঁছানোর পথ দীর্ঘ ও কঠিন ছিল বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, চূড়ান্তভাবে আমরা একটা ভালো চুক্তিতে পৌঁছাতে পেরেছি। একক বাজার সুষ্ঠু হবে এবং থাকবে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ওই অঞ্চলকে পুনর্নির্মাণের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন গঠিত হয়। প্রথম কোনো দেশ হিসেবে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ওই প্রকল্প থেকে সরে যাচ্ছে ব্রিটেন। ২০১৬ সালে গণভোটের মাধ্যমে ব্রিটেনের জনগণ ইইউ ছাড়ার পক্ষে রায় দেয়। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ছাড়ছে যুক্তরাজ্য।
৩১ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত ইইউ’র একক বাজার এবং কাস্টমস ইউনিয়নে থাকছে যুক্তরাজ্য। সে পর্যন্তই জোটের নিয়মনীতির অধীনে থাকছে দেশটি।
২ হাজার পৃষ্ঠার খসড়া নিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দর কষাকষি চলে। বিতর্কের মূল বিষয় ছিল ব্রেক্সিটের পর ব্রিটেনের জলসীমায় ইইউ মৎস্যজীবীদের মাছ ধরার সুবিধা বহাল রাখা নিয়ে।
রাজনৈতিক এ চুক্তি সইয়ের পর ভনদার লিয়েন কমিশন ইইউভুক্ত দেশগুলোকে এ বিষয়ে অবগত করবে।
ধারণা করা হচ্ছে চুক্তির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আগামী দুই, তিনদিন আলোচনা, চুলচেরা বিশ্লেষণ চলবে। নির্ধারণ করা হবে কিভাবে চুক্তির বিভিন্ন শর্ত বা ধারা বাস্তবায়ন করা যায় তার উপায়।
৩১ ডিসেম্বর জোট ত্যাগের আগে সরকারের চুক্তির ওপর ব্রিটিশ পার্লামেন্টারিয়ানরা ভোট দেবেন। চুক্তি সই হয়ে গেলে ইইউ অফিসিয়াল জার্নালে তা প্রকাশ করা হবে। যা কার্যকর হবে পহেলা জানুয়ারি থেকে। ইইউ কর্মকর্তারা জানান, শিগগিরই ইউরোপীয় পার্লামেন্টেও চুক্তির অনুমোদন হয়ে যাবে।
২০১৬ সালের গণভোটে ৫২ শতাংশ ব্রিটিশ নাগরিক ইইউ ত্যাগের পক্ষে মত দেন। বিরোধিতা করেন ৪২ শতাংশ। এরপরই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন পদত্যাগ করেন।
২০১৭ সালের ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন থেরেসা মে। আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া শুরু করেন। ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ ব্রেক্সিট সম্পন্ন করার তারিখ নির্ধারিত ছিল। ২০১৭ সালের জুনে ব্রিটেনে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যার কারণে ব্রেক্সিট কার্যক্রম পিছিয়ে পড়ে।
নির্বাচনের ফলাফলে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়। সর্বাধিক আসন পেলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় পরবর্তী সরকার গঠনের পর ব্রেক্সিট নিয়ে মহাসাগরে পড়ে থেরেসা মে সরকার। পার্লামেন্টে মতানৈক্যের কারণে ব্রেক্সিট কার্যকরের জন্য আর্টিকেল ৫০ ব্যবহার করে তিনদফা সময় বাড়ায় ব্রিটেন।
সবশেষ ব্রেক্সিট অসম্ভব জানিয়েছে ক্ষমতা ছাড়েন থেরেসা মে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ব্রিটেনে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা ফিরে পায় কনজারভেটিভ পার্টি। প্রধানমন্ত্রী হন ব্রেক্সিটপন্থী নেতা সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন।
সব বাধা কাটিয়ে অবশেষে ব্রেক্সিট চুক্তিতে সম্মত হয়েছে ব্রিটেন ও ইইউ। এ চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে।
বাংলা৭১নিউজ/সর