মিশর থেকে বোয়িংয়ের দুটি উড়োজাহাজ লিজ সংক্রান্ত এক হাজার ১০০ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সাত কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আজ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চার কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত টিম। তাদের বিরুদ্ধে মিশরীয় দুটি বিমান লিজ গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এর আগে গতকাল সোমবার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির তদন্তে অনিয়মের বিষয়টি উঠে আসে। স্থায়ী কমিটির পাঠানো প্রতিবেদনের আলোকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এখানে লিজ চুক্তি এবং দরপত্রের স্পেসিফিকেশনে কোনো দুর্বলতা আছে কি না, এসব বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। প্রয়োজনে এর সঙ্গে জড়িত অন্য কর্মকর্তাদেরও পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
আজ দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সকাল ৯টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তারের সমন্বয়ে একটি টিম।
এদিন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের প্রিন্সিপাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর সাইফুল হক শাহ, এয়ার কনসালটেন্ট গোলাম সারওয়ার, বিমান ফ্লাইট ক্যাটারিং সেন্টারের (বিএফসিসি) ম্যানেজার সাদেকুল ইসলাম ভূইয়া ও কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গতকাল চিফ ইঞ্জিনিয়ারসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। তারা হলেন- বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের রক্ষণাবেক্ষণ শাখার চিফ ইঞ্জিনিয়ার মো. এস. এ. সিদ্দিক, প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার এস এম হানিফ ও দেবেশ চৌধুরী।
দুদক সচিব বলেন, অনুসন্ধানের স্বার্থে তদন্ত কর্মকর্তা যে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন।
বাণিজ্যিক সম্ভাব্যতা যাচাই না করে ২০১৪ সালে পাঁচ বছরের চুক্তিতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে দুটি উড়োজাহাজ বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর লিজ নেয় বিমান। যার মধ্যে একটি বিমানের বহরে যুক্ত হয় ২০১৪ সালের মার্চে এবং অন্যটি একই বছরের মে মাসে।
এক বছরের কম সময় অর্থাৎ ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লাইট পরিচালনার পর একটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। পরে সেই ইঞ্জিনও নষ্ট হয়ে যায়। সেই ইঞ্জিন মেরামত করতে পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানে। এসব করে ইজিপ্ট এয়ার ও মেরামতকারী কোম্পানিকে পাঁচ বছরে বাংলাদেশ বিমানের ভর্তুকি দিতে হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তদন্তে বেরিয়ে আসে এসব তথ্য। এ ব্যাপারে অধিকতর তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বিষয়টি দুদকে পাঠানোর সুপারিশ করে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
বিষয়টি দুদকে আসার পর অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর দুই সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। ওই টিম গত ২৮ মে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নথিপত্র চেয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে চিঠি পাঠায়।
মিশর থেকে বোয়িংয়ের দুটি উড়োজাহাজ লিজ সংক্রান্ত ১১শ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রধান কার্যালয়ে গত ১ জুন অভিযান পরিচালনা করে দুদক। দুদক উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিনের নেতৃত্ব অভিযান চালানো হয়েছিল। মাঝে বদলিজনিত কারণে দুদক টিম পুনর্গঠন করা হয়। বর্তমান উপ-পরিচালক আনোয়ারুল হকের নেতৃত্ব টিম গঠিত হয়।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ