বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: বাংকিং খাতে কোটিপতি আমানতকারী এখন ৬২ হাজার ৩৮ জন। এদের মধ্যে ৭০২ জন ব্যক্তি অর্ধশতকোটি টাকারও বেশি পরিমাণ অর্থ আমানত হিসেবে বিভিন্ন ব্যাংকে জমা রেখেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ এক প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনটি গত মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়েছে। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্য নিয়ে তৈরি এই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত এক বছরে ৫০ কোটি টাকারও বেশি পরিমাণ অর্থ জমা রাখার তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছেন ১৪৪ জন ব্যক্তি। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে ৫০ কোটি টাকার ওপরে আমানত রাখা ব্যাক্তি ছিলেন ৫৫৮ জন। বর্তমানে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭০২ জনে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এক বছরে ৪০ কোটি টাকারও বেশি পরিমাণ অর্থ জমা রাখার তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছেন ৯২ জন ব্যক্তি। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে ৪০ কোটি টাকার ওপরে আমানত রাখা ব্যাক্তি ছিলেন ১৮৫ জন। বর্তমানে এই সংখ্যা ২৭৭ জন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে ১ কোটি টাকারও বেশি আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েছে ৩ হাজার ৮৭২ জন। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ১ কোটি টাকার বেশি কিন্তু ৫ কোটি টাকার কম আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ৪৫ হাজার ২৫ জন। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এই সংখ্যা ৪৮ হাজার ৮৯৭ জন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের পরিমাণ ৮ লাখ ৬১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে অধিকাংশই কোটিপতিদের রাখা আমানত।
এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো না থাকার কারণে অনেকেই ব্যাংকে টাকা রাখছেন। সেই টাকা বছর শেষে বেড়ে যাচ্ছে। দেখা যাবে ২০ কোটি টাকার আমানত ১০ বছর পরে ৪০ কোটিতে রূপ নিয়েছে। এইভাবেও কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে।’
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘ব্যাংক খাতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বৃদ্ধিকে ভালোভাবে দেখা উচিত। কারণ, এই পরিমাণ টাকা দেশ থেকে পাচার না হয়ে দেশের ব্যাংকিং খাতে থাকছে। তবে এত বেশি কোটিপতি আমানতকারী বাড়ার ফলে সমাজে একটি বিশেষ শ্রেণি ক্রমেই ধনী হয়ে যাচ্ছে।’ এর ফলে বৈষম্য বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারী বাড়ার প্রবণতা অর্থনীতির জন্য ভালো লক্ষণ। তবে সেটা যদি বিনিয়োগে যেত তাহলে আরও ভালো হতে পারত।’ তিনি বলেন, ‘কোটিপতিদের একটা বড় অংশ কালো টাকার মালিক।’ আর এই কালো টাকার কোটিপতিরা এখনও রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ৩৫ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন এমন ব্যক্তির সংখ্যা ১৫৮ জন। ৩০ কোটি টাকার বেশি আমানতকারী রয়েছেন ২৫৩ জন। ২৫ কোটি টাকার ওপরে আমানতকারীর সংখ্যা ৪০০ জন। ২০ কোটি টাকার ওপরে রয়েছে ৭০১ জন গ্রাহকের। ১৫ কোটি টাকার বেশি রয়েছে ১ হাজার ১২৩ জনের। ১০ কোটি টাকার ওপরে আমানত রেখেছেন ২ হাজার ২৫৩ জন। আর ৫ কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন ব্যক্তির সংখ্যা ৭ হাজার ২৭৪ জন।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি ছিলেন মাত্র পাঁচজন। ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ জনে। জিয়াউর রহমান সরকারের আমলে (ডিসেম্বর ১৯৮০) এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৮ জনে। এরশাদ সরকারের পতনের সময় ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৪৩ জনে।
এ ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ সালের জুনে কোটিপতির সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৫৯৪ জন। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এই সংখ্যা বেড়ে হয় ৫ হাজার ১৬২ জন। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার আগে ২ বছরের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে (২০০৭-০৮) ৫ হাজার ১১৪ জন ছিলেন কোটিপতি।
এরও আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে (অক্টোবর ২০০১-ডিসেম্বর ২০০৬) কোটিপতির সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ৮৮৭ জন। ২০০৮ সালে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে এক কোটি টাকার ওপরে হিসাব ছিল ১৯ হাজার ১৬৩টি। ২০০৯ সালের ডিসেম্বর শেষে এ সংখ্যা ছিল ২৩ হাজার ১৩০। ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষে দেশে কোটিপতির সংখ্যা দাঁড়ায় ২৯ হাজার ৫৩৭ জনে।
বাংলা৭১নিউজ/এমএম