রাজধানীর বেশিরভাগ গ্যাস লাইনই ত্রুটিপূর্ণ। প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। ফায়ার সার্ভিসের হিসেবে তিতাসের সরবরাহ লাইনে ৭০ হাজার ছিদ্র রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৃত্যু ফাঁদের উপর বাস করছে রাজধানীবাসী। অথচ ত্রুটিপূর্ণ লাইন সংস্কারে কর্তৃপক্ষের দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই।
রাজধানীর মহাখালীর প্রধান সড়কের পাশে একটি ম্যানহোলের ঢাকনা গত ২৯ জুন বিস্ফোরণে উড়ে যায়। অল্পের জন্য রক্ষা পান পথচারীরা। গ্যাস বিস্ফোরণে ছিটকে পরে আরো কয়েকটি ঢাকনা। অথচ গ্যাস লিকেজের খবর তিতাস কর্তৃপক্ষকে আগেই জানানো হয়েছিল।
স্থানীয়রা জানান, বিস্ফোরণে ম্যানহোলের ঢাকনা ১০-১৫ ফিট উপরে উঠে যায়। প্রায়ই এই ধরনের ঘটনায় আগুনের কুণ্ডলি বের হয়। তিতাস কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা ঘটনাস্থলে আসে কিন্তু কোনো কাজ করে না।
মিরপুর পল্লবীর ফুটপাতেও ঘটে গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনা। সেখানকার এক বাসিন্দা জানান, তিতাস কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছিল। তারা রিপেয়ার করেনি। এরপর একদিন রাতে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে।
মোহাম্মদপুর আদাবরের প্রধান সড়কের মাঝের অংশ বিস্ফোরণে রীতিমতো দেবে যায়। উড়ে যায় ম্যানহোলের আট-দশটি ঢাকনা।
আদাবরের এক বাসিন্দা জানান, ঘটনাস্থল থেকে গাড়ি চলে যাওয়ার পরই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
এমন ঘটনার সাক্ষী রাজধানীর আরও অনেক এলাকা। বেশিরভাগ বিস্ফোরণের পর তিতাসকর্মীরা ছিদ্র খুঁজে পান না। ফলে নগর কর্তৃপক্ষ আবারো ঢাকনা লাগিয়ে দেন। এলাকাবাসী অপেক্ষায় থাকেন আরেকটি বিস্ফোরণের। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর।
পথচারীরা জানান, ধূমপান করে এমন কেউ যদি বিস্ফোরণের সময় রাস্তা পারাপার হতো তাহলে এটা বিরাট দুর্ঘটনার শিকার হতে পারতো। আমরাও চাই তিতাস কর্তৃপক্ষ যেন সব লিকেজ বন্ধ করে দেয়।
গ্যাস লিকেজের ব্যাপারে জানতে তিতাসের মোহাম্মদপুর কার্যালয়ে গেলে কোন কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, কোন লাইনটা আসলে কোন এলাকা দিয়ে প্রবেশ করেছে, কোম্পানি সেটা সঠিকভাবে ম্যাপিং করেনি। ৫০-৬০ বছর হয়ে গেছে সেসব লাইনগুলো পরিবর্তন করা প্রয়োজন। ওই সমস্ত লাইন থেকেই গ্যাস উদগীরণ হয় এবং সেখান থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন আরও বলেন, রাজধানীর গ্যাস লাইনে প্রায় ৭০ হাজার ছিদ্র রয়েছে। এই তথ্য তিতাস কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, প্রায় ৭০ হাজার ছিদ্র থেকে অবিরত গ্যাস লিকেজ হচ্ছে। এই ছিদ্র চিহ্নিত হওয়ার পরও তিতাস এ ধরনের মৃত্যুর ফাঁদ তৈরি করে রেখেছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (অপারেশন) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বলেন, গ্যাস সব সময় মাইগ্রেট করে। এই ফাঁক-ফোকর দিয়ে গ্যাস বের হয়ে যায় নালা ও সুয়ারেজে। তার পর এই গ্যাস যাচ্ছে মানুষের বাসা বাড়িতে। এমন বাস্তবতায় যে কোন সময় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। বড় ভূমিকম্প হলে ক্ষতি হবে কয়েকগুণ।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ