বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: দেশের বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ১২ হাজার ৬১৯ জন শিক্ষকের তালিকা প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচিত শিক্ষক নিয়োগের এ তালিকা রোববার ফলাফল আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।
এতে ৬ হাজার ৪৭০টি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য ১২ হাজার ৬১৯ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অনলাইনে ক্লিক করে এ তালিকা প্রকাশ করেন।
এ সময় তিনি নির্বাচিত প্রার্থীদের উদ্দেশে বলেন, মনোনীত প্রার্থীরা এখন শুধু নিয়োগপত্র নিয়ে যোগদান করবেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাজ শুধু নিয়োগপত্র ইস্যু করা। এখানে কোনো টাকা নেয়া বা দেয়ার সুযোগ নেই।
মন্ত্রী বলেন, কেউ যদি কোনো ধরনের অর্থকড়ি দাবি করে, তাহলে মন্ত্রণালয়কে জানাবেন। এ ধরনের ব্যক্তির বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির দায়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এটা ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। পরীক্ষায় পাওয়া নম্বর বা মেধারভিত্তিতে, শতভাগ স্বচ্ছ, বিড়ম্বনামুক্ত ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে এসব শিক্ষক বাছাই করা হয়েছে। একটি অত্যন্ত যোগ্য কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ায় এসব শিক্ষকও নিজেদের সম্মানিতবোধ করবেন।
তিনি বলেন, এখানে তদবির, স্বজনপ্রীতি ও ঘুষ লেনদেনের সুযোগ ছিল না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর জন্যও এটা গর্বের। কারণ তারা দক্ষ শিক্ষক পেলেন।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, প্রথমবার আমরা বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য ১২ হাজার ৬১৯ জন প্রার্থী বাছাই করে দিয়েছি। আগামী এক মাসের মধ্যে মনোনীত প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়া হবে। এ তালিকা থেকে নিয়োগপত্র ইস্যু করবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সভাপতিকে এসএমএসে নির্বাচিত প্রার্থীর তথ্য জানিয়ে দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট প্রার্থীও এসএমএসে জেনেছেন যে তিনি কোন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া অনলাইনেও ফলাফল জানা যাচ্ছে। এতদিন কেবল সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে আসছিল সরকার।
অপরদিকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের একচ্ছত্র ক্ষমতা ছিল পরিচালনা কমিটির। অভিযোগ আছে, এ সুযোগ নিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতি কায়েম হয়েছিল। লাখ লাখ টাকা নিয়ে শিক্ষক নিয়োগ করা হতো।
এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কেন্দ্রীয়ভাবে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে নিয়োগের জন্য প্রার্থীদের তালিকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। এ ব্যবস্থা প্রবর্তনের বিষয়টি ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষার নীতিতে ছিল বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।
এবার শিক্ষক তালিকা তৈরির কাজটি করে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। তাদের সহায়তা করে টেলিটক।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী জানান, এনটিআরসিএ’র বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে ৬ হাজার ৪৭০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৪ হাজার ৬৬৯টি শূন্যপদের চাহিদা পড়ে। এর বিপরীতে ১২টি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ২ লাখ ৪৯ হাজার ৫০২ জন আবেদন করেন। তাদের মোট আবেদনসংখ্যা ১৩ লাখ ৭৫ হাজার ১৮৭টি। অর্থাৎ প্রত্যেকে গড়ে সাড়ে ৫টি আবেদন করেছেন।
তিনি বলেন, এসব আবেদন যাচাই করে এ ১২ হাজার ৬১৯ জন শিক্ষক নিয়োগের জন্য বাছাই করা হয়। মামলার কারণে কম্পিউটার বিষয়ের শিক্ষকের ১০৯৫ পদে ৬২ হাজার ৪৮টি আবেদন পড়লেও তা নিষ্পত্তি করা হয়নি। শারীরিক শিক্ষা, বৌদ্ধ ধর্ম শিক্ষার মতো বিষয়ের ৭১৮ পদে আবেদন পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন কারণে ৬৮৫ পদে বাছাই কাজ স্থগিত রাখা হয়েছে। ২০৪ মহিলা কোটায় আবেদন পাওয়া যায়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী জানান, ২ হাজার ৩৯৩ জন একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুপরিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। এরমধ্যে তারা একটিতে যোগ দেবেন। বাকিগুলোতে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্যক্তি সুপারিশ পাবেন। প্রথম তালিকার নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষে দ্বিতীয় তালিকার কাজ শুরু করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, অতিরিক্ত সচিব এএস মাহমুদ, হেলাল উদ্দিন, চৌধুরী মুফাদ আহমেদ, জাকির হোসেন ভূঁইয়া, মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক এসএম ওয়াহিদুজ্জামান, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমানসহ মন্ত্রণালয় ও এনটিআরসিএ’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলা৭১নিউজ/সিএইস