মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ১১:২৩ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
গাবতলীতে হবে মাল্টি মোডাল বাস টার্মিনাল : স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ‘ডিএসসিসির সব কর্মচারীর জন্য আবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে’ ঢাকায় আসছেন ডোনাল্ড লু লোকসানে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ২৮ প্রতিষ্ঠান : সংসদে শিল্পমন্ত্রী দেশে বিদ্যুতের চাহিদার চেয়ে উৎপাদন ক্ষমতা বেশি : নসরুল হামিদ ক্ষমতায় ও বিরোধী দলে থাকবে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি: নানক মুদ্রানীতি ও আর্থিকনীতি সমন্বয়ে ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা আছে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের শরীয়াহ সুপারভাইজারী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত সংকট সামাল দিতে শক্ত নেতৃত্ব প্রয়োজন: প্রধানমন্ত্রী ভোটের আগের দিন নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদ নির্বাচন স্থগিত আমরা একসঙ্গে জয়ী হব: শপথ নিয়ে বললেন পুতিন তেজগাঁওয়ে ট্রেনের ধাক্কায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির মৃত্যু মাধ্যমিকের ৩১ বইয়ে ১৪৭ ভুল, স্কুলে যাচ্ছে সংশোধনী জিম্বাবুয়েকে ১৬৬ রানের লক্ষ্য দিলো বাংলাদেশ মাঝ-আকাশে নারী যাত্রীদের ঝগড়া-হাতাহাতি, জরুরি অবতরণ করলো ফ্লাইট সব হজযাত্রী সঠিক সময়ে যাবেন, সঠিক সময়ে ভিসাও হবে : ধর্মমন্ত্রী ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ খচিত নতুন স্মার্টকার্ড বিতরণ শুরু জনগণকে নিরপেক্ষভাবে সেবা দেওয়ার তাগিদ আইজিপির শিশুদের শুধু আইনের মাধ্যমে সুরক্ষা দেওয়া কঠিন : ডেপুটি স্পিকার বাংলাদেশের পর্যটন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী ব্রিটিশ সরকার

ব্যাংকিং খাত : তারল্য সংকট সহসাই কাটছে না

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় বৃহস্পতিবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১৯
  • ২৩৩ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক: ঋণ প্রবৃদ্ধির অনুপাতে আমানত প্রবৃদ্ধি হয়নি। ফলে বিদায়ী বছরের পুরো সময় তারল্য সংকটে কেটেছে দেশের ব্যাংকিং খাতের। নির্বাচন ঘিরে গ্রাহকরা বড় অংকের আমানত তুলে নেয়ায় তারল্য সংকট আরো বেড়েছে। নতুন বছরের শুরুতেও এ থেকে বেরোতে পারছে না বেসরকারি ব্যাংকগুলো। আমানত সংগ্রহের প্রতিযোগিতার কারণে বছরের শুরুতেই মেয়াদি আমানতের সুদের হার ১০ শতাংশে উঠে গেছে। সব মিলিয়ে শিগগিরই তারল্য সংকট কাটবে, এমন আভাস দিতে পারছেন না ব্যাংকাররা।

ব্যাংকাররা বলছেন, তারল্য সংকটের কারণে দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানতের সুদহার বেড়ে গিয়েছিল। এতে বেড়ে গিয়েছিল ঋণের সুদহারও। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আমানত ও ঋণের সুদহার যথাক্রমে ৬ ও ৯ শতাংশে বেঁধে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আমানত সংকটের কারণে তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায়নি। ২০১৯ সাল শুরু হয়েছে আমানতের সংকট দিয়েই। বন্ড মার্কেটের সম্প্রসারণ, বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও সঞ্চয়পত্রের সুদহার না কমালে তারল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশের ব্যাংকিং খাতে বিনিয়োগযোগ্য আমানত রয়েছে ৮১ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা। কিন্তু এ আমানতের অর্ধেকের বেশি রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর হাতে। ২০১৮ সালের অক্টোবর শেষে এ ব্যাংকগুলোর হাতে বিনিয়োগযোগ্য আমানত ছিল ৪৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা। একই সময়ে বেসরকারি খাতের ৪০টি ব্যাংকের হাতে মাত্র ২০ হাজার ৯১৩ কোটি টাকার বিনিয়োগযোগ্য আমানত ছিল। অর্থাৎ গড়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকের হাতে ৫০০ কোটি টাকার আমানতও নেই। নির্বাচন ঘিরে অক্টোবর-পরবর্তী তিন মাসে ব্যাংকগুলো থেকে বড় অংকের আমানত তুলে নিয়েছেন গ্রাহকরা। এতে ব্যাংকিং খাতে আমানত সংকট আরো তীব্র হয়েছে, যা তারল্য সংকট বাড়িয়ে দিচ্ছে।

ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যাংকগুলোর তারল্য পরিস্থিতি ভালো নয়। সহসা এ সংকট কাটিয়ে ওঠার কোনো সম্ভাবনাও নেই। বড় গ্রাহকরা এক ব্যাংকের আমানত তুলে বেশি সুদে অন্য ব্যাংকে রাখছেন। এক্ষেত্রে আমানত সংগ্রহে ব্যাংকগুলোর প্রতিযোগিতা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে। মেয়াদি আমানতের সুদহার ১০ শতাংশ পর্যন্ত উঠে গেছে।

শক্তিশালী বন্ড মার্কেট গড়ে তুলতে না পারলে তারল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না বলে মনে করেন ঢাকা ব্যাংকের এ ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বলেন, তারল্য পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে হলে বন্ড মার্কেটকে বিকশিত করতে হবে। একই সঙ্গে বিপুল পরিমাণ বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) নিয়ে আসতে হবে। সঞ্চয়পত্রের সুদহার না কমালে মুদ্রাবাজার ও পুঁজিবাজার কোনোটিই স্বাভাবিক হবে না।

দেশের ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকটের সূত্রপাত ২০১৬ সালে। বিপুল পরিমাণ উদ্বৃত্ত তারল্য কাজে লাগাতে আগ্রাসী বিনিয়োগ শুরু করে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। ফলে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এরপর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ হলেও পরবর্তী সময়ে তা আরো বেড়ে যায়। সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি বেড়ে ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশে দাঁড়ায়।

ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়লেও সে অনুপাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়নি ব্যাংকগুলোয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ব্যাংকিং খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ৫২ শতাংশ। পরের দুই অর্থবছরে আমানতের প্রবৃদ্ধি আরো কমে আসে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমানতের প্রবৃদ্ধি নেমে আসে মাত্র ১০ দশমিক ৬০ শতাংশে। সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ব্যাংকিং খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি আরো কমে ১০ দশমিক ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে। ঋণ ও আমানত প্রবৃদ্ধির বড় ধরনের ঘাটতিই দেশের ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট সৃষ্টি করেছে।

সূত্র বলছে, গত এক সপ্তাহে দেশের ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট বেড়েছে। এক ব্যাংক অন্য ব্যাংকের আমানত ভাগিয়ে নিতে গ্রাহকদের বেশি সুদহার প্রস্তাব করছে। গতকালও একই চিত্র দেখা গেছে দেশের বেশির ভাগ বেসরকারি ব্যাংকে। তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছে। এতে কলমানি বাজারে সুদের হার ৬ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, বর্তমানে সঞ্চয়পত্রের সুদহারের তুলনায় আমানতের সুদহার প্রায় অর্ধেক। ফলে মানুষ ব্যাংকে টাকা না রেখে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। ২০১৮ সালের অক্টোবর শেষে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা। তিন বছর ধরেই লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় দ্বিগুণ-তিন গুণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি করেছে সরকার। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। অথচ জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মাত্র চার মাসেই ১৭ হাজার ৮২৮ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে।

সুদহার বেশি হওয়ায় ব্যাংকের আমানত সঞ্চয়পত্রে চলে গেছে বলে মনে করেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আনিস এ খান। তিনি বলেন, সরকার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি করছে। এ কারণে আমানতের প্রবৃদ্ধিতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। ব্যাংকের কাছে আমানত না থাকায় বিনিয়োগ করা যাচ্ছে না। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে ঋণ প্রবৃদ্ধিতে। গত কয়েক মাসে ব্যাংকের ঋণ প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে গেছে। সরকারের নির্দেশনার কারণে আমরা ঋণ ও আমানতের সুদহার কমিয়ে এনেছিলাম। আমানতের সুদহার কমার কারণে মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে সঞ্চয়পত্র কিনছে।

আগ্রাসী বিনিয়োগের কারণে ২০১৭ সালে দেশের বেশির ভাগ বেসরকারি ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের অনুপাত (এডি রেশিও) নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের লাগাম টানতে এডি রেশিও কিছুটা কমিয়ে আনে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি জারি করা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে এডি রেশিও কমিয়ে আনা হয়। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলো পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত আমানতের সর্বোচ্চ ৮৩ দশমিক ৫০ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে পারবে। এর আগে এ ধারার ব্যাংকগুলোর এডি রেশিওর সর্বোচ্চ হার ছিল ৮৫ শতাংশ। সে হিসাবে সাধারণ ব্যাংকগুলোর এডি রেশিও ১ দশমিক ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট কমানো হয়।

দেশের ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো আমানতের সর্বোচ্চ ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করতে পারত। বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী এ ব্যাংকগুলোর সর্বোচ্চ এডি রেশিও হবে ৮৯ শতাংশ। সে হিসেবে এ ধারার ব্যাংকগুলোর এডি রেশিও ১ শতাংশীয় পয়েন্ট কমানো হয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে নতুন নির্দেশনা কার্যকর করার জন্য বিদায়ী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ব্যাংকগুলোর আপত্তির মুখে ওই নির্দেশনা বাস্তবায়নের সময়সীমা দুই দফায় পেছানো হয়। সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে ব্যাংকগুলোর এডি রেশিও সমন্বয় করার কথা। যদিও এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫টি ব্যাংকের এডি রেশিও নির্ধারিত সীমার অনেক উপরে রয়েছে। আমানতের সংকটের কারণে এ ধরনের ব্যাংকের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে বলে জানা গেছে।

বাংলা৭১নিউজ/জেড এইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com