দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বর্তমানে দুর্নীতির চেয়েও বড় প্রতিবন্ধকতা অদক্ষ সরকারি প্রশাসন। এমন চিত্র উঠে এসেছে বুধবার (১৬ ডিসেম্বর)ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম- ডব্লিউইএফ প্রকাশিত বিশ্ব প্রতিযোগতিা সক্ষমতা প্রতিবেদন-২০২০-এ।
বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) এই তথ্য জানিয়েছে প্রতিবেদন তৈরিতে বাংলাদেশ অংশের হয়ে কাজ করা গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। ব্যবসায়িক সক্ষমতা সূচকে প্রতিবারই র্যাংকিং করা হলেও এবার তা করা হয়নি।
এবারের প্রতিবেদন তৈরি করতে গত ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত বিশ্বের ১৪২টি দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে জরিপ চালানো হয়। এর মধ্যে ১২৬টি দেশের ব্যবসায়ীদের দেওয়া মতামত যৌক্তিক বিবেচনায় গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিবদেন তৈরিতে বাংলাদেশের হয়ে ৫৫ জন ব্যবসায়ী তাদের মতামত দিয়েছেন। যাদের ব্যবসায়িক সম্পদের পরিমাণ ১০ কোটি টাকার বেশি। গত বছর অর্থাৎ ২০১৯ এর প্রতিবেদন তৈরিতে মতামত দিয়েছিলনে ৭৭ জন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় ৭৫.১ শতাংশ সন্তুষ্ট হলেও ৭২ শতাংশের মতামত ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা সরকারের অদক্ষ প্রশাসন। আর ৬৮ শতাংশের মতামতের ভিত্তিতে এই প্রতিবন্ধকতার ক্ষেত্রে দুর্নীতির অবস্থান নেমে এসেছে দুইয়ে। আর্থিক খাতের অপর্যাপ্ত সহযোগিতার কথা জানিয়েছেন ৬৬ শতাংশ।
তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় সংস্থাটি জানিয়েছে, দেশে উদ্যোক্তা হওয়ার উদ্যোগ বাড়ছে কিন্তু উদ্যোগগুলো বড় হচ্ছে না। আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোও বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা সম্প্রসারণে যতটা মনোযোগী ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য ততটা নয়।
এই জরিপকাল যেহেতু করোনার শুরুর সময়, তাই এখানে করোনাকালীন সমস্যাগুলো সেভাবে উঠে আসেনি। তবে এই সংকট মোকাবিলায় দেশগুলো কেমন প্রস্তুতি নিচ্ছে তা উঠে এসেছে। জরিপে অংশ নেওয়া ১৪২টি দেশের ১১ হাজার ৮৬৬ জন ব্যবসায়ী তাদের মতামত দিয়েছেন।
এবারের প্রতিবেদন তৈরিতে করোনাকে আমলে নিয়ে যেমন প্রশ্ন তৈরি করা সম্ভব হয়নি তেমনি ব্যবসায়ীরাও আগের বছরের অভিজ্ঞতার আলোকেই তাদের মতামত জানিয়েছেন। প্রতিবেদন তৈরিতে ২০১৯ সালের জানুয়ারি-ডিসেম্বর সময়ের অভিজ্ঞতার আলোকে তারা তাদের বিশ্লেষণ ও মতামত দিয়েছেন।
ডব্লিউইএফ বলছে, গেল ১২ বছরের বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির দিকে ব্যবহারকারী ও বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক বাড়ছে। তবে এই করোনাকালে আরেকটি বিষয় প্রকট হয়েছে তা হলো প্রযুক্তির সুবিধা না পাওয়া মানুষের সংখ্যাও বেশ বড়। তাই এখাতে আগামীর বিনিয়োগ পরিকল্পনা যেন অন্তর্ভুক্তিমূলক হয় সেদিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার বিস্তার হয়েছে সন্তুষ্টজনক কিন্তু মানের দিক দিয়ে তা অর্থনীতিতে তেমন ভূমিকা রাখার মতো কার্যকরী নয়। সংস্থাটি বলছে, উচ্চশিক্ষা সমাপ্ত করা ৬৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর দক্ষতার অভাবের কারণে তাদের কর্মক্ষেত্রে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আবার কর্মরত ৬৪ শতাংশেরই ডিজিটাল দক্ষতার অভাব রয়েছে। গতবারের চেয়ে এক্ষেত্রে স্কোর কমেছে দশমিক ছয় তিন শতাংশ। অর্থাৎ কর্মরতদের ডিজিটাল দক্ষতা না বেড়ে বরং এক বছরে খানিকটা কমেছে। তবে, উচ্চশিক্ষা শেষ করেছেন তাদের মধ্যে ৮১ শতাংশ কর্মপোযোগী হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের উন্নতি করতে চায়।
দেশের কর্মক্ষেত্রে বিদেশি দক্ষ লোকবলের প্রবেশ বেড়েছে এক বছর আগের তুলনায় দশমিক এক পাঁচ শতাংশ। গত বছর এখানে স্কোর ছিল ৪৪.৪ শতাংশ। এই প্রবণতা স্থানীয়দের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ। কারণ, এতে স্থানীয়দের কাজের সুযোগ পাওয়ার পথ আরও সংকুচিত হয়ে পড়ছে।
২০১৯ সালে আগে বছরের তুলনায় আর্থিক খাতের অবনমন হয়েছে। কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। এক বছর আগের তুলনায় পুঁজিবাজারে বাজে অবস্থার দিকে গেছে। পদ্মা সেতু নতুন দিনে বাণিজ্য সম্প্রসারণে বেশ সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলেও উঠে এসেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এবারের প্রতিবেদনে।
বাংলা৭১নিউজ/এবি