বেনাপোল বন্দরে ২০ হাজার ট্রাক চালক, হেলপার ও বন্দর শ্রমিক সহ শ্রমজীবী মানুষ করোনা ঝুঁকিতে রয়েছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে দুই দেশের পণ্য পরিবহনকারী ট্রাক চালকদের মধ্যে নেই স্বাস্থ্য সচেতনতা। এতে সংক্রমণ ঝুঁকিতে পড়েতে পারেন বাণিজ্যের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত সরকারি, বেসরকারি কর্মকর্তা- কর্মচারী ও পণ্য খালাসের শ্রমিকসহ প্রায় ২০ হাজার কর্মজীবী মানুষ।
স্থানীয়রা বলছেন, যেহেতু ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে এসব ট্রাক চালকেরা দেশের বেনাপোল বন্দরে আসছেন, বাংলাদেশের চাইতে ভারতে করোনা সংক্রমণের হার বেশি। তাই সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কার্যকর করা খুব জরুরি। এ ব্যাপারে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে খুব দ্রুত সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে।
সরেজমিনে শনিবার বন্দর এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, ভারত অংশে প্রতিরোধ ব্যবস্থা সচল থাকলেও বাংলাদেশ অংশের পণ্য প্রবেশদ্বারে ট্রাকে জীবাণুনাশক স্প্রে ও চালকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কোনো সামাজিক দূরত্ব নেই। বন্দর কর্তৃপক্ষের তদারকি না থাকায় অবাধে মাস্ক-পিপি ছাড়া চলাফেরা করছেন ভারত ও বাংলাদেশি ট্রাক চালকেরা। দেখা করছেন স্থানীয়দের সঙ্গে। তবে কারো কাছে মাস্ক বা পিপি থাকলেও তা ঠিক মতো ব্যবহার করছেন না। কারো মাস্ক থাকলেও তা ঝুলছে গলায়।
আবার কারো কাছে পিপি থাকলে তা রয়েছে গাড়িতে। এমনটি বন্দরের নিরাপত্তাকর্মীরাও অনেকে দায়িত্ব পালন করছেন মাস্ক ছাড়া। এতে করোনা সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। জানা যায়, দেশ জুড়ে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়ায় প্রতিরোধ ব্যবস্থায় সরকার সাতদিনের টানা লকডাউন ঘোষণা করেছেন। পাশাপাশি আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোরতম লকডাউনের ঘোষনা এসেছে সরকারের তরফ থেকে। তবে এ লকডাউনের মধ্যে দেশের শিল্প কলকারখানাগুলোতে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা সচল রাখতে বিশেষ ব্যবস্থায় বেনাপোল বন্দর লকডাউনের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। এতে স্বাভাবিকভাবে রেল ও স্থলপথে বেনাপোল-পেট্রাপোল দুই দেশের মধ্যে চলছে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য।
ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্য বহনকারী ভারত ও বাংলাদেশি ট্রাক চালকেরা জানান, বেনাপোল বন্দরে এখন আর কেউ ট্রাকে জীবাণুনাশক স্প্রে করে না। স্বাস্থ্য পরীক্ষাও হয় না। তবে সুরক্ষার জন্য ট্রাক চালকদের মাস্ক, পিপি পরা উচিত। কিন্তু কেউ কিছু বলে না বলে পরা হয় না।
বেনাপোল বন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সেক্রেটারি কলিম উদ্দিন জানান, প্রতিদিন বেনাপোল ও পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে আমদানি ও রফতানি পণ্য পরিবহনের কাজে প্রায় দেড় হাজার ট্রাক চালক দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করে থাকে। শ্রমিকরা এসব পণ্য খালাস করছে। বন্দরে করোনা প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় ২০ হাজার অসহায় শ্রমিকরা পড়েছেন স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে।
বেনাপোল স্টেশন মাস্টার সাইদুজজামান জানান, আগে করোনা সংক্রমণ রোধে রেলষ্টেশনে বন্দরের পক্ষে স্বাস্থ্যবিভাগের কর্মীরা কাজ করতেন। এখন আর কেউ আসে না। তবে নিরাপত্তার জন্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা সচল রাখা জরুরি। বেনাপোল সিন্ডএফ এজেন্টের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, যেহেতু ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে ট্রাক চালকেরা বেনাপোল বন্দরে আসছে। বাংলাদেশ থেকেও চালকেরা যাচ্ছে ভারতে। এদের মাধ্যমে সহজে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তাই বন্দরে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া জরুরী। বর্তমানে করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতার এ সময়ে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বন্দরে যাতে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় তার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের সব ধরনের সুরক্ষা নিশ্চিত করা উচিত। বন্দরে কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। ইতিমধ্যে এ অঞ্চলের অনেকেই করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
বেনাপোল বন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুল জলিল জানান, আগে প্রতিরোধ ব্যবস্থা সব ছিল। জনবল সংকটে এখন কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে বন্দরে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের সব ব্যবস্থা খুব দ্রুত কার্যকর করা হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এমকে