দেশের বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা ৮০০ রেজিস্টার্ড গ্রন্থাগারে লাইব্রেরিয়ান নিয়োগে অনুদান দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
রোববার (২০ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর গুলিস্তানের জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র মিলনায়তনে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র আয়োজিত ‘পড়ি বঙ্গবন্ধুর বই, সোনার মানুষ হই’ শীর্ষক ধারাবাহিক পাঠ কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী সেরা শিক্ষার্থীদের সনদ ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় কে এম খালিদ এ কথা বলেন।প্রতিমন্ত্রী বলেন, সংস্কৃতি চর্চা এক ধরনের নেশা। যারা এ চর্চা করেন তারা টাকা পয়সার কথা চিন্তা করেন না।
নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে অন্যের মনের খোরাক ও বিনোদন যোগান। বই পড়াও তেমনি এক ধরনের নেশা যা মনের খোরাক যোগায় ও মানুষকে আলোকিত করে। আর এ ধরনের আলোকিত ব্যক্তিদের প্রচেষ্টা ও উদ্যোগে সারা দেশে ৮০০টির অধিক রেজিস্টার্ড বেসরকারি গ্রন্থাগার বা পাঠাগার গড়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, তবে এসব গ্রন্থাগারের দেখাশোনার জন্য জনবল না থাকার কারণে এসব পাঠাগারসমূহ সঠিকভাবে পরিচালনা করা যাচ্ছে না এবং পাঠকরাও সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সেটি বিবেচনায় নিয়ে এসব পাঠাগারসমূহে লাইব্রেরিয়ান নিয়োগের জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে অনুদান দেওয়া ব্যবস্থা করা হবে। প্রয়োজনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় নতুন অর্থনৈতিক কোড সৃষ্টি করা হবে যাতে প্রতি বছর বেসরকারি পাঠাগারের লাইব্রেরিয়ানদের বেতন পরিশোধের জন্য অনুদান দেওয়া যায়।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে বই লেখার পেছনে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন তাঁরই সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা। বঙ্গবন্ধুর কারাগারে থাকাকালে বই লেখার জন্য তাঁকে খাতা, কলম ও পেন্সিল সরবরাহ করেছিলেন বঙ্গমাতা।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু রচিত তিনটি বই এদেশের সব সচেতন নাগরিকের পড়া জরুরি। মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র বঙ্গবন্ধুর বই পড়ার যে সুমহান কর্মসূচি গ্রহণ করেছে তাকে আমি সাধুবাদ জানাই এবং এটি পর্যায়ক্রমে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। দেশব্যাপী এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা গেলে স্বাধীনতা বিরোধীদের ইতিহাস পাল্টে দেওয়া বা বিকৃত করার অপচেষ্টা কখনো সফল হবে না।
জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালনা বোর্ডের সভাপতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. বদরুল আরেফীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তৃতা করেন ‘পড়ি বঙ্গবন্ধুর বই, সোনার মানুষ হই’ শীর্ষক ধারাবাহিক পাঠ কর্মসূচির উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও গবেষক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, উপদেষ্টা কমিটির সম্মানিত সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক মিনার মনসুর। শিক্ষার্থীদের পক্ষ হতে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ৪র্থ বর্ষের ছাত্রী জয়তী বিশ্বাস সূচি, হামদর্দ পাবলিক কলেজ এর একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সামিয়া পারভীন ও ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র সাদমান সামি।
উল্লেখ্য, ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র আয়োজিত ‘পড়ি বঙ্গবন্ধুর বই, সোনার মানুষ হই’ শীর্ষক ধারাবাহিক পাঠ কর্মসূচির আওতায় ঢাকা মহানগরীর স্বনামখ্যাত ১০টি বেসরকারি গ্রন্থাগারের সহযোগিতায় (প্রতিটিতে ১৫ জন করে) ঢাকা মহানগরের ১০০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৫০ জন শিক্ষার্থীকে ৩টি গ্রুপে বিভক্ত করে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত তিনটি গ্রন্থ ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ‘আমার দেখা নয়াচীন’ পাঠ করতে দেয়া হয়। বই তিনটি পাঠ শেষে শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট তিনটি বিষয়ে রচনা আকারে পাঠ প্রতিক্রিয়া প্রদানের জন্য বলা হয়।
এসব রচনা হতে তিন গ্রুপে মোট ২১ জন সেরা শিক্ষার্থীকে আজ সনদ ও পুরস্কার প্রদান করা হল। পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ১৩ হাজার টাকার বই, দুই হাজার টাকার চেক ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
বাংলা৭১নিউজ/এমএন