বাংলা৭১নিউজ,বেনাপোল প্রতিনিধি: বেনাপোল বন্দরে বর্তমানে ৩২টি শেড ও ১০টি ইয়ার্ড রয়েছে। যেখানে পণ্য ধারণ ক্ষমতা মাত্র ৪০ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমানে হ্যান্ডলিং করা হচ্ছে গড়ে প্রতিদিন এক লাখ মেট্রিক টন পণ্য। জায়গা সংকটের জন্য অনেক পণ্য রাখা যাচ্ছে না। বাইরে যত্রতত্রভাবে ফেলে রাখা হচ্ছে। এতে করে পণ্য চুরিসহ নানাভাবে আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন আমদানিকারকরা।
বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে আসা ১ হাজার থেকে ১২শ’ পণ্য বোঝাই গাড়ি বাংলাদেশে প্রবেশ করার কথা। কিন্তু প্রবেশ করতে পারছে মাত্র ৪-৫শ’ গাড়ি। এদিকে, প্রতিদিনই প্রায় ৫শ’ গাড়ি পেট্রাপোল থেকে বেনাপোলে প্রবেশের অপেক্ষায় থাকছে। বর্তমানে পেট্রাপোলে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রায় ৫ হাজার পণ্যবাহী ট্রাক।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানান, বেনাপোলে ঢোকার জন্য পণ্যবাহী গাড়ি পেট্রাপোলে দাঁড়িয়ে থাকে বলে সঠিক সময় ওই আমদানি পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না। আবার ওপারে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে প্রতিদিন ৩ হাজার টাকা অতিরিক্ত গুণতে হয়। কোনো কোনো গাড়ি ১০ দিনও পেট্রাপোলে দাঁড়িয়ে থাকছে। অতিরিক্ত এই টাকা গুণতে হচ্ছে বলেই ব্যবসায় লোকসান হচ্ছে। এর সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে আমদানি করা পণ্য এবং মূল্যবান সময়।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থল বাণিজ্যের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে বেনাপোল স্থলবন্দর। এই বন্দর দিয়ে বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়ে থাকে। এছাড়াও ১৩ লাখ যাত্রীর যাতায়াত হয় এই বন্দর দিয়ে। এর মাধ্যমে বছরে ৫ হাজার কোর্টি টাকার রাজস্ব জমা হচ্ছে সরকারি কোষাগারে।
দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন কিছুই হয়নি বলা চলে। এ কারণে ব্যবসায়ীক কার্যক্রমের জন্য বেনাপোল স্থলবন্দর অনুপযোগী বন্দরে পরিণত হতে চলেছে। এখানে পণ্যজট অসহনীয়। বন্দরে ট্রাকজটও পীড়াদায়ক। আর পণ্য লোডিং-আনলোডিং-এর জন্য পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম (ইক্যুইপমেন্ট) নেই এখানে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মফিজুর রহমান স্বজন জানান, বেনাপোল স্থলবন্দর গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। স্থলবন্দরটি খুবই অচলাবস্থার মধ্যে দিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। ধীরে ধীরে বন্দরটি ব্যবসায়ীক কার্যক্রমের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এই বন্দরকে আরও গতিশীল করে তোলার জন্য প্রথমেই দূর করতে হবে জায়গার সংকট। জায়গা সংকটের কারণে অনেক পণ্য রাখা যাচ্ছে না। অনেক পণ্যের প্রবেশে বিলম্ব হচ্ছে।
তিনি বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দরকে বাণিজ্যের উপযোগী করে তুলতে এর ধারণক্ষমতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণ করতে হবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। বাড়াতে হবে বন্দরের ইক্যুইপমেন্ট। এ বিষয়ে সরকার যদি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, তাহলে বন্দটির কর্মচাঞ্চল্য কমতে কমতে এটি খুব শীঘ্রই অচল হয়ে পড়বে।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে আমদানি হয় ১১ লাখ ২৪ হাজার ১২৬ মেট্রিক টন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১২ লাখ ৫২ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন,২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন,২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৯৩৮ মেট্রিক টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৯৩ হাজার ৩১৯ মেট্রিক টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৯ লাখ ৮৮ হাজার ৩৫৭ মেট্রিক টন এবং গেল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ২১ লাখ ৮১ হাজার ১২৩ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি করা হয়।
বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক মো: মামুন কবির তরফদার বলেন, বন্দরের জায়গা সংকট ও ইক্যুইপমেন্ট স্বল্পতার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা আমাদের জানিয়েছেন। এই সমস্যাগুলো সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ইতিমধ্যে আমাদের ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বৃহৎ দু’টি ইয়াড নির্মাণকাজ হয়েছে। এতে পণ্য ধারণ ক্ষমতা বেড়েছে। ২৫ একর জায়গা আমরা অধিগ্রহণ করেছি।
আরও সাড়ে ১৬ একর অধিগ্রহণের প্রস্তাবনা রয়েছে। খুব দ্রুত ২৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বোনপোলে কার্গোভেহিক্যাল টার্মিনাল স্থাপনের কাজ শুরু হবে। ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সিসিটিভি স্থাপন করা হবে। এসব বাস্তবায়ন হলে এই বন্দরে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। আমাদের কিছু যন্ত্রপাতির সমস্যা রয়েছে। এগুলোর চাহিদা সরকারকে দেয়া হয়েছে। আগে মেন্যুয়ালি কাজ হলেও এখন পুরো অটোমেডেট পদ্ধতিতে কার্যক্রম চলছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ