ব্রকলি পুষ্টিকর সবজি হলেও মফস্বলে বেশ অপরিচিত। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে। তবে অপরিচিত হওয়ায়, লক্ষ্মীপুরের ক্রেতারা সবজি হিসেবে এটি কিনতে আগ্রহী নয়। এতে বিপাকে পড়েছেন লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের কৃষক মো. হারুন। তার ক্ষেতে প্রায় আড়াই হাজার ব্রকলি উৎপাদিত হয়েছে। কিন্তু বিক্রি করতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন তিনি।
এদিকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাসহ পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ বাংলাদেশ কৃষক হারুনের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে সহযোগিতা করছে।
জানা যায়, প্রথমবারের মতো কমলনগর উপজেলার চর লরেন্স ইউনিয়নের লরেন্স গ্রামের ৮ শতক জমিতে এসএসিপির উচ্চ মূল্যের ফসল (সবজি) উৎপাদন প্রদর্শনী হিসেবে ‘ব্রকলি’ চাষ করা হয়। গত নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে ব্রকলির বীজ রোপণ করেন কৃষক হারুন। কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী ৩ মাসেই ভালো ফলন এসেছে। তবে পুষ্টি সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও এ সবজি কিনতে নারাজ ক্রেতারা। অপরিচিত সবজি হওয়াতেই এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
কৃষক মো. হারুন জানান, ব্রকলি চাষে ফলন ভালো এসেছে। কিন্তু বিক্রি করতে না পারায় এখনো উৎপাদিত ফসল নিয়ে বিপাকে পড়েছি। এমন পরিস্থিতিতে কৃষকরা এটি চাষে উৎসাহ হারাবেন। এতে এটি উৎপাদনের পাশাপাশি মফস্বলসহ গ্রামাঞ্চলে পরিচিতি বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। তবে ব্রকলি চাষে কৃষি অফিসাররা মাঠে এসে খোঁজ-খবর নিয়েছেন। এটি উৎপাদনে পরিমাণ অনুযায়ী সার ও কীটনাশক ব্যবহার করলেই চলে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অফিস সূত্র জানায়, ব্রকলির পুষ্টিগুণ প্রচুর। গবেষকরা ব্রকলিকে বলছেন আল্টিমেট ক্যান্সার ফুড। প্রতিদিন ব্রকলি খেলে ক্যান্সার প্রতিরোধক কাজ করে। ভিটামিন ‘কে’, ভিটামিন ‘সি’, ফলিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম ও ফাইবারে পরিপূর্ণ। ব্রকলি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
ব্রকলিতে রয়েছে সালফোরাফেন। যা ক্যান্সার রুখতে সাহায্য করে। লো-ক্যালরির এই সবজি হার্ট ভালো রাখতেও সাহায্য করে। এটি দেখতে ফুলকপির মতো হলেও ফুলগুলো সাদার পরিবর্তে পাতার রংয়ের মতো গাঢ় সবুজ।
ব্রকলির চাষ অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে বীজতলায় বীজ বপন করতে হয়। পরে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় মূল ক্ষেতে রোপণ করা হয়। ৭৫ থেকে ৮৫ দিনের মধ্যে এতে ফুল আসে। মেধা-বিকাশ, চোখের দৃষ্টি, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, রক্তের সঞ্চালন বৃদ্ধিসহ মানবদেহের স্বাভাবিক পুষ্টি বজায় রাখার পাশাপাশি ব্রকলি অর্থনৈতিক লাভজনক ফসল। এটি চাষ করার জন্য স্থানীয় কৃষকদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাবু বলেন, হারুন তার উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে পারছেন না। এজন্য আমরা তাকে সহযোগিতার কথা বলেছি। আমাদের একটি টিম তার সঙ্গে থেকে সবজিগুলো বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে।
কমলনগর উপজেলা কৃষি অফিসার আতিক হাসান বলেন, ব্রকলি এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে পরিচিত নয়। এর অনেক পুষ্টি ও ওষুধি গুণ রয়েছে। এগুলো জানতে পারলে ভোক্তাদের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টি হবে। কৃষিতথ্য সার্ভিসের মাধ্যমে এই সব সবজির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে প্রচার-প্রচারণা চালানো সম্ভব।
লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি বিপণন মার্কেটিং কর্মকর্তা মো. মনির হোসেন বলেন, কমলনগরে প্রথমবারের মতো উপযোগিতা যাচাইয়ের জন্য গ্রিন ক্রাউন জাতের ব্রকলি চাষ করা হয়েছে। কৃষক হারুনের পরিশ্রমে ব্রকলির ভালো ফলন পাওয়া গেছে। আশা করি কৃষক হারুনকে দেখে অন্যকৃষকরাও এ সবজি চাষে ঝুঁকবে। আমরা মার্কেটিং বিভাগ তার ফসল বাজারজাত করতে সহযোগিতা করছি।
বাংলা৭১নিউজ/এমকে