দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প গোষ্ঠি বেক্সিমকো শিল্প প্রতিষ্ঠান ঘিরে উদ্ভূত কোনো পরিস্থিতির দায় এই প্রতিষ্ঠানটিকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, “বেক্সিমকোর শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের তিন মাসের টাকার অতিরিক্ত আর কোনও আর্থিক সহায়তা দেবে না সরকার। বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারলে তা বন্ধ করবে কি-না, সে বিষয়ে বেক্সিমকোকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্যথায় উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় বেক্সিমকোকেই নিতে হবে।”
বন্ধ করা হলে শ্রম আইন অনুসারে শ্রমিক-কর্মচারিদের পাওনা হিসাব করে মালিকপক্ষ ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের আলোচনার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার উপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেছেন।
বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায়িক পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ৩য় সভায় তিনি এ কথা জানিয়েছেন।
অর্থ বিভাগের নির্দেশে এরমধ্যে জনতা ব্যাংক বেক্সিমকো শিল্প পার্কে অবস্থিত এই গ্রুপের শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারিদের তিন মাসের বেতন ভাতা বাবদ ১৮০ কোটি টাকা ছাড় করেছে। এই শিল্প গোষ্ঠির কর্ণধার সালমান ফজলুর (এফ) রহমান বর্তমানে হাজতে রয়েছেন। তিনি বিগত সরকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির এই সভায় অর্থ উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, কৃষি উপদেষ্টা, শিল্প উপদেষ্টা , গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা, বাণিজ্য উপদেষ্টা এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন ।
জানা গেছে, সভার শুরুতেই বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে কর্মরতদের বেতন-ভাতাদি পরিশোধের বিষয়ে আলোচনা করা হয়। জনতা ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সভাকে অবহিত করেন যে, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকদের ৩ মাসের বকেয়া বেতনের টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া ২ মাসের বেতনের টাকা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। তা ছাড়ও করা হয়েছে।
সরকার এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের তিন মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের পর যেহেতু আর কোনও আর্থিক সহযোগিতা করতে পারবে না সেহেতু বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষের কোম্পানিসমূহের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় সে সম্পর্কে সভায় অন্যান্য সদস্যদের মতামত আহ্বান করা হয়। এছাড়া শ্রমিক-কর্মচারিদের ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত করার জন্য সভাপতি কর্তৃক মালিকপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
তবে কোনোভাবেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং এ পরিস্থিতির নেতিবাচক প্রভাব যেন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উপর না পড়ে সে বিষয়ে সশস্ত্র বাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে বলে সভায় অভিমত ব্যক্ত করা হয়।
বলা হয়, প্রয়োজনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা যেতে পারে। শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে।
সভায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী জানান যে, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কোম্পানিগুলোতে অর্ডার না থাকায় এবং কোম্পানি ঋণখেলাপি থাকার কারণে আর পরিচালনা করা সম্ভব না। এমতাবস্থায়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষের কোম্পানিসমূহ লে-অফ/বন্ধ ঘোষণা করা প্রয়োজন।
এ ছাড়া তিনি জানান যে, বেক্সিমকো টেক্সটাইল লি. টেক্সটাইল ও গার্মেন্টসের ১৬টি ফ্যাক্টরিতে কর্মরত সব কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শ্রমিকদের বর্তমানে কারখানায় কোন কাজ না থাকার কারণে ১৬ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী লে-অফ থাকবে। যা এরমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং এ পরিস্থিতির নেতিবাচক প্রভাব যেন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উপর না পড়ে সে বিষয়ে সশস্ত্র বাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসমূহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। প্রয়োজনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে। শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে কোনরূপ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে।
জানা গেছে, ২০২৪ সালে ব্যাংক থেকে প্রচুর পরিমানে ঋণ নেয় বেক্সিমকো গ্রুপ। ২০২১ সালে জনতা ব্যাংকে বেক্সিমকোর ঋণ ছিল ১৪ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৪৮২ কোটি টাকায়।
এই ঋণের বেশিরভাগই খেলাপি। এখন আবার নতুন করে শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার জন্য জনতা ব্যাংক থেকে ঋণ করছে গ্রুপটি। অথচ হাজার কোটি টাকার বেশি রপ্তানি আয় দেশে ফেরত আনছে না বেক্সিমকো।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ