বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণে দু দেশের কাস্টমস, বন্দর ও ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) বেলা ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বেনাপোল-পেট্রাপোল শূন্য রেখায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনায় দুই দেশের ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা বলেন, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা আর অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে নানাভাবে এপথে বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। দিন দিন আমদানি-রফতানির চাহিদা বাড়লেও এসব সমস্যার কারণে বাণিজ্য প্রসারে হচ্ছে না। এতে ব্যবসায়ীরা যেমন লোকশানের কবলে পড়ছেন তেমনি সরকারও হারাচ্ছে রাজস্ব।
আলোচনায় দুই দেশের কাস্টমস ও বন্দরের কর্মকর্তারা বাণিজ্য সহজিকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশের পক্ষে বেনাপোল কাস্টমস হাউজের ডেপুটি কমিশনার অনুপম চাকমা, ডেপুটি কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান, বেনাপোল বন্দরের সহকারী পরিচালক আতিকুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক সঞ্জয় বাড়ৈ, বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন, সহ-সভাপতি শিমুল হোসেন, কাস্টমস স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান ও ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সেক্রেটারি আজিম উদ্দীন গাজী প্রমুখ।
ভারতের পক্ষে ছিলেন, পেট্রাপোল কাস্টমসের রফতানি বিভাগের পরিচালক রাজস্ব কর্মকর্তা মিস্টার মিশ্র, পেট্রাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চন্দ্র, বঁনগা গুডস ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি অরুণ সাহা প্রমুখ।
জানা যায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের প্রথম থেকে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। দেশে স্থলপথে যে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য হয় তার ৬০ শতাংশ হয়ে থাকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। প্রতিবছর এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি এবং রফতানি হয় প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার পণ্য। আমদানি পণ্য থেকে সরকারের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আসে। তবে সুষ্ঠুভাবে বাণিজ্য পরিচালনার স্বার্থে বেনাপোল বন্দরে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকায় এ পথে বাণিজ্যে আগ্রহ হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। পেট্রাপোল বন্দরেও রয়েছে নানা অভিযোগ। ফলে আমদানি কমে যাওয়ায় গত ৫ বছর ধরে এ পথে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আসছে না। এতে যেমন সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব তেমনি ব্যবসায়ীরাও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বন্দর সূত্রে আরো জানা যায়, গত তিন বছর আগে ভারত-বাংলাদেশ-নেপাল-ভুটান (বিবিআইএন) চার দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি শেষে পরীক্ষামূলক একটি চালান এ পথে আমদানি হলেও কেবল অবকাঠামোগত উন্নয়ন সমস্যার কারণে এ পথে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু হচ্ছে না। চলতি অর্থ বছরে (২০২০-২১) বেনাপোল বন্দর থেকে সরকারের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ২৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এ বছরের গত ৫ মাসে জুলায় থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মাত্র আদায় হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৫০৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
এ পথে ভারতীয় আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে শিল্পকারখানার কাঁচামাল, তৈরি পোশাক, মেশিনারিজ, গার্মেন্টস, কেমিক্যাল পণ্য, কাগজ, মাছ ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য। বাংলাদেশি রফতানি পণ্যের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য পাট ও পাটজাত পণ্য, তৈরি পোশাক, কাচা লোহা, বসুন্ধারা টিস্যু, মেলামাইন, রাইস ডাস্ট, মেহগনী ফল, মশারী, টুকরা কাপড় (ঝুট) ও মাছ রয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এমএন