ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে দিতে হয় না কোনো পরীক্ষা। অথচ বিআরটিএ থেকে লাইসেন্স করে দিতে দালাল চক্রের লাগতো না খুব বেশি সময়। ভুয়া পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ বিভিন্ন জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কোনো রকম পরীক্ষা ছাড়াই বিআরটিএ থেকে আসল ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করে দিত একটি দালাল চক্র। চক্রটির ১৪২টি ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল এমনটাই জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
সম্প্রতি বিআরটিএ কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে এই চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির ডিবি সদস্যরা। বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) এ কে এম হাফিজ আক্তার।
সংবাদ সম্মেলনে ডিবি জানায়, গত ১৪ ফেব্রয়ারি সোমবার থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার পর্যন্ত রাজধানীর দারুসসালাম ও দিয়াবাড়ি বিআরটিএ কার্যালয় এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. লিটন পাইক, সুজন পাইক, হাসান শেখ ওরফে আকচান, মোহাম্মদ আলী ওরফে মিস্টার, আব্দুল খালেক, আব্দুল্লাহ রনি, সোহেল রানা, সোহাগ, নুরনবী এবং হুমাযুন কবির।
ডিবি জানায়, গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ১৫৯টি ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ফাইল, মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল মান্নান স্বাক্ষরিত ও সিল-মোহরযুক্ত ৫৮টি, একই কার্যালয়ের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা নাঈমা বেগম স্বাক্ষরিত ও সিল-মোহরযুক্ত ৮৩টি, কর্মকর্তা আল ফয়সাল স্থাক্ষরিত ও সিল-মোহরযুক্ত ৭টি, এনামুল হক ইমন স্বাক্ষরিত ও সিল-মোহরযুক্ত ৭টি, ইকবাল আহমেদ স্বাক্ষরিত ও সিল-মোহরযুক্ত ৪টি, বিভিন্ন হাসপাতালের পরিচালক বরাবর ডোপ টেস্টের ১৫টি সনদ পাওয়ার আবেদন উদ্ধার করা হয়।
এ ছাড়াও দুটি মনিটর, ২টি সিপিইউ, একটি করে কিবোর্ড, প্রিন্টার, লেমিলেটিং মেশিনসহ পাঁচটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, দেশে ১৪২টি ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ স্কুল আছে এবং এদের অধিকাংশ এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত। নিয়মকে অনিয়মে পরিণত করে এই দালাল চক্র। বিআরটিএ’র কিছু অসাধু কর্মকতার যোগসাজশে কোনো ট্রেনিং ছাড়াই অদক্ষ চালকদের ‘ড্রাইভিং লাইসেন্স’ তৈরি করে দিত। ফলে অদক্ষ চালকরাও লাইসেন্স পাচ্ছেন, আর দিন দিন বাড়ছে দুর্ঘটনার সংখ্যা।
আসামিদের কাছ থেকে জব্দ করা ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ফাইলের পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রতিবেদনের বিপি নম্বর দেখে বুঝতে পারেন যে, বাংলাদেশ পুলিশের বিপি নম্বরের সঙ্গে কোনো সামঞ্জস্য নেই।
তিনি বলেন, আসামিদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, জব্দকৃত ফাইলগুলোর মধ্যে থাকা বাংলদেশ পুলিশের বিভিন্ন জেলার বিশেষ শাখার (এসবি) ভেরিফিকেশন রিপোর্টগুলো অল্প সময়ে করে দেওয়ার জন্য বিআরটিএ ঢাকা মেট্রো সার্কেল-০৩ এর উপরে উল্লেখিত কর্মকর্তাদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে আবেদন ফাইলগুলো অফিসের বাইরে নিয়ে আসে। এরপর তারা মিলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশ্বাস সৃষ্টি করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সিল মোহরযুক্ত স্বাক্ষর করা পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট তৈরি করে গ্রাহকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স বানিয়ে দেয়।
তিনি আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছে- পলাতক আসামিরা দিয়াবাড়ী বিআরটিএ অফিস ও এর আশপাশ এলাকায় থাকেন। চক্রের পলাতক বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচবি