বাংলা৭১নিউজ, সিলেট প্রতিনিধি: সিলেটের বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় শ্রেণিকক্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন এক বহিরাগত।
নিহত ওই বগিরাগত খালেদ আহমদ লিটু (২৩) ছাত্রলীগের সমর্থক। পেশায় তিনি মোবাইল ব্যবসায়ী।
সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ছাত্রলীগের পাভেল ও পল্লব গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত লিটুকে নিজেদের সমর্থক দাবি করেছে পল্লব গ্রুপ। অন্যদিকে ঘটনার পর পাভেল গ্রুপের তিন কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
লিটুর পিতা ফয়জুর রহমান বলেন, লিটু আমার একমাত্র ছেলে। তার তো কোন দোষ ছিলনা। রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিলনা। তারপরও তাকে খুন করা হয়েছে।
তিনি জানান, লিটুর বন্ধুবান্ধব পাভেল গ্রুপ করতো। শুনেছি পাভেল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির গ্রুপের সমর্থক।
লিটুর মামাতো ভাই রুবেল আহমদ জানান, বিয়ানীবাজারের নোয়াগ্রাম রোডে এসএস মোবাইল শপ নামে লিটুর একটি দোকান ছিল।
তিনি বলেন, লিটু সরাসরি কোন রাজনীতি করতো না। তার সহপাঠীরা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে তাকে খুন করা হতে পারে।
প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্ররা বলেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কলেজের প্রধান ফটকে ছাত্রলীগের পাভেল গ্রুপের এক কর্মীর সঙ্গে পল্লব গ্রুপের এক কর্মীর হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে কলেজের প্রধান ফটকে দায়িত্বে থাকা পুলিশের পাঁচ সদস্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পরে দুপুর ১২টার দিকে ইংরেজি বিভাগের কক্ষে হঠাৎ গুলির শব্দ শোনা যায়।
এ সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা দ্রুত কক্ষটিতে গেলে সেখানে যুবকের রক্তাক্ত দেহ মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এ সময় কক্ষটিতে কেউ ছিল না।
দায়িত্বে থাকা পুলিশের এক সদস্য জানান, গুলির শব্দের পর পরই জিআই পাইপ হাতে তিন যুবককে দৌড়ে পালাতে দেখেছেন কলেজের শিক্ষার্থীরা।
বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ দ্বারকেশ চন্দ্রনাথ বলেন, নিহত লিটু কলেজের ছাত্র নয়। দুপুরের দিকে হঠাৎ গুলির শব্দ শোনা যায়। পরে গিয়ে দেখি রক্তাক্ত এক যুবক পড়ে আছে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেছেন।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর স্থানীয় ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপ পরস্পরকে দায়ী করছে।
এরমধ্যে জেলা ছাত্রলীগের আপ্যায়ণ বিষয়ক সম্পাদক পাভেল মাহমুদ নিহত লিটুকে তার গ্রুপের ছাত্রলীগ কর্মী দাবি করেন।
পাভেল বলেন, পল্লবের ক্যাডাররাই লিটুকে হত্যা করেছে। সকাল ১১টায় পল্লব গ্রুপের সঙ্গে তার বলয়ের নেতাকর্মীদের ঝগড়া হয়।
তিনি দাবি করেন, পল্লব গ্রুপের ছাত্রলীগ ক্যাডার শায়েদ অস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে মহড়া দেয়। পরে সিনিয়রদের নিয়ন্ত্রণে পরিস্থিতি শান্ত হয়। দুপুরের দিকে শুনতে পাই প্রতিপক্ষের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে লিটু মারা গেছে।
এদিকে অভিযোগের ব্যাপারে জানতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লবকে ফোন করলে তার ফোন দীর্ঘ সময় ধরে ব্যস্ত পাওয়া যায়।
পল্লবের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পরিচিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে পাভেল তার ‘ছোট ভাই’ বলে জানান তিনি।
জাকির বলেন, পাভেল আমার ছোট ভাই। সে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমি আওয়ামী লীগ করি।
লিটু হত্যার জন্য পাভেল গ্রুপের পরিবর্তে পল্লব গ্রুপকে দায়ী করেন এ আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি বলেন, শুনেছি পল্লব গ্রুপের সঙ্গে সংঘর্ষে লিটু নিহত হয়েছে।
বিয়ানীবাজার থানার ওসি চন্দন কুমার চক্রবর্তী জানান, লিটুকে হত্যার সময় কলেজ কক্ষে লিটুর পাশে থাকা তিনজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। শিগগির লিটুর হত্যাকারী চিহ্নিত ও রহস্য উদঘাটন হবে বলে জানান।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস