নদীর দুই তীরে রাস্তার পাশে অস্থায়ী অসংখ্য দোকান। প্রতিটি দোকানেই বাহারি জাতের ফল, পান-সুপারি, শাক-সবজির পসরা সাজানো। এ চিত্র রাজধানীর সদরঘাটের বুড়িগঙ্গা নদীর দুই তীরের। এছাড়া অবৈধ ইঞ্জিনচালিত নৌকায় বুড়িগঙ্গা নদী পারাপার ও নৌকা দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে লঞ্চে যাত্রী তোলার মাধ্যমে টাকা আদায় করা হচ্ছে।
এভাবে বুড়িগঙ্গা তীরের রাস্তা দখল করে নিয়মিত ব্যবসা পরিচালনা করছেন বিআইডব্লিউটিএর কিছু কর্মকর্তা। এ কারণে পথচারী এবং যানবাহন চলাচলে ব্যাপক ভোগান্তি হচ্ছে এবং নৌ-পারাপারে মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তা ও নৌ পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে ইঞ্জিনচালিত নৌকাগুলো থেকে প্রতিদিন ৩০০ করে টাকা তুলেন নূর হোসেন, বেগুন আলী ও ফারুক নামে তিন ব্যক্তি। শ্রমিকলীগ নেতা হিসাবে তারা পরিচিত এবং বুড়িগঙ্গার মাফিয়া হিসাবে খ্যাতি রয়েছে তাদের।
বুড়িগঙ্গার দুই তীরে ভাসমান দোকানিদের প্রত্যেকেই বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের টাকা দেওয়ার কারণে দোকানের জায়গা বৈধ বলে মনে করেন। যে বৈধতার অনুমোদন দেন বিআইডব্লিউটিএ নদীবন্দর সদরঘাটের সমন্বয় কর্মকর্তা মনির। যার নেতৃত্বে দীর্ঘ ১২ বছর চাঁদাবাজি কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। মাসখানেক আগে তার অপকর্ম প্রকাশ হলে তিনি বদলি হয়ে নতুন দায়িত্ব নেন ফরিদ।
আস্থাভাজন ফরিদ রয়ে গেছেন মনিরের প্রতিনিধি হিসাবে। অভিযোগ আছে মনিরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে আগের নিয়মেই টাকা তুলছেন ফরিদ। তিন ব্যক্তি নদীর দুই তীরের দোকানগুলো থেকে দৈনিক এবং সাপ্তাহিক ভিত্তিতে চাঁদা তুলেন বলে জানান ভাসমান দোকানিরা। তারা হলেন- লাঠি মনির, ডাকোয়া এবং পোর্টার সুমন।
কেরানীগঞ্জে বুড়িগঙ্গার তীরে আছে ৮০টির মতো দোকান এবং সদরঘাটের দিকে শ্যামবাজার থেকে শুরু করে চাঁদপুর ঘাট পর্যন্ত ৩০০টির মতো দোকান রয়েছে। প্রতিটি দোকান থেকে ন্যূনতম ৫০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত দৈনিক চাঁদা তোলা হয়।
শুধু তাই নয়, ঢাকা নৌ বন্দরের ৪৭টা খেয়াঘাটের ইজারা কার্যক্রমও নিয়ন্ত্রণ করে চক্রটি। প্রতিটি ঘাট থেকে মাসিক চার্জের নামে ৫০০০ টাকা করে প্রায় আড়াই লাখ টাকা চাঁদা আদায় করার প্রতিবেদনও রয়েছে মনিরের নামে।
এমনকি দুই তীরে বিভিন্ন কোম্পানিকে কিংবা ব্যক্তিকে মৌখিক চুক্তিতে স্পট অনুযায়ী মাসে ৩০, ৪০ ও ৫০ হাজার টাকা করে জমি ভাড়া দিয়েছে চক্রটি। সদরঘাটের একাধিক টং দোকানি জানান, বিআইডব্লিউটিএর লোকেরা প্রতি মাসে এক হাজার ২০০ টাকা আর ঘাট ইজারা মালিককে তিন হাজার টাকা দিতে হয়। না হলে দোকান ভেঙে ফেলে।
চাঁদপুর ঘাটে অস্থায়ী পান-সুপারির দোকানদার রনি বলেন, প্রতিদিনের টাকা প্রতিদিনই দিতে হয়। ফল বিক্রেতা মাইনুদ্দিন শিকদার বলেন, প্রতিদিন ২০০ টাকা করে দোকান ভাড়া দিতে হয়। পিঁয়াজ আড়তদার নাসির বলেন, সরকারি জায়গায় বসার জন্য প্রতিদিন ৩০০ টাকা করে জমা দিতে হয়।
সমন্বয়ক কর্মকর্তা ফরিদ বলেন, অতীতের সমন্বয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ ছিল। বর্তমানে তেমন চাঁদাবাজি নেই। তবে ছোটখাটো অবৈধ লেনদেন হয়। দীর্ঘদিনের রেওয়াজ চাইলেই একদিনে শেষ হয়ে যায় না। বর্তমানে চাঁদাবাজি অনেক কমে এসেছে।
সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহাগ রানা বলেন, নৌকা দিয়ে লঞ্চে যাত্রী উঠানো এবং ইঞ্জিনচালিত নৌকার বেপরোয়া চলাচলের ব্যাপারে আমি অবগত। কিন্তু লোকবল সংকটের কারণে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে পারি না।
সদরঘাট টার্মিনালের পোর্ট কর্মকর্তা গোলাম কবির বলেন, নৌ নিরাপত্তার বিষয়গুলো নৌ পুলিশের কাজ। তারা কার্যক্রম হাতে নিলে আমরা তাদের পাশে থাকব। প্রতিদিনই নদীপাড়ের দোকানে উচ্ছেদ অভিযান চালাই। একদিকে উচ্ছেদ করি, অন্যদিকে বসে পড়ে। সম্পূর্ণ ফুটপাত দখলমুক্ত করা প্রায় অসম্ভব।
বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা বলেন, বর্তমানে চাঁদা উত্তোলনের ব্যাপারে আমি অবগত নই। অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের চাঁদাবাজির সত্যতা পাওয়া গেলে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। অস্থায়ী দোকানগুলোর অবস্থান সম্পর্কে আমার জানা নেই। শিগগিরই সরেজমিন আমরা পরিদর্শন করব। দোকানগুলো নদী বন্দরের জায়গায় হলে উচ্ছেদ করব।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ